রবিবার ছাড়া পাচ্ছে নির্ভয়ার ‘নাবালক’ ধর্ষক। মুক্তির আগে তার পুনর্বাসন নিশ্চিত করার সব রকম ব্যবস্থা করে ফেলল সরকার। হোমে থাকাকালীন দর্জির কাজ এবং রান্না করতে শিখেছিল ওই অপরাধী। মুক্তির পরে তাকে টেলরিং শপ খুলে দিতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ব্যবস্থা করা হচ্ছে সেলাই মেশিন সহ অনান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর। দিল্লি সরকারের তরফে রাতেই জানানো হয়, আদালতের নির্দেশ মেনে তারা নাবালক ধর্ষককে এককালীন ১০ হাজার টাকার দেবে। কেন্দ্রীয় শিশু কল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গাঁধী বলেন, ‘‘এ তো অপরাধ করার জন্য আরও টোপ দেওয়া হল!’’
হাইকোর্ট আগে নির্দেশ দিয়েছিল, অপরাধী ও তার অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে নাবালক বিচার বোর্ড, কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক এবং দিল্লি সরকার যেন তার দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে। কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা যেন অবিলম্বে আদালতকে জানানো হয়।
জুভেনাইল জাস্টিস রুল মেনে জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিকের নেতৃত্বে একটি কমিটি ইতিমধ্যেই ‘পোস্ট রিলিজ প্ল্যান’ সারা। দিল্লি হাইকোর্টে ইতিমধ্যেই এই পরিকল্পনা সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
কমিটির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ‘‘মুক্তির পর ওই ‘নাবালক’ যাতে নতুন জীবন শুরু করতে পারে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। সুরক্ষিত করতে হবে তার নিরাপত্তাও। ভবিষ্যতে কোনওরকম হিংসা বা আক্রমণের শিকার যাতে সে না হয়, নজর রাখতে হবে সে দিকেও।’’
আরও পড়ুন-‘অপরাধের জয় হল!’ কান্নায় ভেঙে পড়লেন নির্ভয়ার মা
দিল্লি সরকারের মহিলা ও শিশু কল্যাণ দফতর জানিয়েছে মুক্তির পরেও ওই অপরাধীর নিয়মিত কাউন্সিলিং করা হবে।
সূত্রে খবর, রবিবার গোপনে বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে ওই ‘নাবালক’-কে। উদ্দশ্য, তাদের পরিচয় যাতে কোনও ভাবে প্রকাশ্যে না আসে।
২০১২ সালে যে নাবালক ধর্ষকের বয়স ১৮ ছোঁয়নি এখন সে প্রায় ২১-এর তরুণ। দিল্লির এক চলন্ত বাসে নির্ভয়াকে ভয়াবহ ভাবে ধর্ষণ করার পরে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ শরীরের ভেতর থেকে ছিঁড়ে বার করে এনেছিল ছেলেটা। ছ’জন ধর্ষকের মধ্যে সেই ছিল কনিষ্ঠতম। জন্মের শংসাপত্র আর স্কুলের কাগজপত্রে তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর ছ’মাস। আর সেই সুবাদে এই ধর্ষণ-কাণ্ডের ঘৃণ্যতম অপরাধী হওয়া সত্ত্বেও রবিবার ছাড়া পাচ্ছে সে।
এই অপরাধীকে এখনই মুক্তি না দেওয়ার আর্জি জানিয়ে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নির্ভয়ার বাবা-মা। সেই মর্মে নাবালকের মুক্তির উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন জানায় কেন্দ্রীয় সরকার। আদালতে একই আর্জি জানান বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীও। কিন্তু শনিবার বিচারপতি জি রোহিনী ও বিচারপতি জয়ন্ত নাথকে নিয়ে গঠিত দিল্লি হাইকোর্টের বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, দেশের আইনের বাইরে যাওয়ার এক্তিয়ার তাদের নেই। নাবালক বিচার আইনের ১৫ (১) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে বিশেষ সংশোধন আবাসে অপরাধীকে তিন বছর রাখা হয়েছে। এর পর আর তাকে সেখানে রাখা যাবে না। ২০ ডিসেম্বরই মুক্তি দিতে হবে।