ভোরের গুলিযুদ্ধে কাশ্মীরে হত ৬ লস্কর জঙ্গি

দিন চারেক আগেই শোপিয়ানে সেনা-জঙ্গি গুলিযুদ্ধে মারা গিয়েছিল চার জঙ্গি। তখনই সেনাবাহিনী বুঝিয়ে দিয়েছিল, উপত্যকায় জঙ্গি দমনের তীব্রতা আরও বাড়বে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৫৪
Share:

সেনাবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত জঙ্গি আজাদ আহমেদ মালিককে ঘিরে তাঁর পরিবার। শুক্রবার কাশ্মীরের অনন্তনাগে। ছবি: রয়টার্স।

শোপিয়ানের পরে অনন্তনাগের বিজবেহরা। জঙ্গি দমনে ফের সাফল্য মিলল কাশ্মীরে। শুক্রবার ভোরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলিযুদ্ধে মৃত্যু হল সাংবাদিক সুজাত বুখারি খুনের অন্যতম পান্ডা, লস্কর জঙ্গি আজাদ আহমেদ মালিকের। নিহত হয়েছে মালিকের সঙ্গী আরও পাঁচ লস্কর জঙ্গি।

Advertisement

দিন চারেক আগেই শোপিয়ানে সেনা-জঙ্গি গুলিযুদ্ধে মারা গিয়েছিল চার জঙ্গি। তখনই সেনাবাহিনী বুঝিয়ে দিয়েছিল, উপত্যকায় জঙ্গি দমনের তীব্রতা আরও বাড়বে। এ বছর ১৪ জুন শ্রীনগরে তিন বন্দুকবাজের গুলিতে খুন হন ‘রাইজিং কাশ্মীর’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক সুজাত বুখারি। বৃহস্পতিবার পুলিশের কাছে খবর আসে, বুখারি খুনের অন্যতম চক্রী মালিক-সহ একাধিক লস্কর জঙ্গি লুকিয়ে আছে বিজবেহরার জঙ্গলঘেরা সালগুন্দ-সুতকিপোরা এলাকায় একটি গোপন ঘাঁটিতে। তার পরেই কাল রাতে এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ এবং সিআরপি। বন্ধ করে দেওয়া হয় অনন্তনাগের ইন্টারনেট পরিষেবাও। ভোর থেকে শুরু হয় দু’পক্ষের গুলিযুদ্ধ। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র। পুলিশ জানিয়েছে, মালিক-সহ নিহত ৬ জঙ্গির বাড়ি অনন্তপুর এবং সংলগ্ন এলাকায়।

বাহিনীর হাতে ৬ লস্কর জঙ্গির মৃত্যুর খবর জানাতে গিয়ে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘চলতি বছরে সবচেয়ে সফল অভিযানগুলির মধ্যে এটি একটি।’’ সেনার তরফে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে উত্তর কাশ্মীরের তুলনায় দক্ষিণ কাশ্মীরে আত্মগোপন করে থাকা জঙ্গির সংখ্যা বেশি। এদের বিরুদ্ধে অভিযান তীব্র করা হবে।

Advertisement

জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা ভাঙার পরে জঙ্গি দমন অভিযানের তীব্রতা বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে কেন্দ্রও। উপত্যকায় ইতিমধ্যেই বরফ পড়া শুরু হয়ে গিয়েছে। অতীতে শীতের সময়ে জঙ্গি তৎপরতা বন্ধ থাকলেও গত দু’বছর ধরে শীতের মরসুমেও সীমান্তে সক্রিয় থেকেছে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। সেই কারণে এ বারও প্রবল বরফপাত সত্ত্বেও সীমান্তে ২৪ ঘণ্টা নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। একই সঙ্গে ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ কাশ্মীর জুড়ে বড় মাপের অভিযানে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেনা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্র বলছে, এর আগে অভিযানের তীব্রতা কমায় অনন্তনাগ, বারামুলা, ত্রালের মতো এলাকায় বড় সংখ্যক জঙ্গি জড়ো হয়েছে বলে খবর মিলেছে। নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ওই এলাকাগুলিতে অভিযান চালানো হবে।

পাঁচ মাস আগে পিডিপি–বিজেপি জোট ভেঙে যাওয়ার পরেই দ্রুত বিধানসভা ভেঙে দিয়ে ভোটে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রের তরফে মধ্যস্থতাকারী দীনেশ্বর শর্মা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করছে, দেরিতে হলেও ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত এক দিকে ভাল। এতে এক দিকে যেমন সেনা নিজের মতো করে জঙ্গি দমনে নামতে পারবে, তেমনই ভোটের কারণে রাজনৈতিক জমি ধরে রাখতে প্রচারে নামতেই হবে বিভিন্ন দলকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘সেনা অভিযানের পাশাপাশি শান্তি ফেরাতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। নির্বাচন ঘোষণা হলেই রাজনৈতিক দলগুলি পথে নামতে বাধ্য হবে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের মত বিনিময় শুরু হবে। এতে প্রশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ অনেকটাই কমবে।’’

কেন্দ্র মনে করছে, রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি উপত্যকার সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরানো সবচেয়ে জরুরি। কারণ, পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে ভাবে মাত্র ৪ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে এসেছিলেন, তা যথেষ্ট উদ্বেগের।

উপত্যকায় রাজনৈতিক উত্তাপ অবশ্য কমার লক্ষণ নেই। বিজেপির সঙ্গে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠতা’ নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের জবাব দিতে আজ মুখ খোলেন প্রাক্তন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সাজ্জাদ লোন। বিজেপি ও পিডিপির কিছু বিধায়ক ভাঙিয়ে গত পরশু মেহবুবা মুফতির ধাঁচেই রাজ্যে সরকার গড়ার দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। লোনের বিজেপি-সংস্রব নিয়ে প্রশ্ন তোলে পিডিপি ও ওমরের দল। লোন আজ বলেন, ‘‘বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়া কোনও অপরাধ নয়। অতীতে প্রথম ওই রাস্তা দেখিয়েছিলেন খোদ ওমর। আর পিডিপি নেত্রী মেহবুবা এই ক’দিন আগেও বিজেপির সঙ্গে জোট করে তিন বছর মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন