উদয়নের বাড়ি গিয়েও সাড়া পাননি শিবেন্দ্ররা

উদয়নের বাড়ির দরজা বন্ধ। সে বাড়ির ভিতরে আকাঙ্ক্ষা রয়েছেন, এই বিশ্বাসে কড়া নেড়ে চলেছেন তাঁর বাবা শিবেন্দ্র শর্মা ও ভাই আয়ুষ। কিন্তু শত কড়া নেড়েও লাভ হয়নি। মেয়ের দেখা মেলেনি।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:১৮
Share:

উদয়নের বাড়ির দরজা বন্ধ। সে বাড়ির ভিতরে আকাঙ্ক্ষা রয়েছেন, এই বিশ্বাসে কড়া নেড়ে চলেছেন তাঁর বাবা শিবেন্দ্র শর্মা ও ভাই আয়ুষ। কিন্তু শত কড়া নেড়েও লাভ হয়নি। মেয়ের দেখা মেলেনি।

Advertisement

গত ডিসেম্বর মাসে এক দিন ভোপালের সাকেতনগরের উদয়ন দাসের বাড়ির দরজায় পৌঁছে এই অভিজ্ঞতা হওয়ায় সে দিনই সেখানকার গোবিন্দপুরা থানায় গিয়ে সাহায্যের আবেদন করেন শিবেন্দ্রবাবু। তাঁর ক্ষোভ, স্থানীয় পুলিশ তাঁর কথায় আমল দেয়নি। মেয়ে হারানো বাবার আক্ষেপ, ‘‘ওই সময় পুলিশ যদি উদয়নের বাড়িতে যেত, তা হলে ছেলেটা আগেই ধরা পড়ত! আমাদের মেয়ের খুন হওয়ার ব্যাপারটাও বেরিয়ে আসত!’’

রাজস্থানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রনিক্স নিয়ে পাশ করে জুন মাসে বাঁকুড়ার বাড়ি ছাড়েন বছর আঠাশের আকাঙ্ক্ষা ওরফে শ্বেতা। বাবাকে জানিয়েছিলেন, চাকরি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। বাড়ি ছাড়ার কয়েক দিন পরে আকাঙ্ক্ষা ফোন করে বাড়িতে জানান, তিনি মার্কিন মুলুকে পৌঁছে গিয়েছেন। এর পর থেকে তিনি শুধু ‘হোয়াটসঅ্যাপ’-এ বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। মেয়ের কাছ থেকে উদয়নের নাম শুনেছিলেন শিবেন্দ্রবাবুরা। কিন্তু উদয়ন তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার ভিসা নিয়ে দিল্লিতে অপেক্ষা করতে বলে নিখোঁজ হওয়ায় সন্দেহ হয় শর্মা পরিবারের।

Advertisement

গত ৫ ডিসেম্বর বাঁকুড়া পুলিশের কাছে মেয়ের নিখোঁজ-ডায়েরি করে আকাঙ্ক্ষার পরিবার। বাঁকুড়া পুলিশ তদন্ত করে আকাঙ্ক্ষার ‘মোবাইল টাওয়ার লোকেশন’ থেকে ভোপালের গোবিন্দপুরা থানার সাকেতনগরের কথা জানতে পারে। পুলিশ শিবেন্দ্রবাবুকে ভোপালে গিয়ে খোঁজ করার পরামর্শ দেয়। সেই মতো ডিসেম্বরের শেষ দিকে উদয়নের বাড়িতে গিয়েছিলেন শিবেন্দ্রবাবু এবং আয়ুষ। বাড়ির দরজায় লাগাতার দরজায় কড়া নেড়েছিলেন তাঁরা। উদয়ন এবং আকাঙ্ক্ষার নাম ধরে ডাকাডাকিও করেন। তবে বাড়ির দরজা খোলেনি।

ভোপাল পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, সেই সময় গোবিন্দপুরা থানায় গিয়ে মেয়ের ব্যাপারে মৌখিক খোঁজখবর করেছিলেন শিবেন্দ্রবাবু। উদয়নের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ জানাননি। পুলিশ ‘মানবিকতার খাতিরে’ উদয়নের বাড়িতে একাধিক বার গেলেও, দরজায় তালা ঝুলতে দেখে। ওই ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যে পরে উদয়ন নিজেই থানায় হাজির হয়। পুলিশের অনুমান, পড়শিদের কাছ থেকে এলাকায় পুলিশ গিয়ে তার নামে খোঁজখবর করছে— এমনটা জানতে পেরেই সে থানায় যায়। সেখানে উদয়ন দাবি করে, আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তার বিয়ের সার্টিফিকেটের ‘কপি’ সে থানায় পাঠানোর জন্য ডাকঘরে ‘পোস্ট’ করে দিয়েছে। পুলিশ সেই সার্টিফিকেট পেয়ে যাবে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোপাল পুলিশের সন্দেহ মেটাতে আকাঙ্ক্ষার নাম দিয়ে একটি চিঠি উদয়ন গোবিন্দপুরা থানায় পাঠায়। সেই চিঠিতে আকাঙ্ক্ষার বয়ানে লেখা ছিল, সে প্রাপ্তবয়স্ক। স্বেচ্ছায় বিয়ে করে উদয়নের সঙ্গে সাকেতনগরের বাড়িতে বসবাস করছে। এর পরে ব্যাপারটা নিয়ে তেমন নাড়াচাড়া হয়নি।

কিন্তু পুলিশ তো আকাঙ্ক্ষাকে সশরীরে থানায় হাজির করানোর জন্য উদয়নকে চাপ দিতে পারত, তেমন করা হল না কেন? সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ সুপার সিদ্ধার্থ বহুগুণা বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’

গত জানুয়ারিতে আকাঙ্ক্ষার নম্বর থেকে ‘হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ’ পান শিবেন্দ্রবাবু। সেখানে লেখা ছিল, ‘বাড়িতে কেন পুলিশ পাঠিয়েছিলে? পুলিশ তোমায় কী সাহায্য করল? উদয়নের হাত কত লম্বা তুমি জানো? পুলিশ বাড়িতে এসেছিল বলে উদয়ন ওই থানার ওসিকে বদলি করিয়ে দিয়েছে’। গত বৃহস্পতিবার শিবেন্দ্রবাবুরা জানতে পারেন, সাকেতনগরের বাড়িতে গত জুলাই বা অগস্টে আকাঙ্ক্ষাকে খুন করে এত দিন পুঁতে রেখেছিল উদয়ন।

এক তদন্তকারীর বক্তব্য, ‘‘আমাদের ধারণা, আকাঙ্ক্ষাকে খুনের পরে উদয়ন শুধু তাঁর নম্বর থেকে অন্যদের হোয়াটসঅ্যাপ করা নয়, আকাঙ্ক্ষার নামে চিঠিও লিখেছে পুলিশকে। ফেসবুকে উদয়ন বহু জাল ‘প্রোফাইল’ চালাত, যার মধ্যে আকাঙ্ক্ষার প্রোফাইলও থাকতে পারে।’’ বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘আকাঙ্ক্ষার একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দেখেছিলাম, যাতে জুলাই-অগস্টের অনেক পরের পোস্ট ছিল। উদয়নের সেই জালিয়াতি নিয়েও তদন্ত করব আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন