দেড় মাসেও সহমত নেই নেতৃত্ব নিয়ে

১৯৯৮ সালে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সভাপতি পদ থেকে কেশরীকে সরাতে প্রস্তাব পাশ করতে হয়। সনিয়া তখনই দলের হাল ধরেন। কিন্তু দিল্লির আকবর রোডে এআইসিসি দফতরে কেশরীকে আটকে রেখে নাকি সনিয়া সভাপতির ঘরে প্রবেশ করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৯ ০৩:৩২
Share:

প্রতীকী ছবি।

শ্রীপেরুমবুদুরে ভোটের প্রচার করার সময়ে জঙ্গিদের বিস্ফোরণে প্রাণ হারালেন রাজীব গাঁধী। কংগ্রেস নির্বাচনে জিতে গিয়েছিল। কিন্তু নেতাদের হাজার অনুরোধেও রাজনীতিতে পা রাখেননি রাজীবপত্নী সনিয়া গাঁধী। নরসিংহ রাও সরকারের পাঁচ বছর পরে কংগ্রেস ভোটে হেরে যায়। দলের সভাপতি হন সীতারাম কেশরী। কিন্তু তারও বছর দেড়েক পর সনিয়া যখন রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে মনস্থির করেন, কেশরী দলের রাশ ছাড়তে চাননি।

Advertisement

১৯৯৮ সালে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সভাপতি পদ থেকে কেশরীকে সরাতে প্রস্তাব পাশ করতে হয়। সনিয়া তখনই দলের হাল ধরেন। কিন্তু দিল্লির আকবর রোডে এআইসিসি দফতরে কেশরীকে আটকে রেখে নাকি সনিয়া সভাপতির ঘরে প্রবেশ করেন। যা নিয়ে বছর খানেক আগেও কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এ বারে রাহুল গাঁধী সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা ঘোষণার পরে দলের রাশ কার হাতে থাকবে, তাই নিয়ে তুলকালাম চলছে কংগ্রেসে। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার একটি মন্তব্য এই বিতর্ককে আরও উস্কে দিয়েছে।

গত সপ্তাহেই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা ঘোষণা করেছেন জ্যোতিরাদিত্য। তিনি বলেন, ‘‘সাত সপ্তাহ হয়ে গেল, এখনও দলে নতুন সভাপতি স্থির হল না। কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’’ এই

Advertisement

পর্যন্ত কোনও বিবাদ নেই। কিন্তু সিন্ধিয়া সঙ্গে জুড়েছেন, ‘‘এখন সকলে মিলে কাজ করার সময়। এক এক জনের নিজ নিজ এজেন্ডা চালানোর সময় নয় এটা।’’

প্রশ্ন হল, কংগ্রেসে কে কী এজেন্ডা চালাচ্ছেন এখন? গত কয়েক দিনের গতিবিধি দেখে কংগ্রেসের অনেক নেতাই মনে করছেন, রাহুল ও সনিয়া নতুন সভাপতি বাছাই পর্ব থেকে নিজেদের দূরে রাখার ঘোষণা করার পরে আহমেদ পটেল, অশোক গহলৌতরা দলের রাশ তুলে নিতে চাইছেন। সুশীলকুমার শিন্দের মতো গাঁধী পরিবারের অনুগত নেতাকে সভাপতি করানোর বিষয়েও সনিয়ারা আগে মনস্থির করে ফেলেছিলেন। কিন্তু আহমেদ পটেলরা মনে করছেন, শিন্দে বা মল্লিকার্জুন খড়্গের মতো কেউ সভাপতি হলে দলের রাশ গাঁধী পরিবারের হাতেই থাকবে। অদূর ভবিষ্যতে রাহুল যদি সভাপতি পদে ফিরতে না-ও চান, তা হলে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা দায়িত্ব নেবেন।

প্রবীণ নেতাদের থামানোর জন্যই ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহের মতো নেতা কোনও তরুণ তুর্কিকে সভাপতি করার প্রস্তাব দিয়েছেন। দশ জনপথের একদা ঘনিষ্ঠ জনার্দন দ্বিবেদী সাংবাদিক সম্মেলন করে আহমেদ পটেল, গহলৌতদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘নবীনদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার ব্যাপারে চাপ বাড়লে গহলৌতরা সচিন পাইলটকেও পদ দিতে রাজি। কিন্তু জ্যোতিরাদিত্যকে নয়। মনে করা হচ্ছে, জ্যোতিরাদিত্য বা মিলিন্দ দেওরা সম্প্রতি যে ইস্তফা দিয়েছেন, তা রাহুলেরই ইশারায়।’’

কিন্তু সচিন পাইলট মনে করেন, গহলৌত আসলে রাজস্থান নিজের দখলে রেখে তাঁকে রাজ্যছাড়া করতে চান। সম্প্রতি গহলৌত রাজ্যের বাজেট পেশ করে বলেছেন, গ্রামবাসীরা তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চেয়েছেন। অন্য কাউকে নন। তাঁর জবাবে সচিন বলেন, ‘‘রাজস্থানের জনতা কংগ্রেস ও রাহুল গাঁধীকে দেখে ভোট দিয়েছেন।’’ এই টালবাহানার মধ্যেই দেড় মাস পরেও নতুন সভাপতি হিসেবে কোনও নামে সহমতি হয়নি। সে কারণেই কংগ্রেসের কিছু নেতা ফের সনিয়ার দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁকে সাময়িক হাল ধরার জন্য বলতে। কিন্তু সনিয়া মানেননি।

সাংসদদের বড় অংশ অবশ্য এখনও খড়্গেকেই সভাপতি করার পক্ষে। খড়্গে গাঁধী পরিবারের অনুগত। কিন্তু গাঁধী পরিবার হস্তক্ষেপ না করলে কি সঙ্কট মিটবে? আজ রাহুল যখন আমদাবাদ আদালতে যান, সঙ্গে ছিলেন আহমেদ পটেল। কিন্তু কংগ্রেসে সকলেই জানেন, সনিয়া সভাপতি থাকার সময় তাঁর রাজনৈতিক সচিব হিসেবে পটেলের যে গুরুত্ব ছিল, রাহুল তা অনেকটাই ছেঁটে দিয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন