Vijaya Devi

জলের আতঙ্কে ভোগা সেই মেয়েই এখন নৌকায় বিশ্বভ্রমণে

পাল তোলা নৌকো 'আইএনএস তারিণী' নিয়ে ২১ হাজার ৬০০ নটিক্যাল মাইল পাড়ি দিতে যাত্রা শুরু করেছেন লেফটেন্যান্ট বর্তিকা জোশী, লেফটেন্যান্ট বিজয়া দেবী, প্রতিভা জামওয়াল, পি স্বাতী, পায়েল গুপ্ত ও ঐশ্বর্য বোদ্দাপাতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১৯:৪১
Share:

ভয়কে জয় করে... ছবি— সংগৃহীত।

বছর ছয়েক আগে পর্যন্ত মেয়েটা সমুদ্র দেখেনি। সাঁতার কাটা তো দূরের কথা। রীতিমতো জলে আতঙ্ক ছিল তার। ইচ্ছে ছিল স্থলসেনায় যোগ দেবে। কিন্তু দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজিতে এমএ পাশ করার পরে সংবাদপত্রে নৌসেনার নিয়োগের এক বিজ্ঞাপনই মণিপুরের সৌগ্রাকপাম বিজয়া দেবীর জীবনটা পালটে দিল। জলে ভয় পাওয়া মেয়েটাই এখন ভারতীয় নৌসেনার প্রথম বিশ্ব-ভ্রমণকারী মহিলা বাহিনীর ছ'জনের একজন।

Advertisement

আরও পড়ুন, ক্লাসে নাম ডাকলে এ বার থেকে বলতে হবে ‘জয় হিন্দ’!

আরও পড়ুন, এ মাসের শেষেই কি নতুন দল গড়ছেন কমল হাসন?

Advertisement

পাল তোলা নৌকো 'আইএনএস তারিণী' নিয়ে ২১ হাজার ৬০০ নটিক্যাল মাইল পাড়ি দিতে যাত্রা শুরু করেছেন লেফটেন্যান্ট বর্তিকা জোশী, লেফটেন্যান্ট বিজয়া দেবী, প্রতিভা জামওয়াল, পি স্বাতী, পায়েল গুপ্ত ও ঐশ্বর্য বোদ্দাপাতি। অভিযানের পোষাকি নাম, 'নাবিকা সাগর পরিক্রমা।' আরব সাগর, ভারত মহাসাগর, অস্ট্রেলিয়ান সাগর, দক্ষিণ মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর পার করে ফের ভারতে ফিরতে কেটে যাবে সাত মাস! তার মাঝে পার্থের ফ্রেম্যান্টেল, ক্রাইস্টচার্চের লিটলটন, ফকল্যান্ডের পোর্ট স্ট্যানলি ও দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে নোঙর করবেন ছয় কন্যা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের শুভেচ্ছা নিয়ে গোয়ার মাণ্ডবী জেটি থেকে ১০ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করেছেন বর্তিকা, বিজয়ারা। কিন্তু স্থলে ঘেরা, নাশকতায় ত্রস্ত মণিপুরের ছোট্টখাট্ট মেয়েটা কী ভাবে এমন বিরল, সাহসী পথের যাত্রী হল? সদাহাস্য বিজয়া জানান, বিশাখাপত্তনমের উদ্দেশে যখন প্রথম মহাদেবী নৌকায় চড়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন তখন গোটা রাস্তা শুধুই বমি করে ও পকোড়া রান্না করে কাটিয়েছেন। খাবার মুখ তুলতে পারেননি। ওজন মারাত্মক কমে গিয়েছিল। সকলে চিন্তায় পড়েছিল মেয়েটা বাঁচবে কী না। কিন্তু কলেজের পড়ার মতোই নৌবাহিনীর জীবনও দ্রুত শিখে ও রপ্ত করে নিয়েছিলেন বিজয়া। জলে আতঙ্ক থাকা মেয়েটাই মাছের মতো সাঁতার কাটে এখন। বিজয়ার অদম্য জেদ, হাসিমুখ, টিম স্পিরিট ও দক্ষতা দেখে এশিয়ান গেমসে রূপো জেতা ক্যাপ্টেন অতুল শর্মা নিজে হাতে ছয় জনের অভিযানের অন্যতম হিসেবে তাঁকে বেছে নেন ও প্রশিক্ষণ দেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন বিজয়া দেবীকে। ছবি— সংগৃহীত।

২০১৩ সালে ক্যাপ্টেন দিলীপ দোন্ডে প্রথম ভারতীয় হিসেবে পালতোলা নৌকায় বিশ্ব ঘোরেন। এর পর অভিলাশ টমি একই অভিযান করেন কোথাও না থেমে।

যাত্রা শুরু। ছবি— সংগৃহীত।

মেয়েদের এই ঐতিহাসিক অভিযানের পথে দু'জন পালা করে চার ঘণ্টা নৌকা সামলাবেন। ৫৬ ফুট লম্বা আইএনএস তারিণীর নামকরণ হয়েছে ওড়িশায় মাঝিদের আরাধ্য দেবী 'তারা-তারিণী'র নামে। নৌকায় আছে ৬টি বিভিন্ন আকারের পাল। কেপটাউনে তৈরি মাস্তুলটি ২৫ ফুট উঁচু। আছে অত্যাধুনিক নেভিগেশন, অটো-পাইলট,স্যাটেলাইট অ্যান্টেনা, নোনা জলকে পানীয় জল করার যন্ত্র ও কমিউনিকেশন প্রযুক্তি। নৌকার ছোট্ট রান্নাঘরেই ছয় সদস্যের জন্মদিনের কেক, উৎসবের হালুয়া-ইডলি, দৈনন্দিন রান্না করা হবে। নৌসেনার হাতে তারিণী ও মহাদেবী ছাড়াও সাগর সফরের জন্য তরঙ্গিনী ও সুদর্শনা নামের আরও দুটি পালতোলা নৌকা রয়েছে।

মেরি কমের রাজ্যের মেয়ে বিজয়া জানান, মণিপুরে থাকার সময় মনে হত পৃথিবীটা ছোট্ট জায়গা। বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে, আদিগন্ত জলের মধ্যে থেকে বুঝেছেন পৃথিবীর ব্যাপকতা। বিশ্ব পাড়ির আগে মহাদেবীতে চড়ে বিজয়া ভারত থেকে মরিশাস, গোয়া থেকে কেপ টাউন পর্যন্ত ১০ হাজার নটিক্যাল মাইলের পথ পাড়ি দিয়েছেন। পার করেছেন অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝা। এ বার দ্বিগুণ পথ পাড়ি। ইচ্ছে, মেরি কমের রাজ্যকে বিশ্বের মানচিত্রে আরও উজ্জ্বল করা। মেরি কম, সরিতা দেবীদের পরে ঘরের মেয়ে বিজয়ার সাফল্যের জন্য প্রার্থনা করছে মণিপুরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন