স্মার্ট ভিলেজের ঘোষণা, বিতর্কে জড়ালেন মোদী

বিহার নির্বাচনে গ্রামের গরিব মানুষকে পাশে পেতে কেন্দ্রের স্মার্ট সিটি প্রকল্প নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করেছিলেন লালু প্রসাদ। পটনার গাঁধী ময়দানে মহাজোটের মঞ্চ থেকে বলেছিলেন, ‘‘স্মার্ট সিটি নয়, আমাদের স্মার্ট গ্রাম চাই। ও রকম গ্রাম আমরাই বানাব।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৬
Share:

বিহার নির্বাচনে গ্রামের গরিব মানুষকে পাশে পেতে কেন্দ্রের স্মার্ট সিটি প্রকল্প নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করেছিলেন লালু প্রসাদ। পটনার গাঁধী ময়দানে মহাজোটের মঞ্চ থেকে বলেছিলেন, ‘‘স্মার্ট সিটি নয়, আমাদের স্মার্ট গ্রাম চাই। ও রকম গ্রাম আমরাই বানাব।’’ প্রধানমন্ত্রী যেন সেই কথা তখনই নোটবুকে টুকে রেখেছিলেন। কেন্দ্রের পুরনো এক প্রকল্পকে ‘চুনকাম করে’ আজ স্মার্ট গ্রাম বানানোর প্রকল্প ঘোষণা করে দিল মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চৌধুরি বীরেন্দ্র সিংহ আজ ঘোষণা করেন, ‘‘প্রতিটি রাজ্যে কিছু স্মার্ট গ্রাম নিয়ে তালুক গড়ে তোলা হবে। বিহার বড় রাজ্য। তাই সেখানে একাধিক তালুক হবে।’’

Advertisement

রাজনৈতিক শিবিরের মতে এই প্রকল্প ঘোষণার মাধ্যমে লালু প্রসাদের রাজনীতির গ্রাস কেড়ে নিতে চাইছে বিজেপি। তবে একই সঙ্গে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। বিহার ভোটের দিন ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আদর্শ আচরণবিধির প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে। এখন আর বিহারের জন্য নতুন প্রকল্প ঘোষণা করার নিয়ম নেই। কিন্তু মন্ত্রীর ঘোষণায় সেই বিধি লঙ্ঘন হল বলেই আজ আঙুল তুলেছেন সংযুক্ত জনতা, আরজেডি, কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। ভোট চলাকালীন আকাশবাণীতে প্রধানমন্ত্রীর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি তুলে আজ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদীর সঙ্গে দেখা করেন মহাজোটের নেতারা। ঠিক সেই সময় সরকার স্মার্ট গ্রাম প্রকল্পের ঘোষণা করে। এখন এই বিষয়টি নিয়েও কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছেন জাতীয় স্তরের বিরোধী নেতৃত্ব। সুপ্রিম কোর্টের যাওয়ার ব্যাপারেও তাঁরা ভাবনা-চিন্তা আলোচনা শুরু করেছেন।

গ্রাম-শহরের ফারাক কমাতে বাজপেয়ী-জমানা থেকেই ‘পুরা’ (প্রোভিশন অব আর্বান অ্যামিনিটিস ইন রুরাল এরিয়াজ) নামে একটি প্রকল্প ছিল। কেন্দ্রে মোদী সরকার এসে তারই নাম বদলে করে রার্বান মিশন (রুরাল-আর্বান)। তার পর আর এক প্রস্ত নাম বদলে গত বাজেট সেই প্রকল্পের নতুন নাম হয় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রার্বান মিশন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকে আজ সেই প্রকল্পে ৫১৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ করে কেন্দ্র। তার পর সাংবাদিক বৈঠক ডেকে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চৌধুরি বীরেন্দ্র সিংহ বলেন, রাজ্যের কোথায় কোথায় এই ধরনের তালুক তৈরি হবে তা কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার স্থির করবে। ভৌগলিক ভাবে একই ধরনের কিছু গ্রামকে নিয়ে এক একটি তালুক তৈরি হবে। স্থানীয় পুর আইন অনুযায়ী গ্রামগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য নকশা তৈরি হবে। আগামী তিন বছরে সরকার এ ধরনের তিনশো তালুক তৈরি করবে। গ্রামোন্নয়নের জন্য বর্তমানে যে সব সরকারি প্রকল্প রয়েছে (গ্রামীণ সড়ক, আবাসন নির্মাণ, পানীয় জল, সেচ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা) সেগুলির আওতায় তালুক উন্নয়নের জন্য অর্থবরাদ্দ করা হবে। তার পর অতিরিক্ত তহবিল লাগলে তার প্রকল্প ভিত্তিতে সর্বোচ্চ তিরিশ শতাংশ টাকা কেন্দ্র দেবে।

Advertisement

মজার ব্যাপার, রার্বান প্রকল্পের আওতায় এর আগে কখনও স্মার্ট গ্রাম শব্দের ব্যবহার হয়নি। দুম করে আজই তা ব্যবহার করল কেন্দ্র। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘বিহার ভোটের আগে বিজেপি কতটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তা বারবারই প্রমাণিত হচ্ছে। একে তো পুরনো প্রকল্প নতুন নাম দিয়ে ঘোষণা করা এই সরকারের চরিত্রে বসে গিয়েছে। তার ওপর ভোটের আচরণ বিধি লঙ্ঘন করতে দ্বিধা করছেন না খোদ প্রধানমন্ত্রী।’’ সংযুক্ত জনতা নেতা পবন বর্মার দাবি, ‘‘পুরনো প্রকল্পে চুনকাম লাগিয়ে বিহারের মানুষকে বেকুব বানানো যাবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement