Coronavirus

কোভিড-ডেঙ্গি জুটি নিয়ে চিন্তা বাড়ছে কেন্দ্রের

গোটা দেশে সবে ডেঙ্গির মরসুম শুরু হয়েছে। আগামী অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ডেঙ্গির সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছনোর কথা।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:২৭
Share:

—ফাইল চিত্র।

করোনার ছোঁয়ায় ডেঙ্গি আরও বিপজ্জনক চেহারা নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ডেঙ্গির যে ভাইরাস শরীরে পাঁচ দিন কার্যকর থাকত, ডেঙ্গি-আক্রান্ত করোনা রোগীর শরীরে সেই ভাইরাসই দ্বিগুণ সময় সক্রিয় থাকছে। গোটা দেশে সবে ডেঙ্গির মরসুম শুরু হয়েছে। আগামী অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ডেঙ্গির সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছনোর কথা। তাই কোনও ব্যক্তি একসঙ্গে দু’টি রোগেই আক্রান্ত হলে কী পদ্ধতিতে চিকিৎসা হবে, তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় রাজধানীর এমসের চিকিৎসকেরা। সূত্রের মতে, এ নিয়ে নির্দিষ্ট চিকিৎসার প্রোটোকল খুব তাড়াতাড়ি জানানোর কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

Advertisement

স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একই ব্যক্তির একই সঙ্গে কোভিড ও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে তাদের কাছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, কে ডেঙ্গি আর কে কোভিডে সংক্রমিত, তা চিহ্নিত করা। কারণ, দুই রোগের উপসর্গগুলি প্রাথমিক পর্বে অনেকটাই এক হওয়ায় অন্তত লক্ষণ দেখে তা বোঝা মুশকিল বলে জানান চিকিৎসকেরা। এমসের মেডিসিনবিভাগের চিকিৎসক-অধ্যাপক আশুতোষ বিশ্বাসের কথায়, ‘‘জ্বর হলেই করোনা পরীক্ষার সঙ্গে রক্ত পরীক্ষা করে প্লেটলেট সংখ্যাও একেবারে দেখে নেওয়া প্রয়োজন। মাথায় রাখা দরকার, দু’টি রোগেরই কোনও নির্দিষ্ট পরীক্ষা-পদ্ধতি নেই। তাই রোগীকে সর্বক্ষণ নজরে রাখার প্রয়োজন রয়েছে।’’

কোন ব্যক্তি যৌথ রোগের আক্রমণের শিকার হলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে নানবিধ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে চিকিৎসকদের। তার মধ্যে অন্যতম হল চিকিৎসাপদ্ধতি। সাধারণত ডেঙ্গি রোগীকে ‘আইভি ফ্লুইড’ অথবা স্যালাইন দেওয়া হয়ে থাকে। এখন সেই ব্যক্তির করোনাও থাকলে স্যালাইন দেওয়ায় ফুসফুসে জল জমে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আশুতোষবাবুর মতে, ‘‘এর কারণ, করোনাভাইরাসের অন্যতম আক্রমণস্থল হল ফুসফুস। ফলে যার ডেঙ্গি ও কোভিড দুই-ই যাঁদের রয়েছে, তাঁদের শরীরে পরিস্থিতি বুঝে ফ্লুইড চালাতে হবে।’’ গত ছ’মাসের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে চিকিৎসকেরা দেখেছেন, করোনা সংক্রমিতদের শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাই এমন রোগীদের রক্ত পাতলা রাখতে ‘হেপারিন’ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু ডেঙ্গি রোগীদের ক্ষেত্রে ওই ওষুধ প্রয়োগে হিতে বিপরীত হতে পারে বলেই মত আশুতোষবাবুর। তিনি বলেন, ‘‘হেপারিনের ব্যবহার ডেঙ্গি রোগীদের শরীরে রক্তপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। যা প্রাণঘাতী হতে পারে।’’ এ ছাড়া এমসের চিকিৎসকেরা দেখেছেন, মানবশরীরে ডেঙ্গি ভাইরাসের আয়ুষ্কাল পাঁচ থেকে ছ’দিন হলেও, করোনা সংক্রমিত ডেঙ্গি রোগীদের শরীরে প্রায় দশ দিন পরেও ওই ভাইরাস সক্রিয় থাকছে। যা ওই রোগীর মাধ্যমে ডেঙ্গি ছড়ানোর সম্ভাবনা কার্যত দ্বিগুণ করে দিয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: স্ত্রী করোনা পজিটিভ হয়ে আইডিতে, কোয়রান্টিনে সূর্যকান্ত মিশ্র

চিকিৎসকদের দুশ্চিন্তার আরওএকটি কারণ, অধিকাংশ হাসপাতাল এখন করোনার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে এখন থেকেই পরিকাঠামোগত প্রস্তুতি না-নিলে আগামী দিনে হাসপাতালে ডেঙ্গি রোগীদের জায়গা দিতে সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ডেঙ্গি ও করোনার যৌথ আক্রমণ নিয়ে চিন্তিত কেন্দ্র। দুই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসাপদ্ধতি বা প্রোটোকল দ্রুত ঠিক করে তা জানানো হবে।

আরও পড়ুন: ৫০ লক্ষে ভারত, তবু লকডাউনের গুণগান​

করোনার সংক্রমণে ডেঙ্গি ভাইরাসের চরিত্রগত পরিবর্তন হচ্ছে কি না জানতে আরও গবেষণার প্রয়োজনআছে বলেই মনে করছেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি-র গবেষক উপাসনা রায়। তিনি বলেন, ‘‘করোনাভাইরাস মানবশরীরে প্রবেশ করার পরে কোনও ‘কেমিক্যাল মিডিয়েটর’-এর নিঃসরণ বা ঘাটতি কি ডেঙ্গির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করছে? নাকি করোনা সংক্রমিতের দেহে কেবল ডেঙ্গি নয়, অন্য রোগের বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতাও প্রভাবিত হচ্ছে? এই বিষয়টি দেখতে হবে গবেষকদের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন