নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ, দ্রুত ঘর সাজাচ্ছেন অখিলেশ

ছবিটা আছে একই জায়গায়। লখনউয়ের বিক্রমাদিত্য মার্গ। সমাজবাদী পার্টির সদর দফতরে রাজ্য সভাপতির ঘরের দেওয়াল জুড়ে ‘নেতাজি’ মুলায়ম সিংহ যাদবের একটা ছবি। আগেও ছিল। গত অক্টোবরে ছেলে অখিলেশকে সরিয়ে এই পদে ভাই শিবপালকে বসিয়েছিলেন মুলায়ম।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩০
Share:

ছবিটা আছে একই জায়গায়।

Advertisement

লখনউয়ের বিক্রমাদিত্য মার্গ। সমাজবাদী পার্টির সদর দফতরে রাজ্য সভাপতির ঘরের দেওয়াল জুড়ে ‘নেতাজি’ মুলায়ম সিংহ যাদবের একটা ছবি। আগেও ছিল। গত অক্টোবরে ছেলে অখিলেশকে সরিয়ে এই পদে ভাই শিবপালকে বসিয়েছিলেন মুলায়ম। যাদব-কুলে সম্মুখ সমরের শুরু তখন থেকেই। যার জেরে সরকারি ভাবে না হলেও মুলায়মের হাতে গড়া সপা এখন দু’টুকরো। দলের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন নিয়ে মুলায়মকে জাতীয় সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে নিজে সেখানে বসেছেন অখিলেশ। আর দু’মাস আগে যাঁর কাছে রাজ্য সভাপতির পদ খুইয়েছিলেন, সেই কাকা শিবপালকে তাড়িয়ে বসিয়েছেন নিজের ঘনিষ্ঠ নরেশ উত্তম পটেলকে।

নরেশ উত্তমের ঘরের দেওয়াল জুড়ে ছবিটা এখনও আছে। কিন্তু মুলায়ম আসলে নেই! মুকুট পড়ে আছে, রাজা নেই! মুলায়মের সপা এখন অখিলেশের।

Advertisement

কুরুক্ষেত্রে আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে যুদ্ধে নারাজ অর্জুনকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াটাই কর্তব্য’। উত্তরপ্রদেশে যাদব-যুদ্ধে বাবা-কাকার বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে নেমে অখিলেশও বলছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই এটা। তিনি আসলে কাকা শিবপালের গুণ্ডাবাহিনীকে দল থেকে তাড়াতে চান। নরেশ উত্তমের ঘরে মুলায়মের ছবির সামনে বসেই অখিলেশ-শিবিরের যুব নেত্রী বিভা শুক্লর ব্যাখ্যা, ‘‘দল ক্ষমতায় থাকায় অনেক বেনোজল ঢুকেছিল। যাদের ভাবমূর্তি সাফ নয়, নানা মামলায় নাম জড়িয়ে আছে। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, তিনি দাগিদের প্রার্থী করবেন না। এই লড়াইটা তাই নীতির, আদর্শের।’’

সপা নেতারা বলছেন, অখিলেশ আসলে এক ঢিলে দুই পাখি মারছেন। বাপ-কাকার সঙ্গে যুদ্ধকে ‘নীতির লড়াই’ হিসেবে তুলে ধরে বোঝাতে চাইছেন, তিনি ক্ষমতা দখলের জন্য লড়ছেন না। আর শিবপালের গুণ্ডাবাহিনী দমনের কথা বলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যর্থতা ঢাকতে চাইছেন। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি, পরিশ্রম, উন্নয়নের চেষ্টার জন্য উত্তরপ্রদেশের জনতা অখিলেশকে পছন্দ করলেও তাঁর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, পাঁচ বছর মুখ্যমন্ত্রী পদে থেকেও গুণ্ডাবাহিনীকে জব্দ করতে পারেননি। কারণ সেই বাহিনীর রাশ শিবপালের হাতে। এ বার শিবপালের বিরুদ্ধেই জেহাদ ঘোষণা করে সেই গুণ্ডাবাহিনীকে জব্দ করতে চান বলে বার্তা দিচ্ছেন অখিলেশ। পাশাপাশি অমর সিংহকেও দল থেকে তাড়ানোর সিদ্ধান্তে অনড় তিনি।

দল দু’টুকরো হওয়ার মুখে। তবে আজম খান, অম্বিকা চৌধরি, ধর্মেন্দ্র যাদবের মতো নেতারা এখনও সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিবপালের পাশাপাশি তাঁরাও মুলায়মের সঙ্গে বৈঠক করছেন। লখনউয়ে মুলায়মের সঙ্গে বৈঠকের পর অম্বিকা চৌধরির দাবি, ‘‘সমাজবাদী পার্টি অটুট রয়েছে, থাকবেও।’’ দলের ভাঙন ঠেকাতে বাবার সঙ্গে কথা বলেছেন অখিলেশও।

রফাসূত্র খুঁজতে আলোচনায় বসলেও ভোট প্রস্তুতি দ্রুত সেরে ফেলেছেন অখিলেশ। তাঁর ঘনিষ্ঠ শিবিরের খবর, মূলত পাঁচ জনের মধ্যে ভোট সংক্রান্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রামগোপালকে রণনীতি তৈরির এবং দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে কিরণময় নন্দকে বিভিন্ন দল ও রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন অন্য এক কাকার ছেলে ধর্মেন্দ্র যাদব। ইনি জেলা, মহকুমা ধরে ধরে অখিলেশ-অনুগামীদের তালিকা তৈরি করছেন। রাজ্যসভা সাংসদ নরেশ অগ্রবালের হাতে নির্বাচনী তহবিল তৈরির কাজ। আর অখিলেশের স্ত্রী ডিম্পল দেখবেন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার।

রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ই হবে যে প্রচারের প্রধান লক্ষ্য।

পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি আর গুণ্ডা হটানোর কথা বলে সপা-য় নিজের ভিত আরও শক্ত করেছেন অখিলেশ। তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা তথা আর এক কাকা রামগোপাল যাদবের কথায়, ‘‘দলের ২২৯ জন বিধায়কের মধ্যে ২১২ জন, ২৪ জন সাংসদের মধ্যে ১৫ জন আর ৬৮ জন বিধান পারিষদের মধ্যে ৫৬ জন হলফনামা দিয়ে অখিলেশকে সমর্থন জানিয়েছেন। ১ জানুয়ারির যে অধিবেশনে অখিলেশ জাতীয় সভাপতি মনোনীত হয়েছেন, তার ৫ হাজার সদস্য সই করে সমর্থন জানিয়েছেন। সাইকেল প্রতীকের দাবিতে সব কিছু আমরা নির্বাচন কমিশনকে জমা দেব।’’

কমিশনকে জমা দেওয়ার আগে আজ যাবতীয় হলফনামা ও সই-এর নথি দিল্লির অশোক রোডে মুলায়মের বাসভবনে পাঠিয়ে দেন অখিলেশ-রামগোপালরা। মুলায়ম তখন লখনউয়ে নিজের অনুগামীদের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন। অখিলেশ-শিবিরের হয়ে আইনজীবী দেবেন্দ্র উপাধ্যায় মুলায়মের দিল্লির বাড়িতে হাজির হলেও কোনও কর্মী ওই সব নথি নিতে রাজি হননি। তবে তাতে না দমে রামগোপাল এই সব নথি আজই কমিশনে গিয়ে জমা দিয়ে এসেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন