প্রদ্যুম্ন ঠাকুর। ফাইল চিত্র।
কোথা থেকে কেনা হয়েছিল ছুরি—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আজ প্রদ্যুম্ন ঠাকুর হত্যাকাণ্ডে ধৃত কিশোর পড়ুয়াকে দোকানে নিয়ে গেল সিবিআই। সেই সঙ্গেই তাদের দাবি, প্রদ্যুম্নকে খুনের কথা নিজের মুখেই স্বীকার করে নিয়েছে একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্র।
গত কাল গুরুগ্রামের রায়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র প্রদ্যুম্নকে হত্যার অভিযোগে ওই স্কুলেরই এক ছাত্রকে গ্রেফতার করে সিবিআই। ওই ছাত্রের বাবার অভিযোগ ছিল, গত মঙ্গলবার আচমকা সিবিআই তাদের বাড়িতে হানা দিয়ে তাঁর ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। টানা এগারো ঘণ্টা আলাদা করে তাঁর ছেলেকে জেরা করার পরে তাকে সিবিআই গ্রেফতার করে। কিন্তু জুভেনাইল আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানিয়েছেন, নিজের বাবার সামনেই প্রদ্যুম্নকে খুনের কথা স্বীকার করেছে রায়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। সিবিআইয়ের দাবি, সে নাকি জেরায় এ-ও বলেছে, ‘‘ওই সময় মাথা কাজ করছিল না। শুধু ওর গলায় ছুরি চালিয়ে দিয়েছি।’’ সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতকে আরও জানিয়েছেন, বছর সতেরোর ওই ছাত্রকে নিয়ে ঘটনাস্থল-সহ আরও কয়েকটি জায়গা যেতে হবে বলে তিন দিনের হেফাজতে চাওয়া হয়েছে তাকে। গোটা ঘটনার পুনর্গঠনের জন্য আগামী দু’-এক দিনের মধ্যে ধৃত ছাত্রকে নিয়ে স্কুলেও নিয়ে যাওয়া হবে বলে সিবিআই সূত্রের দাবি।
এ দিকে, ওই পড়ুয়াকে যাতে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো বিচার করা হয়, সেই দাবি উঠেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বিষয়টি নিয়ে অনেকে সরব হয়েছেন। অনেকেরই দাবি, এই বয়সে যে এত নৃশংস ভাবে খুন করতে পারে, তার বিচার জুভেনাইল আদালতে হওয়া উচিত নয়। জুভেনাইল আদালতে ছেলেটি দোযী সাব্যস্ত হলে তার সবচেয়ে বেশি তিন বছরের সাজা হতে পারে। তা-ও সেই সময়টুকু সংশোধন হোমে থাকতে হবে তাকে। অন্য দিকে, প্রাপ্তবয়স্কদের মতো তার বিচার হলে সাজা আরও অনেক কঠিন হওয়ার কথা। নির্ভয়া কাণ্ডের পরে ২০১৫ সালে বদলানো হয় দেশের জুভেনাইল জাস্টিস আইন। নয়া আইন অনুযায়ী, ১৬-১৮ বছরের কেউ যদি ধর্ষণ বা খুনের মতো নৃশংস কোনও অপরাধ করে, তা হলে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো তারও বিচার হতে পারে। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মেনকা গাঁধীও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, যেহেতু ওই ছাত্রের বয়স ১৬ পেরিয়ে গিয়েছে, তাই তার বিচার প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই হওয়া উচিত।
যদিও জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছে, চার সদস্যের একটি কমিটি তিন মাস ধরে পর্যবেক্ষণ চালাবে। ধৃত ছেলেটির আচার-ব্যবহার, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি-সহ আরও অনেক কিছু বিবেচনা করা হবে সেখানে। তার পরই সিদ্ধান্ত হবে ধৃত ছাত্রকে আদৌ প্রাপ্তবয়স্কদের মতো বিচার করা হবে কি না।
ওই ছাত্র গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই দিল্লির অভিজাত ডিফেন্স কলোনিতে তাদের বাড়িতে তালা। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ধৃত ছাত্রের বাবা নামকরা আইনজীবী। প্রায় ৫০০ কোটির সম্পত্তি রয়েছে তাদের পরিবারের।