অলোক বর্মা
নরেন্দ্র মোদীকে অস্বস্তিতে ফেলে অলোক বর্মাকে সিবিআইয়ের অধিকর্তার গদিতে ফেরাল সুপ্রিম কোর্ট।
২৩ অক্টোবর মধ্যরাতে মোদী সরকার সিবিআই অধিকর্তা অলোক বর্মা ও বিশেষ অধিকর্তা রাকেশ আস্থানাকে ছুটিতে পাঠায়। সরকারের যুক্তি ছিল, দুই শীর্ষ কর্তার কলহ প্রকাশ্যে আসার ফলেই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা অভিযোগ তোলেন, বর্মা রাফাল-চুক্তি নিয়ে তদন্ত শুরু করতে পারেন ভেবেই তাঁকে ছুটিতে পাঠানো হয়। কেড়ে নেওয়া হয় যাবতীয় ক্ষমতা। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে। বর্মা নিজে তাঁকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেন।
আজ প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চ বর্মাকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়েছে। খারিজ হয়েছে যুগ্ম-অধিকর্তা নাগেশ্বর রাওকে ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা হিসেবে নিয়োগ করার সিদ্ধান্তও। সিবিআইয়ের উপরে হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে এ দিনের রায়ে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘সিবিআইয়ের অধিকর্তাকে স্বাধীনতা ও সততার প্রতীক হয়ে উঠতে হবে। সেজন্য তাঁকে সব ধরনের হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন।’’ সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ লোকসভা ভোটের আগে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকেই কাঠগড়ায় তুলল বলে বিরোধীদের দাবি। কারণ, সিবিআই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীনেই কাজ করে। বর্মাকে ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীনস্থ কর্মিবর্গ দফতর দিয়েছিল। কংগ্রেসের যুক্তি, নরেন্দ্র মোদীই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যাঁর বেআইনি সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হল। মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও মানছেন, ‘‘আদালত আপাতভাবে সিবিআই অধিকর্তার রক্ষাকবচকেই আরও মজবুত করেছে। আদালতের নির্দেশ পালন করা হবে।’’
প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি এস কে কল ও বিচারপতি কে এম জোসেফের বেঞ্চের যুক্তি, দিল্লি স্পেশ্যাল পুলিশ এস্টাব্লিশমেন্ট আইন অনুযায়ী সরকার সিবিআই অধিকর্তাকে এ ভাবে ছুটিতে পাঠাতে বা পদ থেকে সরাতে পারে না। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও লোকসভার বিরোধী দলনেতাকে নিয়ে গঠিত বাছাই কমিটির অনুমতি নিতে হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে ওই কমিটির বৈঠক ডেকে বর্মাকে নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের রায় অনুযায়ী, বর্মা গদিতে ফিরলেও তিনি আপাতত ‘বড় নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিতে পারবেন না। নতুন কোনও বিষয়ে উদ্যোগীও হতে পারবেন না। তবে রুটিন কাজ করতে কোনও বাধা নেই। বর্মাকে প্রয়োজনে সরানো বা তাঁর ক্ষমতা ফেরানোর সিদ্ধান্ত কমিটিই নেবে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, ওই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী ও লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের অবস্থান কী হবে, তা আঁচ করা যায়। ফলে সবটাই নির্ভর করছে প্রধান বিচারপতির উপরে।
ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা এন নাগেশ্বর রাও দায়িত্ব নিয়েই বর্মার আস্থাভাজন অফিসারদের বদলি করেছিলেন। বিশেষত যে সব অফিসারেরা রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করছিলেন তাঁদের বদলি করা হয়েছিল। বর্মা তাঁর আস্থাভাজন অফিসারদের ফিরিয়ে এনে আস্থানার বিরুদ্ধে তদন্ত জোরদার করতে পারেন। ৩১ জানুয়ারি বর্মার অবসরের দিন। সিবিআই অফিসারদের মতে, অধিকর্তা চাইলে ২২ দিনেই সব ওলটপালট করে দিতে পারেন। বর্মা অবশ্য সাবধানে পা ফেলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। সকালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিলেও, সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি দফতরমুখো হননি।