রাহুলের সভায় নেই লালু-নীতীশ

লালু প্রসাদ-নীতীশ কুমারকে ছাড়াই মহাজোটের সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র আক্রমণ করলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। বাবা সাহেব অম্বেডকরের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সমরসতা সভা’-র আয়োজন করেছিল কংগ্রেস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পটনা শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৪
Share:

বিহারে মহাজোটের সভায় আগে যাননি রাহুল। রামনগরে তাঁর সভায় আজ ছিলেন না লালু-নীতীশও। তবে লালুর প্রতিনিধি হিসেবে হাজির ছিলেন তাঁর ছেলে তেজস্বী। ছবি: পিটিআই।

লালু প্রসাদ-নীতীশ কুমারকে ছাড়াই মহাজোটের সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র আক্রমণ করলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী।

Advertisement

বাবা সাহেব অম্বেডকরের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সমরসতা সভা’-র আয়োজন করেছিল কংগ্রেস। প্রথম থেকেই সেই সভায় হাজির থাকবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ। ছেলে তেজস্বী যাদবকে পাঠাবেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। তা নিয়ে কিছুটা হলেও ক্ষুব্ধ ছিল কংগ্রেস। দলের রাজ্য কমিটির সভাপতি অশোক চৌধুরি-সহ নেতারা বার কয়েক দেখাও করেন লালুর সঙ্গে। তাতে বরফ গলেনি। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার প্রথমে হাজির থাকবেন বলে জানালেও পরে ‘নির্বাচনী রণনীতি’ তৈরির কাজের জন্য সভায় হাজির থাকেননি। তবে সকালে পটনা বিমানবন্দরে হাজির থেকে রাহুল গাঁধীকে স্বাগত জানান। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে দু’জনে একান্তে কথাও বলেন। সেখান থেকে রাহুল হেলিকপ্টারে চম্পারণের দিকে উড়ে যান। সভায় জেডিইউ-র তরফে সাধারণ সম্পাদক কে সি ত্যাগীকে পাঠানো হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফেরার পরে তৎকালীন কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বিহারের পিছিয়ে পড়া চম্পারণ থেকে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেছিলেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী। ১৯১৭ সালের এপ্রিল মাসের চম্পারণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন থেকেই দেশের রাজনীতিতে তাঁর আত্মপ্রকাশ বলেই মনে করেন ঐতিহাসিকেরা। সেই চম্পারণের রামনগরকেই নির্বাচনী প্রচারের সভার জন্য বেছে নিয়েছিলেন রাহুল। তাছাড়াও রামনগরের বাসিন্দা থারু আদিবাসীরা দীর্ঘ দিন ধরেই কংগ্রেসের ভোটার। গত নির্বাচনে তাঁদের একটা অংশ বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন বলে ধারণা কংগ্রেসের। সে দিক থেকেও কংগ্রেসের কাছে রামনগরের গুরুত্ব রয়েছে। গত বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনে একা লড়েও কংগ্রেস এই এলাকায় দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে। এখন হারানো ভোটব্যাঙ্ক উদ্ধারে সক্রিয় হয়েছেন রাহুল। সে কারণেই এ দিন সভা শেষে থারু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সভায় এয়ারগান নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করায় এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।

Advertisement

আজ সভায় নরেন্দ্র মোদী সরকারের কড়া সমালোচনা করেন রাহুল। কেন্দ্রে ‘সুট বুটের সরকার’ চলছে বলার পরে প্রধানমন্ত্রীকে ‘ফেকু’ বলে সম্বোধন করেন তিনি। কেন্দ্র বিহারের জমি গুজরাতের ব্যবসায়ীদের দিয়ে দিতে চাইছে বলেও অভিযোগ করেন রাহুল।

বিহারের এই এলাকাকে কংগ্রেসের দুর্গ বলেই মনে করা হয়। দলের দাবি, এ দিন সভায় ভাল ভিড়ও হয়েছিল। রাহুল ছাড়াও আজ নজর কেড়েছেন লালু প্রসাদের ছেলে তেজস্বী। আগামী দিনে যে বিহারে দলের দায়িত্ব যে তিনিই সামলাবেন তা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন লালু-পুত্র।

পটনায় একসঙ্গে সভা করেছিলেন সনিয়া, নীতীশ ও লালু। তার পরে আজ রাহুলের সভায় জোটের দুই শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতি নিয়ে নানা ব্যাখ্যা শোনা যাচ্ছে পটনা ও দিল্লির রাজনৈতিক শিবিরে। রাজনীতিকদের একাংশের মতে, রাহুলের সঙ্গে নীতীশের কিছুটা সদ্ভাব থাকলেও লালুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে সমস্যা রয়েছে। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে জনপ্রতিনিধির পদ খোয়ান লালু। মূলত তাঁকে রক্ষা করতেই ইউপিএ সরকার এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রভাব কাটাতে অর্ডিন্যান্স আনার কথা ভেবেছিল বলে মনে করা হয়। হঠাৎই সাংবাদিক বৈঠকে হাজির হয়ে সেই অর্ডিন্যান্সকে খারিজ করে দেন রাহুল। ফলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বেকায়দায় পড়েন। আবার রাহুল-লালুর সম্পর্কেও চিড় ধরে বলে মনে করেন রাজনীতিকেরা। কংগ্রেস সূত্রের খবর, লালুর সঙ্গে জোট করতে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন না রাহুল। সনিয়ার হস্তক্ষেপের ফলেই এই জোটে রাজি হয়েছে কংগ্রেস।

প্রার্থী বাছাই নিয়েও বিজেপি-বিরোধী মহাজোটের সমস্যা কাটেনি। ফলে, আজ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার কথাও বলেও পিছিয়ে এসেছেন মহাজোটের নেতারা। জেডিইউ রাজ্য সভাপতি বশিষ্ঠনারায়ণ সিংহ শুধু কোন দল কোন আসনে লড়বে তা ঘোষণা করেন। ১০১টি আসনে জেডিইউ, ১০১টি আসনে আরজেডি এবং ৪১টি আসনে কংগ্রেস লড়াই করবে। প্রার্থীদের নাম এখনই ঘোষণা করা হচ্ছে না বলে জানান তিনি। বশিষ্ঠের কথায়, ‘‘আগামী দু’দিনে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’ টিকিট পাওয়ার সম্ভবনা না থাকায় নীতীশ কুমার এবং লালু প্রসাদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কয়েক জন বিধায়ক। পাশাপাশি আরজেডি থেকে বহিষ্কৃত সাংসদ রাজীব রঞ্জন ওরফে পাপ্পু যাদব জন অধিকার পার্টি তৈরি করেছেন। সমাজবাদী পার্টি এবং এনসিপির সঙ্গে জোট করে তাঁরা নির্বাচনে লড়াই করবেন বলে জানিয়েছেন পাপ্পু। জোটে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নাগমণির দলকেও নেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন