সাত দফা ভোটে এক সঙ্গে ১৪ সভা করবেন রাহুল ও অখিলেশ

উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদবের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অন্তত ১৪টি জনসভা করার সিদ্ধান্ত নিলেন রাহুল গাঁধী। রবিবার জোট ঘোষণা হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই যৌথ প্রচারের রূপরেখা তৈরিতে নেমে পড়ল দু’দল। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, সাত দফা ভোটে, প্রতিটি পর্বে গড়ে দু’টি করে জনসভা করবেন রাহুল-অখিলেশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১০
Share:

চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আজম খানের সঙ্গে আলোচনায় অখিলেশ। ছবি: পিটিআই।

উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদবের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অন্তত ১৪টি জনসভা করার সিদ্ধান্ত নিলেন রাহুল গাঁধী। রবিবার জোট ঘোষণা হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই যৌথ প্রচারের রূপরেখা তৈরিতে নেমে পড়ল দু’দল। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, সাত দফা ভোটে, প্রতিটি পর্বে গড়ে দু’টি করে জনসভা করবেন রাহুল-অখিলেশ।

Advertisement

এরই মধ্যে আজ এক দফা প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে সমাজবাদী পার্টি। অখিলেশ বিরোধী শিবিরে থাকা কাকা শিবপাল প্রথম প্রার্থী তালিকায় জায়গা পেয়েছিলেন। আজকের তালিকায় তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জায়গা পেলেন মুলায়মের ছোট পুত্রবধূ অপর্ণা যাদব। তাঁকে বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী লখনউ ক্যান্টনমেন্ট আসন থেকেই প্রার্থী করেছেন অখিলেশ। ওই কেন্দ্রে অপর্ণার প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী রীতা বহুগুণা জোশী।

দলে অখিলেশের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বিরোধী শিবিরের
অপর্ণা টিকিট পাবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। আজ সেই জল্পনায় জল ঢেলে এক ঢিলে একাধিক পাখি মেরেছেন অখিলেশ। এক দিকে মুলায়মকে বার্তা দিয়েছেন, ছেলে হিসেবে বাবার ইচ্ছাকে মর্যাদা দিচ্ছেন তিনি। অন্য দিকে বিজেপি অপর্ণাকে টিকিট দিয়ে পরিবারের মধ্যে ভাঙন ধরানোর জন্য তলে তলে যে চেষ্টা করেছিল, তাতেও জল ঢেলেছেন। অখিলেশ-শিবিরের বক্তব্য, শিবপাল, অর্পণার মতো হেভিওয়েটরা ভোটের বাজারে বিরোধিতায় নামতে পারেন, এমন আশঙ্কা ছিল অখিলেশের। তাঁদের টিকিট দিয়ে সেই সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনাশ করেছেন তিনি। তাই নাম ঘোষণার পরেই অপর্ণা-শিবপালেরা নেমে পড়েছেন প্রচারে। সপা শিবির বলছে, এমনটাই চেয়েছিলেন অখিলেশ।

Advertisement

আগামিকাল থেকে নিজেও পুরোদমে প্রচারে নামবেন অখিলেশ। প্রথমে বাবা-ছেলে দ্বন্দ্ব, তার পরে জোট সঙ্কট— সপা-র নির্বাচনী প্রচার অভিযান কার্যত থমকে গিয়েছিল। তাই দেরি না করে কাল থেকেই প্রচারে ঝাঁপাচ্ছেন অখিলেশ। পাশাপাশি কংগ্রেস ও সপা পরবর্তী ধাপে কী ভাবে এগোবে, তা ঠিক করতেও আজ আলোচনায় বসে উভয় শিবির। প্রাথমিক ভাবে যৌথ জনসভার বিষয়টি চূড়ান্ত করার পাশাপাশি ঠিক হয়েছে, প্রচারে নামবেন প্রিয়ঙ্কা এবং সনিয়া গাঁধীও।

