১০ মে: নকল ভোটের মেশিনে কারচুপি করতে সাফল্য এসেছে। এ বার আসল ইভিএম হ্যাক করতে নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জ মেনে নিল আম আদমি পার্টি।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল জানিয়েছেন, কমিশনের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত দল। আগামী ১২ মে সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের পর ইভিএমে কারচুপি করার প্রতিযোগিতা ‘হ্যাকাথন’-এর দিন ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন আপ সদস্যরা। গত কাল দিল্লি বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে আইআইটি-র ছাত্রদের তৈরি করা নকল ইভিএম নিয়ে এসে কারচুপি করে দেখিয়েছিলেন আপ বিধায়ক সৌরভ ভরদ্বাজ। তাঁর দাবি, একই ভাবে আসল ইভিএমেও কারচুপি সম্ভব। এর পরেই নড়েচড়ে বসে নির্বাচন কমিশন। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় কমিশন জানায়, আপের দাবির পিছনে সত্যতা নেই। ইভিএমে কারচুপি অসম্ভব।
কেন ইভিএমে কারচুপি করা যায় না, তার পক্ষে যুক্তিও দিয়েছে কমিশন। তাদের মতে, বিদেশে ইভিএমগুলি কম্পিউটার-ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকে। ফলে সেগুলিতে হ্যাকিং-এর সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এ দেশের ইভিএমে কম্পিউটার-ইন্টারনেট যুক্ত করার প্রযুক্তি নেই। এগুলি নন-নেটওয়ার্কড। ফলে বাইরে থেকে কিছু করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া, ভারতের ইভিএমগুলিতে যে সফটওয়্যার-চিপ থাকে তা একবারই ব্যবহারযোগ্য। একবার ব্যবহারের পরে দ্বিতীয়বার প্রয়োগ করা যায় না। বিদেশ এই প্রযুক্তি ব্যবহার না হওয়ায় হ্যাকিং-এর সম্ভাবনা থাকে। কমিশনের দাবি, ভারতের ইভিএমগুলির এই বিশেষত্বের পাশাপাশি এগুলির কাজ নিয়েও নিয়মিত ভাবে নজরদারি চলতে থাকে। প্রতিটি যন্ত্র ঠিক ভাবে কাজ করছে কিনা, নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে তা খতিয়ে দেখা হয়।
কমিশনের সূত্র জানাচ্ছে, ইভিএম বানানোর সময় প্রযুক্তিগত সতর্কতা নেওয়া হয়। এর ব্যবহারের সময়েও একাধিক সুরক্ষাবিধি পালন করে কমিশন। নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের যুক্তি, কোন ভোট কেন্দ্রে কোন ইভিএম যাবে, তা ঠিক করে দেয় কম্পিউটার। কমিশনের কোনও কর্তার তাতে হাত থাকে না। দ্বিতীয়ত, ভোটের দু-তিন মাস আগে এবং চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সামনে দু’দফায় নকল ভোট করা হয়। দেখা হয়, ইভিএম ঠিক ভাবে কাজ করছে কিনা। তৃতীয়ত, বুথে পাঠানোর আগে ও ভোটের পরে ইভিএমগুলি সিল করে দেয় কমিশন। প্রতিটি ইভিএমের জন্য থাকে নির্দিষ্ট নম্বর। সেটি না জানলে কারও পক্ষে ওই ইভিএম খোলা অসম্ভব।
এত যুক্তির পরেও ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন উঠে আসছে। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে বিজেপির জয়ের পরে ইভিএমে কারচুপির অভিযোগে সরব হন মায়াবতী। একে একে ওই দাবিতে সুর চড়ায় কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল, আপ ও সপা-র মতো দলগুলি। এরই মধ্যে মধ্যপ্রদেশের ভিন্দে মক পোলিং-এর সময় বিজেপির ঘরে সব ভোট চলে যায়। তার পরে গত কাল নকল ইভিএমে কারচুপি করে দেখিয়েছে আপ। ফলে আসল ইভিএম নিয়ে চ্যালেঞ্জ জেতার জন্য এখন চাপ বাড়ছে নির্বাচন কমিশনের উপরে।