প্রতীকী ছবি।
নিজের নাম-মাহাত্ম্য জানতে বাংলা ভাষার দ্বারস্থ ২৬ বছরের তেলুগু যুবক কে শরৎচন্দ্র রাও। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবদাস পড়েই বাবা যে তাঁর নাম শরৎচন্দ্র রেখেছেন, সে কথা তো বাবা কবেই বলেছিলেন! কিন্তু শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে জানতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছেন বারবার। বাবা কে নরসিংহ রাওয়ের মতো তিনিও দেবদাস-সহ শরৎচন্দ্রের বিভিন্ন উপন্যাসের তেলুগু ও ইংরাজি অনুবাদ পড়েছেন। কিন্তু বার বার মনে হয়েছে, মৌলিক রচনাটা যদি একবার পড়া যেত! কিন্তু বাংলা তো তিনি জানেন না।
পেশায় চিকিৎসক শরৎচন্দ্র রাও রেলের চাকুরে। গত জুলাইয়ে বাঙালিপ্রধান শিলচর রেল হাসপাতালে বদলি হয়ে এসেছেন তিনি। কাজে যোগ দিয়েই বাংলা শেখার শপথ নেন। বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন এ বারই বাংলার ডিপ্লোমা কোর্স চালু করেছে। কিন্তু মুশকিল হল, তাঁদের দূরশিক্ষা পাঠক্রমে অ-আ-ক-খ শেখানো হয় না। বাংলার প্রাথমিক জ্ঞানের পরীক্ষা নিয়েই এই পাঠক্রমে ভর্তি করা হয়।
তাতে পিছিয়ে যাননি যুবক শরৎচন্দ্র। হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট, গার্ডদের কাছ থেকে অ-আ-ক-খ শিখেছেন। নিজের নাম-ঠিকানাও এখন বাংলায় লিখতে পারেন। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়ে গিয়েছেন তেলুগু যুবক। আগামী ২২ অক্টোবর থেকে প্রতি রবিবার ক্লাস। তাঁর আগ্রহ দেখে হাসপাতাল কর্মীরাও তাঁকে বাংলা শেখাতে উঠেপড়ে লেগেছেন। বাংলাতেই কথা বলেন তাঁর সঙ্গে। সঙ্গে হিন্দি তর্জমা।
কে শরৎচন্দ্র রাওয়ের কথায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে জানতে গিয়ে অন্য লাভ হয়েছে। রোগীদের সমস্যা ঠিকঠাক বোঝার জন্যও এখানে বাংলা জানা জরুরি। এখন তাঁদের কিছু কথা বুঝতেও পারি। তাতে চিকিৎসার সুবিধে হয়। রোগীরাও নিজেদের সমস্যা বলতে পারেন। কিন্তু শিলচর থেকে বদলি হয়ে গেলে এই পরিশ্রম কি কোন কাজে আসবে? ডাক্তারবাবুর জবাব, ভাষাশিক্ষা কখনও বৃথা যায় না। বাংলা শিখে শরৎচন্দ্র পড়ব, রবীন্দ্রনাথ পড়ব। এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে!