শীতেও জঙ্গি হানা কাশ্মীরে, হত ৩ শ্রমিক

সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরে আশা ছিল শীত। কিন্তু নতুন বছরের গোড়ায় জম্মুতে জেনারেল রিজার্ভ ইঞ্জিনিয়ার্স ফোর্সের (জিআরইএফ) শিবিরে পাকিস্তানের মদতে পুষ্ট জঙ্গিদের হামলা বুঝিয়ে দিল এ বার শীতেও তারা পুরোদস্তুর সক্রিয়। ওই হামলা চালানো ও জঙ্গিদের গা ঢাকা দেওয়ার পরে ফের প্রশ্নের মুখে পড়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের জঙ্গি মোকাবিলার কৌশল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীনগর ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৪১
Share:

সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরে আশা ছিল শীত। কিন্তু নতুন বছরের গোড়ায় জম্মুতে জেনারেল রিজার্ভ ইঞ্জিনিয়ার্স ফোর্সের (জিআরইএফ) শিবিরে পাকিস্তানের মদতে পুষ্ট জঙ্গিদের হামলা বুঝিয়ে দিল এ বার শীতেও তারা পুরোদস্তুর সক্রিয়। ওই হামলা চালানো ও জঙ্গিদের গা ঢাকা দেওয়ার পরে ফের প্রশ্নের মুখে পড়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের জঙ্গি মোকাবিলার কৌশল।

Advertisement

দেশের সীমান্ত এলাকায় রাস্তা তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে ‘বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন’-এর অন্তর্গত জিইআরএফ। জম্মুর আখনুরে বাত্তাল গ্রামে ওই বাহিনীর একটি শিবিরে জনা বারো কর্মী রয়েছেন। জম্মু থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরের বাত্তাল আন্তর্জাতিক সীমান্তের খুব কাছে।

সেনা সূত্রে খবর, গতকাল রাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাত্তালে আসে জনা দু’য়েক জঙ্গি। ওই এলাকায় সীমান্তে ঘন জঙ্গল রয়েছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, এর সুবিধে নিয়েই গা ঢাকা দিয়ে সীমান্ত পেরোতে পেরেছে তারা। ভোর রাতে জিআরইএফ শিবিরে হামলা চালায় ওই জঙ্গিরা।

Advertisement

হামলাকারীরা প্রথমে গ্রেনেড ছোড়ে। তাতে শিবিরে গোলমাল শুরু হয়। তখনই শুরু হয় গুলিবৃষ্টি। নিহত হন তিন শ্রমিক। আহত হন এক জন। শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা জওয়ানরা পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করলে জঙ্গিরা পালিয়ে যায়।

ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় সেনা ও পুলিশের বিরাট বাহিনী। এলাকা ঘিরে ফেলে তল্লাশি শুরু হয়। তবে এখনও হামলাকারীদের খোঁজ মেলেনি। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, জঙ্গলে ঘেরা সীমান্ত দিয়ে তারা ফের পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে পালিয়ে গিয়েছে।

নিহত শ্রমিকদের মধ্যে সলমন খান ও রশিদ আসলাম উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। রমেশ টিপনু ঝাড়খণ্ডের। আহত হয়েছেন উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা আব্দুল আজিজ।

শীতে জম্মু-কাশ্মীরের গিরিপথগুলি বরফ পড়ে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সেই সময়ে কিছুটা কমে অনুপ্রবেশ। তাই তখন হামলা কমবে বলে আশা ছিল মোদী সরকারের। কিন্তু জানুয়ারিতে এই হামলা সেই আশাতেও জল ঢেলে দিয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রের মতে, উপত্যকায় বরফ ও বাহিনীর কড়া নজরদারির ফলে ক্রমশ নিজেদের কার্যকলাপ জম্মুর দিকে সরিয়ে আনছে জঙ্গিরা। নভেম্বর মাসে নাগরোটার সেনা শিবিরে হামলা হয়েছিল। সেই শিবিরও জম্মুতে। বাহিনীর শিবিরে হামলা চালাতে জঙ্গিরা এখন ভোর রাতকেই বেছে নিচ্ছে বলেও ধারণা গোয়েন্দাদের। উরি, নাগরোটা-সহ সব ক্ষেত্রেই এই কৌশল নিয়েছে হামলাকারীরা। গোয়েন্দাদের দাবি, বাত্তালের হামলায় জঙ্গিদের মদত দিয়েছে পাক সেনার বিশেষ বাহিনী ‘ব্যাট’। ওই বাহিনী দু’বার ভারতে ঢুকে সেনা জওয়ানদের খুন করেছে। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে ব্যাট বাহিনীর সদস্যরা পুঞ্চ সেক্টরে ভারতীয় সেনার ল্যান্স নায়েক সুধাকর সিংহ ও হেমরাজ সিংহকে খুন করে। তার পরে হেমরাজের মাথা কেটে নিয়ে যায়।

পুরো ঘটনায় যে কেন্দ্রের জঙ্গি মোকাবিলার কৌশল নিয়ে ফের বড় প্রশ্ন উঠল একান্ত আলোচনায় তা স্বীকার করে নিচ্ছেন মোদী সরকারের কর্তারা। জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় ভূস্বর্গে সাম্প্রতিক অশান্তি নিয়ে এমনিতেই হিমসিম খাচ্ছে রাজ্যের পিডিপি-বিজেপি সরকার। তার মধ্যে এই হামলায় মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণের আরও সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন বিরোধীরা। ন্যাশনাল কনফারেন্স বিধায়ক দেবেন্দ্র রানার কটাক্ষ, ‘‘৫৬ ইঞ্চি ছাতির আর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন