উল্লাস: ক্রিকেটে ভারতের হারের পরে উৎসবে সামিল হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুক। শ্রীনগরে। নিজস্ব চিত্র।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের জয়ের পরে উৎসবে মাতল কাশ্মীর। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় নেমে বাজি পোড়াল যুবকদের একাংশ। বাহিনীর শিবিরেও ছোড়া হল বাজি। শেষে বাহিনী-জনতা সংঘর্ষে আহত হয়েছে জনা ছয়েক যুবক। কাশ্মীর ও বালুচিস্তানে উৎসবের ছবি-ভিডিও পোস্ট করে ভারতকে খোঁচা দিয়েছেন পাকিস্তানি সেনার মুখপাত্র আসিফ গফুর।
পাকিস্তানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুক। ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীরের কটাক্ষ, মিরওয়াইজের উচিত পাকিস্তানে চলে যাওয়ার জন্য তল্পিতল্পা বাঁধা। মিরওয়াইজকে নিশানা করেছে বিজেপিও।
গতকাল রাতে পাকিস্তানের জয়ের পরেই নৌহাটা, রাজৌরি কাদাল, হাওয়াল, সরাফ কাদাল, হাব্বা কাদাল ও নবাব বাজারের মতো এলাকায় রাস্তায় নেমে বাজি পোড়াতে শুরু করে যুবকদের একাংশ। বাজির আওয়াজ, গাড়ির হর্নে কান পাতা দায় হয়। শুরু হয় পাকিস্তানপন্থী স্লোগানও। কয়েকটি এলাকায় নিরাপত্তাবাহিনীর শিবিরে বাজি ছুড়ে দেয় যুবকেরা।
আরও পড়ুন: পাকিস্তান জিততেই উৎসবে মাতল অশান্ত কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকা
পরিস্থিতি সামলাতে রাস্তায় নামে বাহিনীও। ফলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, বান্দিপোরার আসটেঙ্গু গ্রামের বাসিন্দারা উৎসবের সময়েই সেনা শিবির লক্ষ করে পাথর ছোড়ে। কুলগামের বাটপোরা গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেনার গাড়ি। আজ সকালে ওই দুই গ্রামে গিয়ে সেনা জওয়ানরা স্থানীয় বাসিন্দাদের মারধর করেন বলে অভিযোগ। তবে সেনা এ কথা মানতে রাজি নয়। তাদের দাবি, ১৫ নম্বর কোরের কম্যান্ডারের নির্দেশ মেনে সংযত আচরণ করেছে সেনা। তা নাহলে গতকাল সংঘর্ষ আরও বাড়তে পারত।
শ্রীনগরের নিগিন এলাকায় হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুকের বাড়িতে হাজির হয় শ’য়ে শ’য়ে যুবক। বাইরে এসে জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন মিরওয়াইজ।
টুইটারেও মিরওয়াইজ বলেন, ‘‘পাকিস্তান ভালো খেলে জিতেছে। তাদের অভিনন্দন।’’ আর এক হুরিয়ত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানিও পাকিস্তানকে অভিনন্দন জানান। টুইটারে কাশ্মীর ও বালুচিস্তানে উৎসবের ছবি-ভিডিও পর পর পোস্ট করেন পাক সেনার মুখপাত্র আসিফ গফুর। বালুচিস্তানে পাকিস্তান-বিরোধী আন্দোলন নিয়ে ইসলামাবাদকে নিশানা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাই পাক সেনা কাশ্মীর ও বালুচিস্তান নিয়ে এ ভাবেই দিল্লিকে পাল্টা খোঁচা দিতে চেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
টুইটারে হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজকে নিশানা করেন ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর। সাফ বলেন, ‘‘আপনি পাকিস্তানে চলে যান বরং। যদি চান তল্পিতল্পা বাঁধতে সাহায্য করতে পারি। ওখানে ভালো চিনা বাজি পাবেন। ইদের উৎসবও আরও ভালো হবে।’’ বিজেপি নেতা ও জম্মু-কাশ্মীরের উপ-মুখ্যমন্ত্রী নির্মল সিংহের কথায়, ‘‘পাকিস্তান এখানে নিরীহ শিশুদের খুন করছে। আর এই সব বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পাকিস্তানের জয় নিয়ে হইচই করছে। আসলে
এরা রাজ্যে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে মরিয়া।’’
মিরওয়াইজের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন মুসলিম ধর্মগুরু ইয়াসুব আব্বাসও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘উনি ভারতে থাকছেন। ভারতের মাটিতেই ওঁর সমাধি হবে। আর পাকিস্তানের সুরে কথা বলছেন?’’
আজ গতকালের ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন মিরওয়াইজ। হুরিয়ত নেতার দাবি, তাঁর বাইরে বেরিয়ে হাত নাড়ার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু শ’য়ে শ’য়ে মানুষ বাড়িতে হাজির হওয়ায় বেরিয়ে না এসে উপায় ছিল না। মিরওয়াইজের বক্তব্য, ‘‘এখন কাশ্মীরে ভারত-বিরোধী মনোভাব প্রবল। পাকিস্তান কাশ্মীরিদের সংগ্রামকে সমর্থন করছে। তাই তাদের জয় নিয়ে উৎসব হয়েছে।’’
ভারতের হারের পরে কাশ্মীরে উৎসব অবশ্য নতুন নয়। আশির দশকের গো়ড়া থেকেই এমন ঘটনা দেখছে ভূস্বর্গ। কেবল ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট যুদ্ধ নয়, অন্য দলের কাছে ভারত হারলেও আনন্দে মেতেছেন কাশ্মীরিদের একাংশ। ১৯৮৩ সালে শ্রীনগরেরই শের-ই-কাশ্মীর স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ভারত হারার পরে আনন্দে রাস্তায় নেমেছিলেন এক দল কাশ্মীরি। ১৯৮৬ সালে ওই স্টেডিয়ামেই অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের হারের পরেও দেখা গিয়েছিল একই চিত্র।