গোপন বৈঠকে উত্তরপ্রদেশের রণনীতি তৈরি অমিতের, নেই বরুণ

বরুণ গাঁধীকে বাদ দিয়েই উত্তরপ্রদেশের রণনীতির ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে ফেললেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। গতকাল ইলাহাবাদে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক শেষ হয়ে যাওয়ার পর ত্রিবেণীর তীরে এক বিশাল জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৬ ০০:০৩
Share:

বরুণ গাঁধীকে বাদ দিয়েই উত্তরপ্রদেশের রণনীতির ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে ফেললেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।

Advertisement

গতকাল ইলাহাবাদে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক শেষ হয়ে যাওয়ার পর ত্রিবেণীর তীরে এক বিশাল জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দিল্লির বাইরে কর্মসমিতির বৈঠক হলে সবশেষে এমন একটি জনসভা হয়েই থাকে। কিন্তু বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ সেখানেই কর্মসূচিতে ইতি টানেননি। বরং প্রধানমন্ত্রী ইলাহাবাদ ছাড়ার পর উত্তরপ্রদেশের নেতাদের নিয়ে রাত পর্যন্ত এক গোপন বৈঠক করেন তিনি। সেখানে সে রাজ্যের সব সাংসদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু বরুণ গাঁধী সেই বৈঠকে ছিলেন না। বরুণকে বাদ দিয়েই অমিত শাহ উত্তরপ্রদেশের ব্লু-প্রিন্ট রচনা করে সব নেতাকে জানিয়ে দেন।

দলের এক সূত্রের অবশ্য দাবি, উত্তরপ্রদেশের সাংসদ হওয়ার সুবাদে এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বরুণকেও। কিন্তু ‘পারিবারিক’ কারণ দেখিয়ে সেই বৈঠকে যাননি বরুণ। বরুণ যে এই বৈঠকে যোগ দেবেন না, সেটি আগেভাগে আঁচ করেছিলেন দলের অনেক নেতাও। অমিত শাহের এই গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন এক নেতার কথায়, কর্মসমিতির বৈঠকের আগে থেকেই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী মুখ করার ব্যাপারে বরুণ যে ভাবে বাড়াবাড়ি করছিলেন, সেটি দলের নেতৃত্ব আদৌ ভালো চোখে নেননি। তার উপর গোটা ইলাহাবাদ জুড়ে যে ভাবে পোস্টারে ছয়লাপ করেছেন, সমর্থকদের নিয়ে রোড-শো করেছেন, এই সবই নজরে গিয়েছে নেতৃত্বের। অমিত শাহের বৈঠকে এলে তিনি যে দলীয় নেতৃত্বের কোপে পড়তেন, সেটি আঁচ করেই বরুণ গরহাজির থেকেছেন।

Advertisement

কিন্তু বরুণের অনুপস্থিতিকে ‘শাপে বর’ হিসেবে নিয়েই বাকিদের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের কৌশল রচনা করেন বিজেপি সভাপতি। এই বৈঠকেই স্থির হয়েছে, আগামী ১৫ দিন উত্তরপ্রদেশের সব সাংসদ নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র ঘুরে বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট জমা দেবেন। তারপর ভোট পর্যন্ত দল প্রতি চার মাসে একটি করে সবিস্তার সমীক্ষা করবে। এই সমীক্ষায় দেখা হবে দু’টি বিষয়। এক, বিজেপির কৌশল সঠিক ভাবে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে কি না ও দলের কোন নেতা ফাঁকি দিচ্ছেন। তার ভিত্তিতে কৌশলও যেমন বদল করা হবে, তেমনই নিজের দলের নেতাদের বিরুদ্ধেও ‘উপযুক্ত’ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভোট যখন এগিয়ে আসবে, তখন এই সাংসদদের মধ্যেই কাউকে যদি মুখ্যমন্ত্রী মুখ করা প্রয়োজন হয়, তা হলে সেই বিষয়টিও বিবেচনা করে দেখতে পারেন অমিত শাহ।

দলের এক নেতার মতে, একটি বিষয় স্পষ্ট, বরুণ এই দৌড়ে নিজেকে যতই এগিয়ে রাখতে চাইছেন, ততই তিনি পিছিয়ে পড়ছেন। গতকালের বৈঠকে উত্তরপ্রদেশ থেকে দলের দুই শীর্ষ সাংসদ নরেন্দ্র মোদী ও রাজনাথ সিংহ ছিলেন না। সরকারি কাজের জন্য দিল্লি ফিরে আসতে হয়। কিন্তু যে মুরলীমনোহর জোশী এত দিন বিদ্রোহী-ব্রিগেডে ছিলেন, তিনি গোটা বৈঠকে উপস্থিত থাকেন। গতকালই মোদী তাঁর তারিফ করেছেন। জনসভার মঞ্চে এক দিকে লালকৃষ্ণ আডবাণী, অন্য দিকে জোশীকে নিয়ে বসেছিলেন। সুর বদলে জোশীও কালকের বৈঠকে পরোক্ষে বরুণের সমালোচনা করেন। উত্তরপ্রদেশের এক দিনের মুখ্যমন্ত্রী ও অধুনা বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পাল আজ বলেন, ‘‘নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরলেই কাউকে দল মুখ্যমন্ত্রী দেবেন, এমনটি ভাবা বোকামো। গতকালের বৈঠকে দলের সভাপতি উত্তরপ্রদেশ নিয়ে আমাদের যা নির্দেশ দিয়েছেন, তা পালন করতে আমরা সকলেই দু’-এক দিনের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন