বিধানসভা ভোটে আসন সমঝোতার পথে অনেকটা এগিয়ে যাওয়ার পর এ বার উত্তরপ্রদেশে রাহুল গাঁধী-অখিলেশ যাদব যৌথ সভার তোড়জোড় শুরু করল কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টি।
কংগ্রেস সহ-সভাপতির সঙ্গে রাজ্য জুড়ে, বিশেষত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে যৌথ সভা করতে চান মুলায়ম-পুত্র। এ ক্ষেত্রে তাঁর প্রধান লক্ষ্য, বসপা নেত্রী মায়াবতীর ঝুলিতে সংখ্যালঘু ভোট যাওয়া আটকানো। ইতিমধ্যেই ৯৭ জন সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়েছেন মায়াবতী। অখিলেশ চাইছেন দলিত-নেত্রীর সেই ছক ঘেঁটে দিতে। আর রাহুলের নজর লোকসভায়। অখিলেশের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যে নিজের ভিত মজবুত করতে চান তিনি।
নরেন্দ্র মোদী-বিরোধী আন্দোলনের প্রধান মুখ হিসেবে ইতিমধ্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন রাহুল। বস্তুত, বিরোধীদের যে মঞ্চটিকে তিনি আরও জোরদার করতে চান, সেটিরই বিভিন্ন নেতানেত্রীকে ভোটের প্রচারে উত্তরপ্রদেশে আনার পরিকল্পনা রয়েছে অখিলেশের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, লালু প্রসাদদের নিয়ে যৌথ সভা করতে চান তিনি। এমনকী মুলায়মের আমন্ত্রণ সত্ত্বেও
এর আগে যে নীতীশ কুমার উত্তরপ্রদেশে যাননি, তাঁকেও এ বার রাজ্যে নিয়ে যেতে আগ্রহী অখিলেশ। সাবেক জনতা পরিবারের দুই সদস্য লালু ও নীতীশ কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিহারে হারিয়েছিলেন বিজেপিকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশেষ বিশেষ জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকার ভোট টানতে অনেকাংশেই এই আঞ্চলিক নেতানেত্রীদের পাশে চাইছেন অখিলেশ। আবার রাহুলকে পাশে পেলে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই মজবুত হবে অখিলেশের। মোদীর মতো অখিলেশও উত্তরপ্রদেশে নিজেকে ‘উন্নয়ন-পুরুষ’ হিসেবে মেলে ধরেছেন। রাহুলের মতো তাঁর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির কোনও কলঙ্ক নেই। দু’জনেই ধর্মনিরপেক্ষ মুখ। অখিলেশ মনে করছেন, রাহুলের সঙ্গে তিনি যৌথ সভা করলে সংখ্যালঘু ভোট অন্য দলের বাক্সে যাবে না তো বটেই। সেই সঙ্গে, সপা-য় ফাটল ধরিয়ে অমর সিংহদের দিয়ে বিজেপি যে খেলা খেলতে চেয়েছিল, তারও মোক্ষম জবাব দেওয়া হবে।
অখিলেশ আজ বলেছেন, ‘‘কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত। বিজেপিকে রুখে আমরা তিনশোর বেশি আসন পাব। বাবার সঙ্গেও আমার কোনও বিরোধ নেই। তিন-চার দিনের মধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করে আমরা প্রচার শুরু করে দেব।’’ তবে যৌথ সভা নিয়ে রাহুলের দলেই সামান্য মতান্তর রয়েছে। কংগ্রেসের অনেকে মনে করেন, কংগ্রেস এমনিতেই কম আসনে লড়ছে। আর রাহুল পুরোদস্তুর জাতীয় স্তরের নেতা। অখিলেশকে মুখ্যমন্ত্রী করার আবেদন জানিয়ে কেন তিনি যৌথ সভা করবেন? লোকসভা নির্বাচনে অখিলেশ কি একই ভাবে রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী পদে সমর্থন করবেন? এ বার জিতে এলে তিনি নিজেও যে সেই পদের দাবিদার হবেন না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? তবু দুই দলের নেতারাই বলছেন, এই বিষয়ে শেষ কথা বলবেন রাহুল এবং অখিলেশ। এ নিয়ে কোনও সংশয় নেই যে, রাহুলের আসল লক্ষ্য ২০১৯। কাজেই যৌথ সভা যদি হয়, তা হলে অখিলেশকে মুখ্যমন্ত্রী করার আবেদনই জানাবেন তিনি। তাই আগে যে শ’খানেক আসন চেয়েছিল কংগ্রেস, তাতে অনড় থাকার পক্ষপাতী নন রাহুল। সপা ৮০-৯০টি আসন কংগ্রেসকে ছাড়তে রাজি হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, বাকি আসনগুলিতে সপা-র প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। মুলায়ম যে তালিকা দিয়েছেন অখিলেশকে, সেখান থেকে যত জন সম্ভব প্রার্থীকে সামিলের চেষ্টা হচ্ছে। এমনকী শিবপাল লড়তে চাইলে তাঁকেও আসন ছাড়া যেতে পারে।
গত কাল কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেছিলেন, ‘‘আর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেসের জোটের ঘোষণা হয়ে যাবে। আজ তিনি বলেছেন, ‘‘সেই সময়সীমা আর একটু বাড়তেও পারে।’’ সমস্ত পরিকল্পনা তৈরি থাকলে এখনও জোট ঘোষণা হচ্ছে না কেন?
সপা সূত্র জানাচ্ছে, এখনও একটা জট রয়েছে অজিত সিংহের রাষ্ট্রীয় লোকদলকে নিয়ে। লোকদলের পুঁজি জাঠেরা। এর আগে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে জাঠেদেরই গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়েছিল। সংখ্যালঘু ভোটের কথা ভেবে তাই লোকদলের সঙ্গে জোট গড়তে নিমরাজি অখিলেশ। কিন্তু কংগ্রেস চায় লোকদলের সঙ্গে জোট। এই পরিস্থিতিতে অখিলেশের দলের প্রস্তাব, কংগ্রেস চাইলে তাদের কোটা থেকে লোকদলকে আসন ছেড়ে দিতে পারে। সপা সূত্র বলছে, এই বিষয়টির মীমাংসা হলেই জোট ঘোষণায় আর কোনও বাধা থাকবে না।
এবং তাতে কিছুটা হলেও ফাঁপরে পড়বে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশে দলীয় নেতাদের রেষারেষি আর জাতপাতের অঙ্ক সামলাতে গিয়ে এখনও কাউকে উত্তরপ্রদেশের মুখ হিসেবে তুলে ধরতে পারেননি সভাপতি অমিত শাহ। রাহুল-অখিলেশ হাত মেলালে দু’জনের সঙ্গে একা টক্কর দিতে হবে মোদীকে। ফলে চিন্তা রয়েই যাচ্ছে।