কংগ্রেসের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশের জোট জটিলতাকে কাজে লাগিয়ে রাহুল ও প্রিয়ঙ্কার মধ্যে বিভাজন ঘটাতে সক্রিয় হয়েছে বিজেপি। জোট হওয়ার পিছনে প্রিয়ঙ্কার ভূমিকা নিয়ে সনিয়া-ঘনিষ্ঠ আহমেদ পটেলের টুইটকে তুলে ধরে রাহুলের গুরুত্বকে খর্ব করতে মাঠে নেমেছিল তারা। গত কাল টুইটে আহমেদ পটেল লিখেছিলেন, ‘‘এটা বলা ভুল যে, কংগ্রেসের তরফে কম গুরুত্বপূর্ণ নেতারা আলোচনা চালাচ্ছিলেন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর মতো সর্বোচ্চ স্তরে আলোচনা হচ্ছিল।’’ বিজেপি এটা নিয়ে অন্য ভাবে খেলতে পারে বুঝেই আজ পাল্টা প্রচারে নেমে কংগ্রেস জানায়, দলকে জেতানোর প্রশ্নে প্রিয়ঙ্কাও সক্রিয় থাকবেন। কিন্তু তাঁর প্রধান ভূমিকা হবে রাহুলকে পিছন থেকে সাহায্য করা। যদিও কংগ্রেসের অন্দরেই অনেকে বলছেন, প্রিয়ঙ্কা সত্যিই সক্রিয় না হলে কি ১০ জনপথ ঘনিষ্ঠ আহমেদ পটেল ওই ধরনের কথা টুইটারে লিখতে পারেন?

অখিলেশ-মুলায়ম সংঘাত এবং জোট নিয়ে জট— পরপর দু’টো আশা ভেস্তে গিয়েছে বিজেপির। তাই প্রচারের কৌশল বদলাতে বাধ্য হচ্ছে তারা। বদলেছে তাদের নিশানাও। এত দিন মূল নিশানায় ছিলেন অখিলেশ। এ বার নাম উঠেছে রাহুল গাঁধীরও। যদিও বিজেপির বড় উদ্বেগ অখিলেশই। দলের বক্তব্য, বাবা-ছেলের দ্বন্দ্বে শেষ পর্যন্ত নিজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন অখিলেশ। নীতির প্রশ্নে, স্বচ্ছ প্রশাসনের লক্ষ্যে যে তরুণ মুখ্যমন্ত্রী ওই বিদ্রোহ করেছিলেন, এটা রাজ্যের মানুষের মনে গেঁথে দিতে পেরেছেন তিনি। তাই বিজেপির রাজ্য সভাপতি কেশব চন্দ্র মৌর্য যতই অখিলেশকে দেশের নিকৃষ্ট মুখ্যমন্ত্রীর তকমা দিন, বিজেপি নেতারা বুঝতে পারছেন, পাঁচ বছরে অখিলেশের বিরুদ্ধে যে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার হাওয়া তৈরি হচ্ছিল, তার অভিমুখ পাল্টে গিয়েছে। উল্টে তির ঘুরেছে বিজেপির দিকেই। নিচুতলার বিজেপি কর্মীদের মতে, আমজনতা এখনও বাবা-ছেলের ঝগড়া নিয়ে বেশি আলোচনা করছে। ফলে অনুন্নয়ন, অপশাসন বা সপা গুণ্ডাবাহিনীর তাণ্ডবের মতো বিষয়গুলি পিছনে চলে গিয়েছে।

স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নিয়ে ভোটের ময়দানে অখিলেশের এই আচমকা উত্থানে চিন্তিত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। তাই দলের সভাপতি অমিত শাহ রাজ্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অখিলেশ-বিরোধী হাওয়াকে ফের খুঁচিয়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশ, সপা সরকারের দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, অনুন্নয়নের মতো বিষয়গুলিকেই প্রচারের তুলে ধরতে হবে। বোঝাতে হবে, বাবা-ছেলের এই সংঘাত মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা। যাদব পরিবারের আসল লক্ষ্য, ক্ষমতা আঁকড়ে থেকে বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদীকে আটকানো। যে প্রচেষ্টায় তাদের সঙ্গে সামিল হয়েছে কংগ্রেসের মতো দলগুলো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন