পাঁচিল ধসিয়ে উড়ল বিমান, চালক কিন্তু এখনও অন্ধকারেই!

বিমানবন্দরের পাঁচিল গুঁড়িয়ে উড়ল বিমান। কিচ্ছুটি টের পেলেন না পাইলট!

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৩৪
Share:

বিমানের পেটের নীচে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ।

বিমানবন্দরের পাঁচিল গুঁড়িয়ে উড়ল বিমান। কিচ্ছুটি টের পেলেন না পাইলট! আর যখন জানলেন, ১৩০ জন যাত্রীকে নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের দুবাইগামী সেই বিমান তখন মাঝ-আকাশে। তিরুচিরাপল্লি থেকে উড়ান শুরু করা চালক জানালেন, কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। তবু নিরাপত্তার খাতিরে বিমান ঘোরানোর সিদ্ধান্ত নিল এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)। পাক্কা চার ঘণ্টা পরে মুম্বই বিমানবন্দরে নামল আইএক্স-৬১১। দেখা গেল, বিমানের পিছনের চাকার দিকে নীচে এবং পেটের কাছে অনেকটা চিরে গিয়েছে। যেন ধারালো অস্ত্র দিয়ে পলেস্তারা খসিয়ে দিয়েছে কেউ। যাত্রীরা অক্ষত। কিন্তু কী হতে পারত, ভেবে শিউরে উঠছেন বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচলেও যাত্রী-সুরক্ষা নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলে দিল ‘মহারাজা’। বিশেষজ্ঞদের একাংশের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এমন বড়সড় একটা স্ট্রাকচারাল ফেলিওর, অথচ চালক টেরই পেলেন না!’’ গত কাল মাঝরাতের ওই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিমানমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। জানিয়েছেন, এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রী-সুরক্ষার হাল এ বার কোনও পেশাদার বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে খতিয়ে দেখা হবে। আপাতত বিমানটির ক্যাপ্টেন ডি গণেশ বাবু এবং ফার্স্ট অফিসার ক্যাপ্টেন অনুরাগকে কোনও উ়ড়ানের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না।

এয়ার ইন্ডিয়ার বক্তব্য, গত কাল রাত দেড়টা নাগাদ বিমানটি রানওয়ে ছাড়ার পরে বিমানবন্দরের অফিসারেরা জানান, সম্ভবত পাঁচিলে ধাক্কা মেরে উড়েছে সেটি। পাইলটকে সতর্ক করা হয় তখনই। প্রশ্ন এখানেই। আকাশে ছোট পাখির সঙ্গে বিমানের ধাক্কা লাগলেও ককপিটে বসে বড়সড় আওয়াজ পান পাইলট। কেঁপে ওঠে বিমান। সে ক্ষেত্রে দু’জন পাইলট পাঁচিলে ধাক্কা লাগার পরেও কেন আওয়াজ পেলেন না, কেন কম্পন অনুভব করলেন না, তা ভেবে বিস্মিত অভিজ্ঞ পাইলটেরা। তবে বিমানের সঙ্গে বাইরের কিছুর ধাক্কা লাগলে ককপিটে কোনও যান্ত্রিক সতর্ক-বার্তা আসে না।

Advertisement

এ ভাবেই ভেঙেছে পাঁচিল। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

দুর্ঘটনার পরে বিমানটির পেটের তলার ছবি দেখে পাইলটেরা জানিয়েছেন, ওই জায়গাটির ভিতরে চাকা থাকে। সেখানে ফুটো হয়ে হাওয়া ঢুকে এলে আপাত ভাবে কোনও ক্ষতি নেই ঠিকই। তবে সেই চিড় অন্যত্র ছড়িয়ে পড়লেই ফল হতে পারে ভয়ঙ্কর। এক কম্যান্ডার পাইলটের কথায়, ‘‘বিমানের গায়ে যে আস্তরণ থাকে, তা টান করে রাখা সেলোফেন পেপারের মতো। টানটান সেলোফেন পেপারের কোথাও ব্লেড দিয়ে চিরে দিলে যেমন আস্তে আস্তে সেই চিড় ছড়িয়ে পড়ে, তেমনই বিমানের পেটে কোথাও চিড় ধরলে তা আস্তে আস্তে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যাত্রী-কেবিনের বাইরের দিকে এমন চিড় ধরলে বাইরের হাওয়া ভিতরে ঢুকে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিমান ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতেও পারে। একেই বলে ‘স্ট্রাকচারাল ফেলিওর’।’’ ১৯৮৫ সালের ১২ অগস্ট জাপান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান এ ভাবেই ভেঙে পড়েছিল ওসুটাকা পাহাড়ের কাছে। যাত্রী ও বিমানকর্মী মিলিয়ে মারা গিয়েছিলেন প্রায় ৫২০ জন।

একাংশের অনুমান, গোড়াতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে থাকতে পারেন চালক। বিমানের যান্ত্রিক বা রানওয়ের সিগন্যালিং ব্যবস্থায় গন্ডগোলের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, বিমানবন্দরের চার ধারে ৮ ফুট পাঁচিল এবং তার উপরে আড়াই ফুট কাঁটাতার রাখাটাই সারা দেশের নিয়ম। তিরুচিরাপল্লির ক্ষেত্রে ওই উচ্চতা-বিধি মানা হয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখা হবে তা-ও। আজ ভোর ৫টা ৩৫-এ বিমানটি মুম্বইয়ে নামার পরে, যাত্রীদের দুবাইগামী অন্য বিমানে তুলে দেওয়া হয়।

২০১০-এ দুবাই থেকে এসে ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরে ভেঙে-পড়া বিমানটিও ছিল এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের। অবতরণের হিসেবের ভুলে সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল ১৫৮ জনের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন