Rajya Sabha

Rajya Sabha: পাল্টা আক্রমণে আট মন্ত্রী

বিরোধীদের ঠেকাতে গত কাল রাজ্যসভায় উপস্থিত মার্শাল বা নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যে অনেকে বহিরাগত ছিলেন বলে আজ অভিযোগ করেন রাহুল গাঁধী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২১ ০৬:৩১
Share:

সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল এবং প্রহ্লাদ জোশী। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। নিজস্ব চিত্র

এক জন, দু’জন নন, একসঙ্গে আট জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আজ সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যসভায় হাঙ্গামায় জড়িত বিরোধী সাংসদদের কড়া শাস্তি দেওয়ার দাবি জানালেন। তাঁদের বক্তব্য, গত কাল রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার বেসরকারিকরণ বিল পাশের সময় যে নজিরবিহীন গন্ডগোল হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি রুখতে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু উচ্চ পর্যায়ের তদম্ত কমিটি গঠন করুন। সেই কমিটি যাতে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ করে, সেই দাবি জানিয়ে সরব হন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল, অনুরাগ ঠাকুরেরা। পীযূষের কথায়, ‘‘গত কাল যা হয়েছে, তা অতীতের সমস্ত ঘটনাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। তাই উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হোক।’’

Advertisement

বিরোধীদের ঠেকাতে গত কাল রাজ্যসভায় উপস্থিত মার্শাল বা নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যে অনেকে বহিরাগত ছিলেন বলে আজ অভিযোগ করেন রাহুল গাঁধী। সরকার ও রাজ্যসভার তদন্ত রিপোর্ট অবশ্য বহিরাগতের তত্ত্বকে খারিজ করে দিয়েছে। রাজ্যসভার সচিবালয় যে রিপোর্ট (সারণি ভিতরে) দিয়েছে, তাতে একাধিক বিরোধী সাংসদের বিরুদ্ধে বিমা বিল পাশের সময়ে ঝামেলা পাকানো, রাজ্যসভার এক মার্শালের গলা টিপে ধরা এবং এক মহিলা মার্শালকে নিগৃহীত করার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। গন্ডগোলের সূত্রে রিপোর্টে নাম এসেছে তৃণমূল কংগ্রেসের দোলা সেন, অর্পিতা ঘোষ এবং ডেরেক ও’ব্রায়েনের। সূত্রের মতে, আজ সরকারের তরফে বেঙ্কাইয়ার কাছে অভিযুক্তদের রাজ্যসভার মেয়াদের বাকি সময় সাসপেন্ড করার সওয়াল করা হয়েছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে জনগণের থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। সরকারকে মনে রাখতে হবে যে বিরোধী দলগুলির পিছনে জনসমর্থন কম নয়।’’

সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা আজ পথে নামায় ফের অস্বস্তিতে পড়ে নরেন্দ্র মোদী সরকার। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘সরকার বেকায়দায় পড়ে যাচ্ছিল। তাই পাল্টা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয় দল।’’ ঠিক হয়, বিরোধীরা রাজ্যসভায় গতকাল ও সোমবার যে ‘তাণ্ডব’ চালিয়েছিলেন, সেই ছবি দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা হবে। সূত্রের মতে, সেই কারণে আট কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে দিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করানোর পাশাপাশি গতকাল রাজ্যসভায় হওয়া হাঙ্গামার ফুটেজও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এ দিন রাজ্যসভার দলনেতা তথা মন্ত্রী পীযূষ গয়াল, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর ছাড়াও সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী, শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, শ্রমমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব, সংখ্যালঘু মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি, সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরন ও অর্জুন রাম মেঘওয়াল। গতকাল বিরোধীরা বিল- কাগজপত্র ছিঁড়ে ওড়ানো, টেবিলে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখানোর সময়ে যে ভাবে রাজ্যসভার বিধি সংক্রান্ত বই চেয়ারম্যানের টেবিলের দিকে উড়ে আসে, তা ফৌজদারি অপরাধের শামিল বলেই দাবি করেন পীযূষ। তাঁর কথায়, ‘‘ওই ভারী বই যদি কারও মাথায় পড়ত, অঘটন ঘটতে পারত। দোষীদের কড়া শাস্তি চাই। এ ছাড়া, গতকাল এক জন মার্শালকে গলা টিপে ধরা ও মহিলা মার্শালকে টেনে হিঁচড়ে সরানোর যে দৃশ্য সামনে এসেছে তা নিন্দনীয়।’’

Advertisement

অন্য দিকে, মার্শালদের বিরুদ্ধে অভব্য আচরণের অভিযোগ তুলে দলমত নির্বিশেষে সরব সাংসদেরা। গতকাল বিরোধী সাংসদদের রুখতে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছিলেন মার্শালেরা। শিবসেনার সাংসদ সঞ্জয় রাউতের কথায়, ‘‘দেখে মনে হচ্ছিল, আমরা পাকিস্তান সীমান্তে রয়েছি।’’ কাল হাঙ্গামা রুখতে যে মার্শালেরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের অনেকেই বহিরাগত বলে সরব হন রাহুল গাঁধী। পরে বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সঙ্গে দেখা করে চিঠি দিয়ে এ প্রসঙ্গে লিখিত অভিযোগ জানান বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে। অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন বেঙ্কাইয়া।

সেই তদন্ত শেষে রাজ্যসভার সচিবালয় বেঙ্কাইয়াকে জানায়, হাঙ্গামা ঠেকাতে রাজ্যসভার পাশাপাশি লোকসভার নিরাপত্তাকর্মীদের ডাকা হয়েছিল। নিয়মমতো যা করা যায়। প্রথমে ১২ জন মার্শাল থাকলেও, পরিস্থিতি সামলাতে সেই সংখ্যা বেড়ে হয় ৪২। কোনও বহিরাগত সংস্থার নিরাপত্তারক্ষীদের ডাকা হয়নি। রাজ্যসভার সচিবালয়ের রিপোর্টে এ-ও দাবি করা হয়েছে, মার্শালরা সাংসদদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করেননি। কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী, বিজেপির রাজ্যসভার নেতা পীযূষ গয়ালও আবার বেঙ্কাইয়ার সঙ্গে দেখা করে দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি জানান।

বিরোধীদের অভিযোগ, সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবেই বাদল অধিবেশনে আলোচনা এড়িয়ে গিয়েছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় বিল পাশ করিয়ে নিয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা ওই অভিযোগ অস্বীকার করে প্রহ্লাদ বলেন, ‘‘সরকার আলোচনা না চাইলে করোনা, ওবিসি বিল নিয়ে কী ভাবে আলোচনা হল। কৃষক সমস্যা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছিল, কিন্তু তা আটকে দেয় কংগ্রেস ও তৃণমূল। আলোচনার স্বার্থে আমরা প্রয়োজনে অতিরিক্ত এক দিন সংসদ চালাতে চেয়েছিলাম। বিরোধীরা তা চায়নি।’’

যদিও অতিরিক্ত এক দিন সংসদ চালানোর প্রস্তাবের দাবি ‘সম্পূর্ণ মিথ্যে’ বলে জানিয়েছে বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেস শিবিরের দাবি, এমন কোনও প্রস্তাব দেয়নি সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন