অমিত শাহ
জম্মুর অনুন্নয়নের দায় কার? মেহবুবা সরকারের। জম্মুতে এইমস-সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি অধিগ্রহণ না হওয়ার দায় কার? মেহবুবা সরকারের। জঙ্গি হামলা বেড়ে যাওয়া, সাংবাদিক শুজাত বুখারির হত্যার জন্য দায়ী কে? মেহবুবা সরকার।
জোট ভেঙেছে সদ্য। তারপরে আজই ছিল অমিত শাহের প্রথম জম্মু সফর। আর তাতেই উপত্যকার বিরুদ্ধে জম্মুর ভাবাবেগকে উস্কে দিতে বঞ্চনাকে হাতিয়ার করলেন বিজেপি সভাপতি। তিনি বললেন, ‘‘গত চার বছরে জম্মুর উন্নয়ন থমকে যাওয়ার জন্য দায়ী হল একমাত্র পিডিপি সরকার।’’ কিন্তু আজ অমিত শাহ যেটা বললেন না সেটা হল, সেই মেহবুবা সরকারের শরিক ছিল বিজেপি। ফলে জম্মু-লাদাখ অঞ্চলের যে বঞ্চনার ইতিহাস আজ তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর অর্ধেক দায়িত্ব বিজেপির উপরেও বর্তায়।
জম্মু-কাশ্মীরে মেহবুবা মুফতির সঙ্গে জোট ভাঙতেই জাতীয়তাবাদ আর হিন্দুত্বের হাওয়া তুলতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিজেপি। আজ জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুদিন উপলক্ষে জম্মু সফরে যান অমিত শাহ। লক্ষ্যই ছিল তাঁর সভাকে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদের ঝড় তুলে জম্মুতে বিজেপি- বিরোধিতার হাওয়া রোখা। কারণ কাশ্মীরে মেহবুবার সঙ্গে জোট করার পর থেকেই ক্রমশ নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্কে ধস নামছিল বিজেপির। উদ্বেগ বাড়ছিল সঙ্ঘ পরিবারের অভ্যন্তরেও। সঙ্ঘ নেতারাও বুঝতে পারছিলেন, লোকসভা ভোট পর্যন্ত ওই জোট চালু থাকলে জম্মু থেকে বিজেপির আসন জেতা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। ফলে জোট ছাড়ার চাপ বাড়ছিল বিজেপির উপরে।
ফলে এত দিন রাম মাধবের মতো নেতারা রেখেঢেকে মেহবুবাকে আক্রমণ করলেও আজ হাওয়া ঘোরাতে মেহবুবা সরকারকে চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণে নামেন অমিত শাহ। লক্ষ্য পিডিপি সরকারের ঘাড়েই সব দোষ চাপিয়ে জম্মুর মানুষের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়া। আর তাই উপত্যকার সঙ্গে জম্মুর ভারসাম্যের উন্নয়নে ভারসাম্যের অভাব নিয়ে অভিযোগ তুলে অমিত শাহ বলেন, ‘‘জম্মু স্মার্ট শহর হয়নি। কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের ঘোষণা হয়েছে, কিন্তু জমি অধিগ্রহণ হয়নি। কেন্দ্রীয় প্যাকেজের টাকা উপত্যকায় খরচ হয়েছে। জম্মু-লাদাখে হয়নি।’’
উপত্যকার বিরুদ্ধে স্বর চড়ানোর পাশাপাশি রাহুল গাঁধীকেও আক্রমণ শানান অমিত শাহ। সম্প্রতি কাশ্মীরের কংগ্রেস নেতা সইফুদ্দিন সোজ ও গুলাম নবি আজাদ কাশ্মীর প্রশ্নে যে মন্তব্য করেছিলেন তাকে সমর্থন করে লস্করের মতো জঙ্গি সংগঠনও। অমিত শাহের কথায়, ‘‘লস্কর নেতারা ও গুলাম নবি কী ভাবে এক সুরে কথা বলেন তা দেশবাসী জানতে চান। এঁদের মধ্যে কী সম্পর্ক রয়েছে। রাহুল গাঁধীর উচিত ওই নেতাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া এবং দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া।’’
সরব হয়েছে কংগ্রেসও। দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘চার বছর ক্ষমতায় থেকে ভোটের আগে কৌশলগত বিচ্ছেদ করে রাজ্যকে আরও সর্বনাশের পথে ঠেলে দিয়েছে বিজেপি। রাজ্যের মানুষকে মিথ্যা প্যাকেজের আশা দেখানো হয়েছে। তাতে উন্নয়ন তো হয়নি, উল্টে সন্ত্রাস বেড়েছে। মোদী জমানায় এক কাশ্মীরেই ১৬টি বড় হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। যা আগে কখনও হয়নি।’’