‘কাম কি বাত’-এ মোদীকে নিশানা রাহুল-অখিলেশের

চওড়া হাসি। ব্যক্তিগত আক্রমণে না গিয়ে পরিণত জবাব। পাখির চোখ যুব সমাজের ভোট। এবং নিশানায় নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪২
Share:

ফাইল চিত্র।

চওড়া হাসি। ব্যক্তিগত আক্রমণে না গিয়ে পরিণত জবাব। পাখির চোখ যুব সমাজের ভোট। এবং নিশানায় নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশের প্রথম দফার ভোটের দিন রাহুল গাঁধী-অখিলেশ যাদবের যুগলবন্দি বোঝাল, দু’জনেই আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। সেই আত্মবিশ্বাসে ভর করেই গত কয়েক দিনে নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত আক্রমণের পরিণত জবাব দিলেন রাহুল-অখিলেশ। ‘কাম কি বাত’ (কাজের কথা) দিয়েই জবাব দিলেন মোদীর কটাক্ষের। লখনউয়ে যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করলেন, ক্ষমতায় এলে প্রধান কোন ১০টি প্রতিশ্রুতি পালন করবে সপা-কংগ্রেস সরকার।

গত দু’-তিন দিন ধরেই ব্যক্তিগত স্তরে আক্রমণ শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমে রাজ্যসভায় তাঁর পূর্বসূরি মনমোহন সিংহকে দুর্নীতি থেকে গা বাঁচানো নিয়ে আক্রমণ করে বলেন, ‘বর্ষাতি পরে স্নান করা ওঁর থেকে শিখতে হয়’! এর পর গত কাল রাহুলকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘ওঁর নামে গুগল খুঁজলে সব থেকে বেশি জোক্‌স মেলে’!

Advertisement

পাল্টা জবাবে আজ রাহুল কিন্তু ব্যক্তিগত আক্রমণে যাননি। তা-ই বলে মোদীকে বিঁধতেও ছাড়েননি। তিনি বলেন, ‘‘মোদীজি গুগল সার্চ করতে ভালবাসেন। অন্যের ঠিকুজি-কোষ্ঠী পড়তে ভালবাসেন। অন্যের স্নানঘরে উঁকি মারতে ভালবাসেন! এ সব উনি ফ্রি-টাইমে করুন, সন্ধ্যাবেলা করুন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আসল কাজটা তো করুন! চাকরি দিন, চাষিদের সুরাহা দিন। নিরাপত্তার কাজটা করুন।’’

কম যাননি অখিলেশও। তিনি বলেন, ‘‘এ তো নিছক ভোট। রাগ করা, আবেগতাড়িত হওয়া উচিত নয়। মোদীজি কো গুস্সা কিঁউ আতা হ্যায়? কারণ উনি বুঝতে পারছেন, পায়ের তলা থেকে মাটি সরছে। এখন ইন্টারনেটেই ঠিকুজি-কোষ্ঠী পাওয়া যায়। উনি ‘মন কি বাত’ করেন, ‘কাম কি বাত’-ও করুন!’’

প্রথমে পরিকল্পনা ছিল, আজ পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে যখন ভোটগ্রহণ পর্ব চলবে, তখন পূর্ব উত্তরপ্রদেশে গিয়ে মোদীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতে ‘রোড শো’ করবেন রাহুল-অখিলেশ। টেলিভিশনের মাধ্যমে তাঁদের যুগলবন্দির বার্তা পৌঁছবে ভোটারদের কাছে। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শে এই কাজটাই করেছিলেন মোদী। দেশের এক প্রান্তে যখন ভোট চলছে, তখন অন্য প্রান্তে প্রচারে যেতেন মোদী। এখন ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোর রাহুলের পাশে। রবিদাস জয়ন্তীর জন্য বারাণসীর ‘রোড শো’ বাতিল করতে হলেও আজ লখনউয়ে যুগলে হাজির হন দুই নেতা। দশ দফা প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন। যা আসলে সপা-কংগ্রেস জোটের অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি।

এ বার উত্তরপ্রদেশে ২৪ শতাংশ ভোটারের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এঁদের হাতেই সরকার গড়ার চাবিকাঠি। সে দিকে চোখ রেখেই রাহুল-অখিলেশের প্রতিশ্রুতির তালিকায় যুবক-যুবতীদের জন্য ফ্রি স্মার্টফোন, চাকরি, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মতো বিষয় জায়গা পেয়েছে সবথেকে উপরে। মোদী সপা-কংগ্রেসের জোটকে

