ভবিষ্যতের ভার তাদের কাঁধে। অথচ তাদের কাঁধ ঝুঁকে পড়ছে শৈশবেই। এতটাই যে, পিঠের যন্ত্রণায় একটানা বেশি ক্ষণ বসে থাকাও দায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে অনেকের। তার সঙ্গে দেখা দিচ্ছে নানান শারীরিক সমস্যা। শৈশবেই হানা দিচ্ছে বার্ধক্যের উপসর্গ। সৌজন্যে ভারী স্কুলব্যাগ!
আইসিএসই-সিবিএসই থেকে শুরু করে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ-মাদ্রাসা পর্ষদ পর্যন্ত সব বোর্ডের পড়ুয়াদের শিরদাঁড়াই স্কুলব্যাগের গন্ধমাদন ভারে নুয়ে পড়ছে। তবে খুদেদের ব্যথা বুঝে ছোট্ট কাঁধের বোঝা কমাতে এ বার উদ্যোগী হয়েছে সিবিএসই বোর্ড। তাদের নিদান, সিবিএসই বোর্ডের অধীন সব স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের জন্য লকারের ব্যবস্থা করতে হবে। বোর্ড সূত্রের খবর, কোনও নতুন স্কুল সিবিএসই বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করলে যে-সব শর্ত তাদের পূরণ করতে হবে, লকার তৈরির বিষয়টি তার অন্যতম। পুরনো স্কুলগুলিকেও তাড়াতাড়ি যথাসম্ভব বেশি লকার তৈরি করতে হবে।
সিবিএসই-র তরফে জানানো হয়েছে, ভর্তির পরেই স্কুলে প্রতিটি পড়ুয়াকে বাধ্যতামূলক লকার দিতে হবে। সেখানে ক্লাস ওয়ার্কের খাতা এবং বই রাখবে পড়ুয়ারা। স্কুলের রুটিন এমন ভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে স্কুলের লকারে বই রেখে বাড়ি গেলে সমস্যা না হয়। এখন একই বিষয়ে একাধিক রেফারেন্স বই ব্যবহারের ঝোঁক বেড়েছে। সেই সব বইয়ের জন্য ব্যাগের ভার আরও বাড়ে। রেফারেন্স বইগুলো তাই লকারে রাখা হবে।
একই সঙ্গে পাঠ্যপুস্তকের ভার কমানোর কথাও ভাবছেন সিবিএসই বোর্ডের কর্তারা। বোর্ডের এক কর্তা জানান, সব বই-খাতাই যাতে রোজ রোজ বাড়ি নিয়ে যেতে না-হয়, সেই অনুযায়ী স্কুলগুলিকে রুটিন তৈরি করতে বলা হয়েছে। ক্লাস ওয়ার্কের খাতা, রেফারেন্স বই স্কুলের লকারে রাখা যায় কি না, স্কুলগুলিকে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে বলা হয়েছে।
অভিভাবকদের অধিকাংশই সিবিএসই বোর্ডের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের অনেকের মন্তব্য, অনেক সময়েই অযথা খাতা এবং রেফারেন্স বইয়ের ভার বাড়ানো হয়। ভবিষ্যতে সেগুলি কমানোর কথাও ভাবতে হবে সিবিএসসি বোর্ডকে। স্কুলে রাখার ব্যবস্থা থাকলে সমস্যা কিছুটা কমবে বলে আশা করছেন তাঁরা।
স্কুলগুলি কি প্রস্তুত?
সিবিএসই বোর্ডের অধীন সাউথ পয়েন্ট স্কুলের তরফে কৃষ্ণা দামানি জানাচ্ছেন, স্কুলের পুরনো ভবনে লকার তৈরির ক্ষেত্রে সমস্যা আছে। ‘‘তবে মুকুন্দপুরে স্কুলের নতুন ক্যাম্পাসে প্রতিটি ক্লাসরুমে পড়ুয়াদের জন্য লকার তৈরি করা হবে,’’ আশ্বাস দিয়েছেন কৃষ্ণাদেবী। অভিনব ভারতী হাইস্কুলের প্রিন্সিপাল শ্রাবণী সামন্ত জানাচ্ছেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে প্রি-স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য লকারের ব্যবস্থা আছে। সিনিয়র স্কুলের জন্যও লকার তৈরির পরিকল্পনা চলছে। ‘‘আমাদের এখানে রুটিন এমন ভাবে তৈরি করা হয়, যাতে পড়ুয়াদের প্রতিদিন সব বিষয়ের বই বা খাতা আনতে না-হয়,’’ বলেন শ্রাবণীদেবী।
অন্যান্য বোর্ড কী ভাবছে?
আইসিএসই বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত লা মার্টিনিয়ার স্কুলের তরফ থেকে সুপ্রিয় ধর বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে পর্যাপ্ত লকার রয়েছে। তবে আইসিএসই সব স্কুলে লকার তৈরি বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি।’’
রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা পাঠভবনের প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা রায়ের বক্তব্য, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এই বিষয়ে এখনও কোনও নির্দেশ দেয়নি। তা ছাড়া অপরিসর ক্লাসরুমে লকার তৈরি করা মুশকিল। কী বলছে পর্ষদ? ‘‘স্কুলে লকারের বন্দোবস্ত করার ব্যাপারে আমাদের এখানে কোনও ভাবনাচিন্তা এখনও শুরু হয়নি। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে রাজ্যের শিক্ষা দফতরই,’’ বলছেন পর্ষদের প্রশাসক কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়।