Six accused persons

সংশয় থাকায় পেহলু খুনে ছ’জনই বেকসুর  

২০১৭-র ১ এপ্রিল। বছর ৫৫-র দুধ ব্যবসায়ী পেহলু ও তাঁর দুই ছেলে জয়পুরের এক মেলা থেকে গরু কিনে হরিয়ানায় বাড়িতে ফিরছিলেন। জয়পুর-দিল্লি জাতীয় সড়কে তাঁদের আটকায় গোরক্ষকেরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

অলওয়র শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৯ ০৪:০১
Share:

রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয় পেহলু খানকে। —ফাইল চিত্র।

ভিডিয়ো দেখে শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ। এক প্রৌঢ়কে পিটিয়ে মারছে কয়েক জন। দেশ জুড়ে দাবি উঠছিল, বিচার চাই। সেই ঘটনায় বিচারের পরে রায় বেরোল আজ। অলওয়রের নিম্ন আদালত জানিয়ে দিল, পেহলু খান হত্যায় অভিযুক্ত ছ’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তাই সন্দেহের অবকাশে ওই ছ’জনকে বেকসুর মুক্তি দিয়েছে ওই আদালত।

Advertisement

২০১৭-র ১ এপ্রিল। বছর ৫৫-র দুধ ব্যবসায়ী পেহলু ও তাঁর দুই ছেলে জয়পুরের এক মেলা থেকে গরু কিনে হরিয়ানায় বাড়িতে ফিরছিলেন। জয়পুর-দিল্লি জাতীয় সড়কে তাঁদের আটকায় গোরক্ষকেরা। বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁদের। হাসপাতালে তিন দিন পরে মারা যান পেহলু। গরু পাচারের অভিযোগে মামলা দায়ের হয় পেহলু দুই ছেলের বিরুদ্ধে।

গোরক্ষার নামে গণপিটুনির ওই ভিডিয়ো গো-রক্ষকদেরই কেউ তুলে রেখেছিল। ঘাড় ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া, তাঁকে ছুড়ে ফেলার ওই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ, সংখ্যালঘু মনে আতঙ্ক ছড়াতে। ওই ভিডিয়োর সূত্র ধরেই ন’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিন জন জামিন পায় নাবালক হওয়ায়। কিন্তু সকলকেই ছাড় দেয় রাজস্থান পুলিশ। এতে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হওয়ায় পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। মাঝে একটি সংবাদ চ্যানেলের গোপন ক্যামেরা অভিযানে দেখা যায়, অভিযুক্তদের অন্যতম, বছর উনিশের বিপিন যাদব গর্ব করে বলছে, পেহলুকে পিটিয়ে মারার কাজে উত্তেজিত জনতাকে সে কী ভাবে ‘উদ্বুদ্ধ’ করেছিল। দিয়েছিল ‘নেতৃত্ব’। বিষয়টি জনসমক্ষে আসার পরে বিপিনের জামিনের আবেদন বাতিলের আর্জি জানায় রাজস্থান পুলিশ। সেই আর্জি খারিজ হয়।

Advertisement

অতিরিক্ত জেলা বিচারক সরিতা স্বামীর এজলাসে, মামলাটির শুনানি শেষ হয়েছিল গত ৭ অগস্ট। তবে রায়দান বুধবার পর্যন্ত স্থগিত রাখেন তিনি। আজ ‘সন্দেহের অবকাশে’ অভিযোগ থেকে বিপিন যাদব, রবীন্দ্র কুমার, কালুরাম, দয়ানন্দ, যোগেশ কুমার ও ভীম রাঠিকে মুক্তি দিলেন বিচারক সরিতা স্বামী। সরকারি আইনজীবী যোগেন্দ্র খটানা বলেছেন, ‘‘রায়ের কপি পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি। সেটি পেলে, পড়ে দেখে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’’ এই মামলার তিন নাবালক অভিযুক্তের বিচার চলছে জুভেনাইল কোর্টে।

ভিডিয়োয় সব দেখা গেল, তবু কেন অপরাধ প্রমাণিত হল না?

অভিযুক্তদের আইনজীবী দাবি করেছিলেন, ওই ভিডিয়ো থেকে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা সম্ভব নয়। অলওয়রের আদালতও জানিয়ে দেয়, ওই ভিডিয়ো প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ যে-মোবাইলে সেটি তোলা হয়েছে, তা উদ্ধার হয়নি। ওই ভিডিয়ো তাই প্রমাণ হিসেবে পরীক্ষাই করা হয়নি। এ ছাড়া, ফোটোগ্রাফ যা পেশ হয়েছে তার সত্যতা প্রমাণ হয়নি। ঠিকমতো রেকর্ড করা হয়নি মৃত্যুকালীন জবানবন্দিও। অভিযুক্তদের আইনজীবী হুকুমচাঁদ শর্মা জানান, পেহলু খান তাঁর প্রাথমিক জবাবন্দিতে কোনও অভিযুক্তের নাম বলেননি। এতে সুবিধা হয়ে যায় অভিযুক্তদের। পরের জবানবন্দিতে অবশ্য ছ’জনের নাম বলেছিলেন পেহলু। মামলা মোড় নেয় সরকারি চিকিৎসকের সাক্ষ্যে। ময়না-তদন্তে দেহে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন মিললেও সরকারি চিকিৎসক দাবি করেন, মৃত্যু হয়েছে হৃদ্‌রোগে। কার্যত হত্যার অভিযোগ নিয়েই ধন্দ তৈরি হয় এতে। হুকুমচাঁদ বলেন, ‘‘মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছিল আদালতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন