সিভিল সার্ভিসে চমকে দেওয়া আনসারকে হিন্দু নাম নিতে হয়েছিল!

তীব্র খরায় বুক শুকিয়ে কাঠ মরাঠওয়াড়ার। তার মধ্যে জালনা জেলা যেন আরও শুকনো। পিছিয়ে পড়া তো বটেই, সংখ্যালঘু এলাকায় বঞ্চনার অভিযোগও বিস্তর। এমন একটা পিছিয়ে পড়া জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে পুণে পৌঁছনোর পর প্রথমে পা রাখার জায়গাটুকুই খুঁজে পাচ্ছিলেন না সদ্য আঠেরোয় পড়া তরুণ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৬ ১৯:০০
Share:

তীব্র খরায় বুক শুকিয়ে কাঠ মরাঠওয়াড়ার। তার মধ্যে জালনা জেলা যেন আরও শুকনো। পিছিয়ে পড়া তো বটেই, সংখ্যালঘু এলাকায় বঞ্চনার অভিযোগও বিস্তর। এমন একটা পিছিয়ে পড়া জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে পুণে পৌঁছনোর পর প্রথমে পা রাখার জায়গাটুকুই খুঁজে পাচ্ছিলেন না সদ্য আঠেরোয় পড়া তরুণ। বুঝে গিয়েছিলেন, নিজের পরিচয় থেকে ‘প্রান্তিক’ ছাপটা মুছতে না পারলে বাধা অনেক। তাই প্রত্যন্ত শেলগাঁও-এর আনসারকে ‘শুভম’ হতে হয়েছিল। ইউপিএসি-তে দুর্দান্ত ফল করার পর শুভমের সামনে এখন পদস্থ প্রশাসক হওয়ার হাতছানি। এত দিনে শুভম গলা খুলে বলতে পারছেন, তাঁর আসল নাম আনসার আহমেদ শেখ।

Advertisement

বাবার তিনটে বিয়ে। তিন স্ত্রী-ই একই সংসারে থাকেন। একই সংসারে দিন গুজরান বৈমাত্রেয় ভাইবোনেদেরও। অটোরিক্সা চালিয়ে যে সামান্য আয়, তাতে অত বড় সংসারের বোঝা টানা দুষ্কর। আনসারের দাদা তাই পড়াশোনা চালাতে পারেননি বেশি দূর। গ্যারাজে কাজ নিয়েছিলেন অল্প বয়সেই। কিন্তু মেধাবী ভাই আনসারকে পড়াশোনা ছাড়তে দেননি দাদা। জালনা জেলা স্কুলের পাঠ শেষ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়ার জন্য বছর তিনেক আগে পুণের ফার্গুসন কলেজে ভর্তি হন আনসার। কিন্তু থাকবেন কোথায়? নাম জানার পর আর ঘর ভাড়া দিতে চায় না কেউ। অবশেষে শুভম নাম নিতে হয় আনসারকে। ছদ্মনামে ঘর ভাড়া নিয়ে পড়াশোনা শুরু। ৭৩ শতাংশ নম্বর নিয়ে স্নাতক হন। ইউপিএসসি পরীক্ষাতেও বসেছিলেন এই প্রথম বার। সাফল্য এসেছে প্রথম বারেই। গোটা দেশের মধ্যে তাঁর র‌্যাঙ্ক ৩৬১।

২১ বছরের তরুণ বলছেন, ‘‘আর ছদ্ম পরিচয় নিয়ে বাঁচতে চাই না। এখন খোলা গলায় বলতে চাই আমার নাম আনসার আহমেদ শেখ।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

জামা কাপড় খুলিয়ে বসিয়ে রাখত ওরা! নয়ডার স্কুলে র‌্যাগিংয়ে জখম কলকাতার ছাত্র

আনসারের গ্রাম প্রত্যন্ত শেলগাঁওয়ের বুক যেমন শুকিয়ে কাঠ, আনসারের পরিবারেরও সেই একই দশা। দারিদ্র আর অসংখ্য না পাওয়া তো ছিলই। ছিল অনেক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতাও। সেই ভয়ঙ্কর রাতগুলো এখনও ভুলতে পারেননি আনসার, যে সব রাতে বাবা বাড়ি ফিরে উন্মত্তের মতো মারধর করত মাকে। আজ সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে সাফল্যের শিখরে তিনি। ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ায় আইএএস আধিকারিক হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ আসতে চলেছে আনসার আহমেদ শেখের সামনে। কিন্তু আনসার ভুলতে চান না অতীতকে। বললেন, ‘‘আমার প্রতিকূলতা তিন রকমের। প্রথমত, আমি পিছিয়ে পড়া এলাকা থেকে এসেছি। দ্বিতীয়ত, আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। তৃতীয়ত, আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। প্রশাসনিক দায়িত্ব পেলে আমি এই সব সমস্যাগুলোর সমাধানের উপর জোর দেব, কারণ আমি খুব কাছ থেকে এই সমস্যাগুলোকে দেখেছি।’’

দাদার কথা বার বার বলছেন আনসার। গ্যারাজে কাজ করে যে ভাবে আনসারের পড়াশোনা চালানোর খরচ জুগিয়ে গিয়েছেন দাদা, তা ভুলবেন না কখনও। বলছেন ২১ বছরের আনসার। কথা দিচ্ছেন, ভুলবেন না সমস্যাগুলোকেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন