Camels

রাজস্থানের থর মরুভূমি থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসার পথে উধাও উটের পাল! সরগরম বারাণসী

এ বার সামনে এল উট পাচারের অভিযোগ। রাজস্থানের থর মরুভূমি থেকে পশ্চিমবঙ্গের পথে নিয়ে আসার পথে উধাও উটের পাল!

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২২ ০৬:৪৭
Share:

উধাও উটের পাল! প্রতীকী ছবি।

গরু পাচার নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে শোরগোল অব্যাহত। এ বার সামনে এল উট পাচারের অভিযোগ। রাজস্থানের থর মরুভূমি থেকে পশ্চিমবঙ্গের পথে নিয়ে আসার পথে উধাও উটের পাল!

Advertisement

১৬টি উট ছিল সেখানে। ২৭ জুন বারাণসীতে একটি ট্রাকে দেখা গিয়েছিল উটগুলিকে। অভিযোগ, উটগুলির মুখ দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। শুইয়ে রাখা হয়েছিল উটগুলিকে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ যখন উটগুলিকে উদ্ধার করে, সেই সময়ে অন্তত দু’টি উটের মৃত্যু হয়েছে। তবে উটের পাল উদ্ধারের পরেও কী ভাবে সেগুলি উধাও হল সেই নিয়েই চর্চায় সরগরম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসী।

এ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক টালবাহানা এমনকি আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্যের অভিযোগও উঠেছে। এই ভাবে দিনের পর দিন কেটেছে। আর তার ফাঁকেই বেমালুম উধাও উটের দল! বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ সরকার যেখানে গো-হত্যার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেওয়ার বার্তা দেয়, সেখানে পাচার হওয়া উটগুলিকে ‘ঘরে’ ফেরানোর ক্ষেত্রে সদিচ্ছা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

Advertisement

তিন মাস ধরে জীবন্ত উটগুলিকে রাজস্থানে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হলেও সব ক’টির খোঁজ মিলছে না বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে আদালত, পুলিশের দরজা ঘুরেও সুফল মেলেনি বলে জানিয়েছে একটি পশু অধিকাররক্ষা সংস্থা।

এখনও পর্যন্ত দু’টি উটের মৃত্যু হয়েছে এবং দু’টিকে কাটেসর গ্রামে দেখা গিয়েছে। বাকি ১২টি উটের জিয়ো ট্যাগিং থাকলেও উধাও সেগুলি। গত তিন সপ্তাহে উটের দেখা মেলেনি।

বারাণসীর এক পশু অধিকাররক্ষা কর্মী স্বাতী বেল্লানির আশঙ্কা, উটগুলিকে পাচার করা হয়েছে। কিংবা সেগুলির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, যদি উটগুলি সুরক্ষিত থাকে, সে ক্ষেত্রে দায়রা আদালত দু’পাতার রায় শোনাতে এত সময় নিচ্ছে কেন?

প্রসঙ্গত দায়রা আদালতে কয়েক মাস ধরে মামলা চলছে এই নিয়ে। একের পর এক শুনানি হয়েছে। বারাণসীর জেলাশাসক কৌশল রাজ শর্মার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগও উঠেছে। কিন্তু উটগুলিকে সুরক্ষিত ভাবে রাজস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। জেলাশাসক জানিয়েছেন, প্রশাসনের কাছে অর্থ নেই। ইতিমধ্যেই গৌ জ্ঞান ফাউন্ডেশন জেলাশাসক ও প্রশাসনের একাংশের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ জুলাই জেলাশাসককে কারণ দর্শানোর নোটিসও পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে জেলাশাসকও একটি মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলার রায় স্থগিত রাখা হয়েছে। গৌ জ্ঞান ফাউন্ডেশন ইলাহাবাদ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে দ্রুত মামলার জট ছাড়ানোর আবেদন জানায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মামলার ফয়সালার নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। কিন্তু অক্টোবরেও ফয়সালা হয়নি মামলার।

পুলিশের দাবি, উটগুলি নিরাপদে রয়েছে। কিন্তু সেগুলি দেখতে দিতে নারাজ। পুলিশি তদন্তে দেখা গিয়েছে, বাগপত থেকে উটগুলি চুরি করে পশ্চিমবঙ্গের দিকে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজস্থান থেকে উত্তরপ্রদেশে কী ভাবে এতগুলো উট এসে পড়ল তার কোনও হদিস মেলেনি। উট পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক জন পলাতক।

বারাণসীর এক পশু অধিকাররক্ষা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এক মহিলা প্রথম পুলিশকে উট পাচারের খবর দেন। তার পরেই পুলিশ উটগুলিকে উদ্ধার করে। এর পরেই শুরু হয় ‘নাটক’। উটগুলিকে কোথায় রাখা হবে, সেই নিয়ে একপ্রস্ত টালবাহানা শুরু হয় প্রশাসনের অন্দরে। গরু রাখার জায়গা আছে বটে, কিন্তু তা বলে উট! এর পরেই রামনগরে ২৫০০ বর্গফুটের এক বাড়িতে উটগুলিকে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও এই জায়গা উটগুলিকে রাখার পক্ষে উপযুক্ত ছিল না। তার জেরেই উটগুলি হিংস্র হয়ে ওঠে বলে দাবি স্থানীয়দের। একটি উটের মৃত্যুও হয়।

এর পরে অঙ্কুর শর্মা নামে এক ব্যক্তির হেফাজতে উটগুলিকে রাখা ও রাজস্থানে ফেরানোর বিষয়টি তত্ত্বাবধানের নির্দেশ দেন অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। তদন্তকারী অফিসার বিশ্বনাথ সোনকরকে নির্দেশ দেন রাজস্থানের সিরোহীতে পাঠানোর। গোটা ব্যবস্থাপনা দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলাশাসককে। কিন্তু সেই বিষয়টি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর রামনগরের এসএইচও জানান, তদন্তকারী অফিসারকে মামলাটি ভাল ভাবে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরের দিনই জানান, আদালতের নির্দেশ ছাড়া এ বিষয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র আশ্বাস দেন, উটগুলি সুরক্ষিত এবং নিরাপদে রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন