চিন প্রশ্নে প্রবল চাপের মুখে অবশেষে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে ম্যারাথন বৈঠক করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। বৈঠকের উদ্দেশ্য প্রাথমিক ভাবে সফল। কংগ্রেস থেকে তৃণমূল— ‘জাতীয় নিরাপত্তার’ প্রশ্নে প্রত্যেক বিরোধী দলই সরকারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে। তবে কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, দার্জিলিং সমস্যার গোড়া থেকেই রাজ্যের তরফে চিনের ব্যাপারে কেন্দ্রকে সতর্ক করার চেষ্টা হয়েছে। দিল্লি তা কানেই তোলেনি। বৈঠকের পরে বিরোধীদের পরামর্শ, এখন যুদ্ধংদেহী ভূমিকায় নয়, কূটনৈতিক পথে আলোচনার মাধ্যমেই এই সঙ্কট কমাতে হবে। সূত্রের বক্তব্য, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের এই পরামর্শ না মেনে উপায় নেই ‘একলা চলায়’ অভ্যস্ত নরেন্দ্র মোদীর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সর্বদলীয় ঐকমত্যকে কাজে লাগিয়ে চিনের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর একটা পরিবেশও তৈরি করে নিল কেন্দ্র। আলোচনা শেষ হওয়ার পরেই বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, ‘ভারত এবং চিনের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ যে গুরুত্বপূর্ণ, সে ব্যাপারে সব দলই একমত হয়েছে আজ। চিনের সঙ্গে মতপার্থক্য যাতে বিবাদের জায়গায় না পৌঁছয়, তা নিয়ে আস্থানা সম্মেলনে নেওয়া ভারতের অবস্থানকেও সবাই সমর্থন করেছেন।’’
আজ আকবর রোডে রাজনাথ সিংহের বাসভবনে উপস্থিত ছিলেন অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ, বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর, সদ্যনিযুক্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব রাজীব গউবা এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। বিরোধী এবং সরকারপক্ষ মিলিয়ে ছিলেন ১৯ জন সাংসদ। বৈঠকের পরে কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি যে, তোমরাও রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে বিষয়টিকে দেখ।’’ সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, ‘‘আলোচনার মাধ্যমে চিন সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’’
চিন নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থান বদল অনেক দেরিতে হয়েছে বলেই মত মমতার। তিনি বলেন, ‘‘দার্জিলিংকে কেন্দ্র করে সীমান্তের ও-পারের পরিস্থিতি নিয়ে বহু বার রাজনাথ সিংহের সঙ্গে কথা বলেছি। চিকেন নেক (ভারত-নেপাল-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া শিলিগুড়ি করিডোর) নিয়ে যখন কথা হচ্ছে, তখন কেন্দ্রের মনে রাখা উচিত, এটা নিয়ে আমি অনেক দিন আগেই সতর্ক করেছি। তখন কেন্দ্র আমাদের কথা শুনে বাহিনী পাঠালে দার্জিলিংকে আগেই শান্ত করে ফেলা যেত। কেন্দ্রের বোঝা উচিত, দার্জিলিং অশান্ত থাকলে সীমান্তে তার প্রভাব পড়ে।’’