‘দুই পরিবারের জোট’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন।

আজ অখিলেশ-রাহুল একে ‘তারুণ্যের জোট’ আখ্যা দিয়েছেন। অখিলেশের সরকার সম্পর্কে উত্তরপ্রদেশের জনতার সবথেকে বড় নালিশ ছিল, আইন-শৃঙ্খলার দুরবস্থা। সে কথা মাথায় রেখেই আজ দ্রুত, কার্যকরী পদক্ষেপের জন্য পুলিশ বাহিনীর আধুনিকীকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গরিব, মহিলা, সংখ্যালঘু, দলিতদের কথা তো আছেই। উত্তরপ্রদেশ ঘুরে রাহুল কৃষকদের ঋণ মকুব, সস্তায় বিদ্যুৎ এবং ফসলের ন্যায্য দামের দাবি তুলেছিলেন। সপা-কংগ্রেস জোট সরকারে এলে এই তিনটি দাবিই পূরণ হবে বলে আজ রাহুল জানিয়েছেন।

মজার কথা হল, আজ মোদীও উত্তরপ্রদেশের বদায়ুঁতে প্রচারে গিয়ে একই রকম ভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সরকারে

এলেই বিজেপি কৃষকদের ঋণ মকুব করবে। মোদী এ কথা বলে নোট বাতিলের ক্ষতে প্রলেপ দিতে চেয়েছেন। এবং সেই সঙ্গেই রাহুল-অখিলেশ জুটিকে বারবার বিঁধেছেন। পাল্টা উত্তরও এসেছে। বদায়ুঁ থেকে লখনউ— দিনভর চলেছে কথার তরজা। প্রচারে রাহুল-অখিলেশের বার্তা, ‘কাম বোলতা হ্যায় (কাজ কথা বলে)’।

বদায়ুঁতে অখিলেশের উদ্দেশে মোদীর পাল্টা কটাক্ষ, ‘কর্নামা বোলতা হ্যায় (দুষ্কর্ম কথা বলে)!’ অখিলেশ লখনউয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘অচ্ছে দিন কোথায়?’’ বদায়ুঁতে মোদীর জবাব, ‘‘অচ্ছে দিনের দায়িত্ব অখিলেশের। তিনিই গত পাঁচ বছর মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে রয়েছেন।’’ অখিলেশ বলেছেন, ‘‘মোদীজি যদি একবার আগরা-লখনউ এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করেন, তা হলে তিনিও সপা-কে ভোট দেবেন।’’ মোদী বলেছেন, ‘‘ভোটের ফল বের হলেই সব হিসেব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’

এ তো গেল কথার লড়াই। কিন্তু আজ লখনউয়ে সকলের নজর কেড়েছে রাহুল-অখিলেশ যুগলবন্দির নিখুঁত তালমিল। উত্তরপ্রদেশে সপা-কংগ্রেসের জোট হলেও এক ডজনের বেশি আসনে রফা হয়নি। দুই দলই প্রার্থী দিয়েছে। সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠলে আজ রাহুল-অখিলেশ যুক্তি দিয়েছেন, সার্বিক ভাবে এর জন্য জোটে কোনও সমস্যা নেই।

রাহুলের যুক্তি, ‘‘৯৯ শতাংশ আসনেই সমস্যা নেই। কিছু আসনে সমস্যা থাকলেও সেটা কোনও ব্যাপার নয়।’’ অখিলেশ বলেন, ‘‘বার্তা স্পষ্ট, সরকার আমাদেরই হবে।’’

প্রথম দিন যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল প্রথম কথা বলেছিলেন। আজ তিনি বড় ভাইয়ের মতো অখিলেশকে এগিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘এ বার অখিলেশ প্রথমে বলবেন।’’ অখিলেশ মুচকি হেসে বলেন, ‘‘খুব ভাল কথা যে, উনি লখনউতে এসে ‘পহলে আপ’-এর রীতি শিখে নিয়েছেন।’’

দশ কাহন

• তরুণদের বিনামূল্যে স্মার্টফোন, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে ২০ লক্ষ চাকরি

• কৃষকদের ঋণ মকুব, সস্তায় বিদ্যুৎ, ফসলের ন্যায্য দাম

• ১ কোটি গরিব পরিবারকে মাসে ১ হাজার টাকা পেনশন, শহুরে গরিবদের ১০ টাকায় দুপুরের খাওয়া

• মহিলাদের জন্য ৩৩% সরকারি চাকরি সংরক্ষণ, পঞ্চায়েত ও পুর ভোটে ৫০% আসন

• পাঁচ বছরে সব গ্রামে জল, বিদ্যুৎ, সড়ক

• নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সব ছাত্রী ও মেধাবি ছাত্রদের সাইকেল

• দলিত ও অনগ্রসর শ্রেণির ১০ লক্ষ গরিব পরিবারকে নিখরচায় বাড়ি

• সব জেলাকে জুড়বে ৪ লেনের রাস্তা, ৬ বড় শহরে মেট্রো

• সরকারি প্রকল্পে জনসংখ্যার অনুপাতে সংখ্যালঘু ও অনগ্রসর শ্রেণির ভাগ

• পুলিশের আধুনিকীকরণ, ১০০ নম্বরের পরিষেবা ছড়িয়ে দেওয়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন