স্বাধীনতার সত্তর বছর পরে টিভির মুখ দেখে হাঁ

ঝাড়খণ্ডের লোহারদাগা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে জঙ্গল ও পাহাড়ে ঘেরা প্রত্যন্ত গ্রাম পেশরা। বছরখানেক আগেও ছিল মাওবাদীদের গড়। এই গ্রামের রাস্তাতেই লোহারদাগার এসপি অজয় সিংহকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল মাওবাদীরা। উন্নয়নের ছিটেফোঁটা ছোঁয়াও নেই গ্রামে। একটা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল ঠিকই, কিন্তু তাতে বেশির ভাগ সময়েই তালা ঝুলত।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচী শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:২৩
Share:

দর্শনসুখ: চিকিৎসা করাতে এসে নজর আটকে টিভি-র পর্দায়। ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রাম পেশরায়। —নিজস্ব চিত্র।

দু’বছরের মেয়েটার তিন দিন ধরে জ্বর চলছে। উদ্বিগ্ন মা বিরজুদেবী মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে এসে জ্বর ভুলে গিয়ে হাঁ করে টিভির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। থাকবেন না-ই বা কেন! স্বাধীনতার সাত দশক পরে ভারতের এই নাগরিক যে এই প্রথম টেলিভিশনের মুখোমুখি!

Advertisement

ঝাড়খণ্ডের লোহারদাগা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে জঙ্গল ও পাহাড়ে ঘেরা প্রত্যন্ত গ্রাম পেশরা। বছরখানেক আগেও ছিল মাওবাদীদের গড়। এই গ্রামের রাস্তাতেই লোহারদাগার এসপি অজয় সিংহকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল মাওবাদীরা। উন্নয়নের ছিটেফোঁটা ছোঁয়াও নেই গ্রামে। একটা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল ঠিকই, কিন্তু তাতে বেশির ভাগ সময়েই তালা ঝুলত।

আরও পড়ুন: রাম রহিমের ডেরায় সাধ্বীনিবাসেই সুড়ঙ্গের মুখ!

Advertisement

সেই গ্রামে বিদ্যুৎ! লোহারদাগার সাংসদ সুদর্শন ভগৎ আলো জ্বালিয়ে তার উদ্বোধন করার সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যুতের হাত ধরে চলে এল টিভি।

এলাকার যুবক সঞ্জয় যাদব কলকাতার বেলঘরিয়া থেকে রুরাল মেডিক্যাল প্রাকটিশনারের (আরএমপি) কোর্স করে গ্রামে চেম্বার খুলে বসেছেন। বছর আঠাশের সঞ্জয়ের পসার ছিল ভালই। কিন্তু গ্রামে আলো আসার পরে তাঁর ভাগ্য বোধহয় আরও প্রসন্ন হলো। সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘গ্রামে আলো আসার কথা যখন চলছিল তখনই আমি লোহারদাগা থেকে একটা টিভি কিনে আনি। সঙ্গে ডিশ অ্যান্টেনাও। ঠিক করেছিলাম, যে দিন আলো আসবে সে দিনই টিভি চালাব।’’

ডাক্তারবাবু একমনে রোগীকে ইঞ্জেকশন দিচ্ছেন। ও-দিকে টিভিতে চলছে রিয়েলিটি শোয়ের নাচ। রোগীদের টিভি দেখতে বাধা দিচ্ছেন না তিনি। তবে তাঁর শর্ত একটাই— রোগী ছাড়া অন্য কেউ যেন চেম্বারে ভিড় না করেন।

শর্ত মেনেই স্থানীয় যুবক রঘু মাহাতো চেম্বারে এলেন। কী ব্যাপার? রঘুর কাশি হয়েছে। ডাক্তারকে বলছেন বটে, তবে রঘুর চোখ আঠার মতো লেগে আছে টিভির দিকে। ডাক্তার ধমক দিলেন। হেসে ফেলেন রঘু। ওষুধ ছাড়াই চলে যান।

মেয়েকে দেখিয়ে ডাক্তারখানা থেকে বেরিয়ে আসেন বিরজুদেবী। চোখে-মুখে তখনও অপার বিস্ময়। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে এসে প্রথম টিভি দেখার সৌভাগ্য হলো।’’

হঠাৎই টিভির পর্দা কালো। নিভে গেল আলোও। ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত এলাকার সেই কুখ্যাত লোডশেডিং। অবশ্য কয়েক মিনিটের মধ্যে চলেও এল বিদ্যুৎ। ভাঁজ পড়ল ডাক্তারবাবুর কপালে। তিনি জানান, ‘‘শুনেছি ৪-৫ দিন টানা আলো থাকে না।’’

এত দিন তো আলো-টিভি ছিলই না। তা হলে ডাক্তারের এত চিন্তা কেন! ডাক্তার দেখালে টিভি দেখা ফ্রি— এমন কোনও বিজ্ঞাপনের কথা ভাবছেন নাকি সঞ্জয় ডাক্তার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন