আলিঙ্গনে জোটসঙ্গী। যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে অখিলেশ যাদব ও রাহুল গাঁধী। রবিবার লখনউয়ে। ছবি: পিটিআই
সলমন খানের গানের আদলে স্লোগান আগেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। সর্বত্র বেজে চলেছে, ‘‘ইউপি কো ইয়ে সাথ পসন্দ হ্যায়!’’ তার পরে আজ, মাঘ-সন্ধ্যায় লখনউয়ের ঐতিহাসিক ঘণ্টাঘরের সামনে যা হল, তা-ও কোনও বলিউডি অ্যাকশন থ্রিলারের থেকে কম নয়!
রাস্তার উপরে রাখা ‘রথে’র ছাদে তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন দুই যুব নেতা। দু’জনেরই পোশাক মোটামুটি এক! সাদা কুর্তা, কালো জ্যাকেট। যৌথ সাংবাদিক বৈঠক থেকে রথ ছোটানো— ছ’ঘণ্টার মেগা-শো শেষ করে রাহুল গাঁধী তখন বলেছেন, ‘‘মোদী বদলার কথা বলেন। আমরা বলি, বদলের কথা। অখিলেশই ফের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন।’’ যা শুনে হাসিমুখে হাততালি দিচ্ছেন অখিলেশ যাদব।
বেলা একটায় দুই নেতার প্রথম আবির্ভাবের রসায়ন ও উষ্ণতাই বুঝিয়ে দিয়েছে, তাঁদের ‘ব্যক্তিগত’ জোট আগেই হয়ে গিয়েছিল। রাহুল বলেওছেন এ দিন, ‘‘ইয়ে দিল কা অ্যালায়েন্স (জোট) হ্যায়, মিল কে জিতেঙ্গে।’’ শুনে মিটিমিটি হেসেছেন অখিলেশ। বলেছেন, ‘‘সাইকেলের দুই চাকা। তাতে ‘হাত’ পড়ায় বনবন করে প্রগতির দিকে দৌড়ব।’’ সেই শুনে রাহুল আবার যোগ করেছেন, ‘‘এই জোট গঙ্গা-যমুনার সঙ্গম, যার থেকে উন্নয়নের সরস্বতী বেরিয়ে আসবে।’’
সন্দেহ নেই, রাহুলের নজর ২০১৯। দিল্লির গদি। যে কারণে তিনি আজই বলে রেখেছেন, এই জোট লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। অখিলেশ অবশ্য এখনই রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী পদে সমর্থনের কথা বলেননি। আপাতত তাঁর লক্ষ্য লখনউয়ের তখতই। সেই ফারাকটা মাঝে মাঝে গোপন থাকেনি সাংবাদিক বৈঠকে। যেমন লোকসভার দিকে তাকিয়ে রাহুল আজ মায়াবতীর প্রতি তাঁর ‘ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা’র কথা অস্বীকার করেননি। এ-ও বলেন, বিজেপি-আরএসএসের সঙ্গে মায়াবতীকে তুলনা করা যায় না। তাতে খানিকটা অস্বস্তিতে প়ড়েছেন অখিলেশ। সামাল দিতে গিয়ে কিছুটা হাল্কা সুরেই বলেছেন, ‘‘এত বড় হাতিকে (মায়াবতীর দলের প্রতীক) কী করে জায়গা দিই?’’ এই মন্তব্য নিয়ে আবার যথেষ্ট সমালোচনার মুখেও পড়েছেন তিনি।
আবার একই ভাবে এত দিন সপা-র বিরুদ্ধে কথা বলে এখন কেন প্রশংসা, এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছেন রাহুল। শেষমেশ বলেছেন তিনি, ‘‘একটুআধটু খামতি থাকলেও অখিলেশের সদিচ্ছা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। আর অখিলেশ যে ভাল কাজ করছেন, সে তো আগেই বলেছি।’’ অখিলেশ পাশ থেকে জুড়ে দেন, ‘‘আমার কাজই আমার পরিচয়। সেটি সকলেই জানেন।’’
তা হলে দু’টো আলাদা দলের আলাদা দৃষ্টিকোণ কি মুছে গেল? রাহুলের জবাব, ‘‘আমাদের মধ্যে যেমন অনেক মিল আছে, তেমনই ফারাকও আছে। আমরা ফারাককে দূরে রেখে একজোট হয়েছি। আসল কথা হল, বিজেপি-আরএসএসকে রুখতে আমরা একজোট।’’ রাতে মুলায়ম ফের জোটের বিরুদ্ধে মুখ খুলে খানিকটা তাল কেটেছেন যদিও।
অতএব? ফারাক আছে, মিলও আছে। আপাতত মিলের সুরটাই বেশি বাজছে। কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘এই প্রথম দুই তরুণ নেতার উদ্যোগে জোট। রাজনৈতিক পরিপক্কতা পুরোদস্তুর আশা করাও মুশকিল। তবুও ব্যক্তিগত সম্পর্কের জোরেই তাঁরা একে অপরকে সামলে নিয়েছেন।’’ এর পর দুই নেতা জিপিও থেকে ঘণ্টাঘর পর্যন্ত রোড-শো করলেন, সেখানে সংখ্যালঘুদের বসতি বেশি। মায়াবতীকে টেক্কা দিয়ে সেই ভোটকে মুঠোয় নিতে আগামী কয়েক দিন এ ভাবেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত চষে বেড়াবেন দু’জনে।