শিক্ষক, পঞ্চায়েত সদস্য এবং তিন সন্তানের মা— অপহরণ-কাণ্ডের তদন্তে এমনই তিন জনকে ধাওয়া করে এক স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করল মহানগর পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত কাল বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ গুয়াহাটির জয়নগর থেকে অপহৃত হয় এক চিকিৎসক দম্পতির মেয়ে, দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী আদিশ্রী দত্ত। আবাসনের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যায়, পরিচারিকা রুমি দাসের সঙ্গে লিফ্ট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে আদিশ্রী। রুমির মোবাইল ফোন ‘সুইচড্ অফ’ ছিল। তিনটি বিশেষ দল তৈরি করে আদিশ্রীর খোঁজ শুরু করে এসটিএফ ও গুয়াহাটি পুলিশ। মোবাইল টাওয়ার অনুসরণ করে জানা যায়, রুমি বরপেটা-নলবাড়ি এলাকায় রয়েছে। মুকালমুয়া, সর্থেবাড়ি ও বেলশর এলাকায় রওনা হয় পুলিশ। রাত ২টো নাগাদ সর্থেবাড়ির ছোট বামুনবাড়ি গ্রামে অনোয়ার হুসেনের বাড়িতে আদিশ্রীর হদিস মেলে। ধরা পড়ে রুমি। অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় দাগি অপরাধী আনোয়ার, বামুনবাড়ি পঞ্চায়েতের কংগ্রেস বোর্ড সদস্য দানেশ আলি, লসিমা হাই মাদ্রাসার শিক্ষক লোকমান আলি, রুমির প্রেমিক নির্মল কলিতা ও তার সঙ্গী টিঙ্কু আলিকে।
রুমিকে জেরা করে ও আদিশ্রীর কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, আইসক্রিম খাওয়ানো ও সরাইঘাট সেতু দেখানোর কথা বলে ওই মেয়েটিকে বাড়ি থেকে বের করে রুমি। একটি গাড়িতে তাকে তোলা হয়। পরে গাড়িতে ওঠে নির্মল। তারা আদিশ্রীকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায়। প্রথমে দানেশের বাড়িতে তাঁকে ডিম, বেগুন, ভাত খাওয়ানো হয়। রাতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আনোয়ারের বাড়িতে। পুলিশ জেনেছে, আদিশ্রীকে এনডিএফবি-র হাতে তুলে দিয়ে ১ কোটি টাকা মুক্তিপণ চাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল তারা। রুমিকে ২০ লক্ষ টাকার টোপও দেওয়া হয়েছিল। রুমি তিন সন্তানের মা হলেও স্বামীর সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই।
এ দিন ভোরে সকলকে গুয়াহাটির বশিষ্ঠ থানায় আনা হয়। আদিশ্রীকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। তার অবস্থা স্থিতিশীল। দ্রুত মেয়েকে উদ্ধার করে দেওয়া পুলিশের প্রশংসা করেন আদিশ্রীর বাবা-মা। পুলিশকে অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালও। এ দিনই গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরলেন মুকেশ অগ্রবাল। আইজি (আইনশৃঙ্খলা) হচ্ছেন তিনি। তাঁর স্থানাভিষিক্ত হলেন হীরেণ নাথ। তাঁরা দু’জনই জানান, শুধু তথ্য-প্রযুক্তিই নয়, ঘটনার তদন্তে পুলিশ আরও বেশ কিছু পন্থার সাহায্য নিয়েছিল। পুলিশের সব পদ্ধতি ও অনুমান মিলে যাওয়ায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা গিয়েছে।
বিদায়ী কমিশনার জানান, ৩ অগস্ট জিএনআরসি হাসপাতালের রেডিওলজিস্ট দিগন্ত দত্ত ও প্রতীক্ষা হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অমীনাক্ষী দত্তর বাড়িতে পরিচারিকার কাজ নিয়েছিল রুমি। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, রীতিমতো পরিকল্পনা করেই সে ওই পরিবারে কাজে ঢোকে। কারণ আগে সে এ রকম কাজ করেনি। যে গাড়িতে আদিশ্রীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তার চালকের খোঁজ চলছে। পুলিশ জানায়, অপহরণের পরেই মোবাইলের সিম বদলে ফেলেছিল রুমি। কিন্তু নতুন সিম থেকে পরিচিতদের ফোন করায় তার অবস্থান জানা যায়। নবনিযুক্ত কমিশনার হীরেণ নাথ জানান, গুয়াহাটিতে আইনশৃঙ্খলা শক্তিশালী করতে কড়া হাতে কাজ করবে পুলিশ। তিনি সব পরিবারকে অনুরোধ করেন, নতুন পরিচারক বা পরিচারিকা নিয়োগ করা হলে তাঁর পরিচয়পত্র, ঠিকানার শংসাপত্র অবশ্যই জমা রাখতে হবে। কপি জমা দেওয়া উচিত থানায়।