জয় আমাদেরই, দাবি দুই পক্ষের

আধারের সাংবিধানিকতা বৈধ প্রমাণ হওয়ায় কংগ্রেস অখুশি নয়। বরং সুপ্রিম কোর্টে যে যে শর্ত বেঁধে দিয়েছে, তাতে মোদী জমানার আধার-ভাবনার ডানা ছাঁটা পড়েছে বলে তাদের মত

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও মিলান শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:২৫
Share:

আধারে জয় কার?

Advertisement

রায় বেরোতে টুইট করলেন রাহুল গাঁধী, ‘‘কংগ্রেসের কাছে আধার ছিল ক্ষমতায়নের মাধ্যম। বিজেপির কাছে দমন ও নজরদারির হাতিয়ার। কংগ্রেসের ভাবনাকে সমর্থনের জন্য সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ।’’

জয়পুরে প্রচারের ফাঁকে টুইটেই পাল্টা কটাক্ষ করলেন অমিত শাহ, ‘‘বটেই তো, আজ কংগ্রেসের জয় হয়েছে। ঠিক যেমন ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে জয় হয়েছিল।’’

Advertisement

তার পরে বিজেপি সভাপতি ফের লিখলেন, ‘‘ইউপিএর আধার ছিল নিরাধার। মোদী সরকারই গরিবদের সুফল দিয়ে ৯০ হাজার কোটি টাকা বাঁচিয়েছে। দুর্নীতির জনক কংগ্রেস নানা ছলে আধারকে পরাজিত করতে চেয়ে নিজেরাই আজ পরাজিত।’’

আধার রায় নিয়ে এ ভাবেই দুই পক্ষের দাবি, জয় তাদের। গোড়া থেকেই আধারের মাধ্যমে ব্যক্তি পরিসরের হস্তক্ষেপের চেষ্টার বিরোধিতা করে আসছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ মিলানে তিনি বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট, মোবাইলের সিমে আধার সেঁধিয়ে গেলে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত ও আর্থিক নিরাপত্তা, গোপনীয়তা ইত্যাদি যে ব্যাহত হয়, তা গোড়া থেকেই বলেছি। আমি নিজে আজ পর্যন্ত (ব্যাঙ্ক, মোবাইলে) আধার সংযোগ করিনি। মনে করেছি, তাতে প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে আর্থিক এমনকি জীবনের নিরাপত্তা। শীর্ষ আদালতের এই রায় তাই সাধারণ মানুষের জয়। সারা দেশের জয়।’’

আধারের ভাবনা যেহেতু ইউপিএ আমলের, তাই আধারের সাংবিধানিকতা বৈধ প্রমাণ হওয়ায় কংগ্রেস অখুশি নয়। বরং সুপ্রিম কোর্টে যে যে শর্ত বেঁধে দিয়েছে, তাতে মোদী জমানার আধার-ভাবনার ডানা ছাঁটা পড়েছে বলে তাদের মত। যদিও আইন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ আজ বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টই বলেছে, আধারের মাধ্যমে কোনও নজরদারি হচ্ছে না। তা হলে হোমওয়ার্ক না করে রাহুল গাঁধী কেন ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন?’’ সরকারের যুক্তি খণ্ডন করতে নামেন কপিল সিব্বল। বলেন, ‘‘জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে কারও আধার সংখ্যা নেওয়ার অধিকার থাকবে না সরকারের হাতে। মোদী সরকার আধারকে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল। সেটিও খারিজ করেছে আদালত। সরকারকে এখন সুনিশ্চিত করতে হবে, যে তথ্য অনৈতিক ভাবে বেসরকারি হাতে গিয়েছে, সেগুলি কী করে বাতিল করা যাবে। আমজনতার স্বার্থে দরকার হলে ফের কোর্টে যাব।’’ অরুণ জেটলির জবাব, ‘‘সিব্বলের অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। সব তথ্য সুরক্ষিত রয়েছে। আজকের রায় ঐতিহাসিক। কংগ্রেস আধার এনেও জানত না, কী করতে হবে।’’

আধার পথ

• জানুয়ারি, ২০০৯: যোজনা কমিশনের বিজ্ঞপ্তি ইউআইডিএআই নিয়ে

• ২০১০-২০১১: ন্যাশনাল আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া বিল পেশ, এল ‘আধার’ ব্র্যান্ডনেম, ১২ অঙ্কের ইউনিক আইডেন্টিটি নম্বর

• নভেম্বর, ২০১২: আধারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কে এস পুট্টাস্বামীর

• মার্চ, ২০১৬: লোকসভায় পেশ হল আধার বিল। পাশ হল মানি বিল হিসেবে

• মে, ২০১৭: আধার বিলকে মানি বিল হিসেবে দেখার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেলেন জয়রাম রমেশ

• অগস্ট, ২০১৭: ব্যক্তিপরিসরের অধিকার মৌলিক অধিকার, জানাল সুপ্রিম কোর্টের ৯ সদস্যের বেঞ্চ

• জানুয়ারি, ২০১৮: আধার মামলার শুনানি শুরু সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে

• ৭ মার্চ, ২০১৮: সর্বভারতীয় পরীক্ষা দিতে গেলে আধার আবশ্যিক নয়, বলল শীর্ষ আদালত

• ১৩ মার্চ, ২০১৮: আধার সংযুক্তিকরণের মেয়াদ ছিল ৩১ মার্চ পর্যন্ত, পরবর্তী নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত মেয়াদ বাড়াল সুপ্রিম কোর্ট

• ১৭ এপ্রিল, ২০১৮: আধার-তথ্য অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ সুপ্রিম কোর্টের

• ২৫ এপ্রিল: মোবাইলের সঙ্গে আধার সংযুক্তি বাধ্যতামূলক কেন, কেন্দ্রকে প্রশ্ন শীর্ষ আদালতের

• ২৬ সেপ্টেম্বর: আধার প্রকল্প বৈধ, রায় সুপ্রিম কোর্টের

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন