শিলংকাণ্ডে কখনও তাতে নেপালি খেদাও, কখনও বিহারি বা কখনও বাঙালি খেদাওয়ের ছাপ পড়ে। —নিজস্ব চিত্র।
আসলে গল্পটার শুরু জল তুলতে গিয়ে ঝামেলা বা গাড়ির আলতো ধাক্কা দিয়ে নয়। গত দুই দশকের ছাই চাপা আগুনটাই উস্কে দেওয়া হয়েছে সুকৌশলে। সব লড়াই-আন্দোলনের চিরন্তন কারণ যা থাকে, সেই জমি দখলের লড়াইটাই শিলংকাণ্ডেও মুখ্য। কখনও তাতে নেপালি খেদাও, কখনও বিহারি বা কখনও বাঙালি খেদাওয়ের ছাপ পড়ে। এ বার যেমন পাঞ্জাবি ও হরিজন খেদানোর আন্দোলন পঙ্গু করে ফেলল শৈলাবাস শিলংকে।
১৯৭৯ সাল। অসমে এক দিকে জন্ম নিচ্ছে আলফা। অন্য দিকে শুরু হয়েছে অসম আন্দোলন। আলফার উদ্দেশ্য স্বাধীন অসম। আন্দোলনের উদ্দেশ্য বহিরাগতদের খেদানো। যাদের খাসি ভাষায় ডাকা হয় ‘ডখার’। ওই একই সময়, শিলংয়ের বাঙালি প্রধান এলাকা লাইটুমরায় দরবার বা গ্রাম সভার প্রচ্ছন্ন মদতে হিন্দু দেবীর মূর্তি অপবিত্র করা থেকে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। তার পর চলে তীরের ঘা, কুপিয়ে বা জীবন্ত পুড়িয়ে নেপালি ও বাঙালি হত্যা। শর্মা কমিশনের মতে, নিহতের সংখ্যা অন্তত ১০০। অ-খাসিয়াদের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। বহিরাগত ভাড়াটেদের তাড়ানো হয়। ধর্মাচরণে নামে বিধিনিষেধ। সেই সময় অনেক নেপালি ও পাঞ্জাবি চাপে পড়ে খ্রিস্টান ধর্ম নেন। সেই ছিল সূত্রপাত। যে বিদ্বেষ ও বিক্ষোভ দফায়-দফায় ও ধারাবাহিক ভাবে শিলংয়ে অন্তঃসলিলা।
ফের ১৯৮৬-৮৭ সালে খাসি ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভ। এ বার মূল নিশানা নেপালিরা। আন্দোলনের জেরে প্রায় সত্তর হাজার নেপালি শিলং ছাড়েন।
আরও পড়ুন
শিলংয়ে সেনা টহল, কার্ফুর মধ্যেই হিংসা
১৯৯২ সালে বেহালার মেয়ে মালবিকা বিশারদ বিয়ে হয়ে শিলংয়ে আসেন। রিলবংয়ে রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য ব্রুকসাইড বাংলোর সামনেই বাড়ি তাঁর। সে বছরই পুজোর সময় কলকাতার রবীন্দ্র অনুরাগিনী মেয়ের স্বপ্নভঙ্গ। ঠাকুর দেখতে বেরোনো বাঙালি পরিবারের উপরে পেট্রল বোমা ছোড়া হয়। প্রাণহানির ঘটনা থেকে ফের ঝামেলা, বিক্ষোভ, কার্ফু। বাঙালি-বিহারীরা সে বার নিশানা হয়। মালবিকা জানান, পরে ১৯৯৬ সালেও বহিরাগতদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছিল। এ সবের জেরে শিলং থেকে হাজার হাজার বাঙালি ও নেপালি মেঘালয় ছেড়ে চলে যান। তার পর থেকে প্রায় দুই দশক আপাত শান্তিকল্যাণ ছিল পাহাড়। কিন্তু ফের এমন ঘটনায় সিঁদুরে মেঘ দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘সামান্য ঘটনাকে যে পরিকল্পিত ভাবে গণ আন্দোলনের চেহারা দেওয়া হচ্ছে, বহিরাগতদের বিরুদ্ধে উস্কে দেওয়া চলছে— তা আশঙ্কার। রাজনীতির রং না দেখে এখনই কড়া হাতে সব দমন করা দরকার। রিলবংয়ে রবীন্দ্র ভবনের সামনে বসে রাত হোক বা দিন বোমা-কাঁদানে গ্যাসের শব্দ শুনতে হচ্ছে, বাড়ি থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছে সবাই, শিলংমুখী বাঙালিরা শেষের কবিতার স্মৃতি রোমন্থনের সুযোগ পাচ্ছেন না— এ কোন শিলং!’’
কিন্তু প্রাক্তন মন্ত্রী মানস চৌধুরীর মতে, এই দুই দশক শিলংয়ের শান্ত চেহারাটা ছিল আপাত। সেই ২০১৩ সাল থেকে নাগাড়ে, বহিরাগতদের রুখতে ইনারলাইন পারমিট চালু করার দাবিতে খাসি ছাত্র সংগঠন আন্দোলন চালাচ্ছে। কিন্তু তখনকার কংগ্রেস সরকার অভিজ্ঞতা দিয়ে, উপজাতি রসায়ন বুঝে, নরমে-গরমে বিক্ষোভ সামলে দিয়েছে। নতুন মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার নতুন সরকার একে অনভিজ্ঞ, তার উপরে এক শরিককে সামলাতে হচ্ছে তাঁকে।
মেঘালয়ে বহিরাগতদের রুখতে ইনারলাইন পারমিট চালু করার দাবিতে হওয়া আন্দোলনে দু’জনের প্রাণ গিয়েছে। অ-খাসিয়াদের দোকান পুড়েছে। পুলিশ ৬০টি মামলা দায়ের করেছে। কিন্তু সাজা হল কই! আন্দোলনের জেরে ও ভাঙচুরের ফলে মেঘালয়ে রেললাইন পাতার কাজও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। বিক্ষোভ চলছিলই। সেটাকেই বৃহস্পতিবার ফের রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানো হল বলে ওয়াকিবহাল মহলের মত।
জোট সরকারের অনেক নেতাই ছাত্র সংগঠনের জোরে জিতে এসেছেন। তাই গারো মুখ্যমন্ত্রী চট করে খাসি ছাত্র সংগঠনকে চটাতে বা পুরোদস্তুত আক্রমণে যেতে পারছেন না।
সব জেনেবুঝেও সরকার নির্দেশের অভাবে ঠুঁটো হয়ে রয়েছে পুলিশ। নাগাড়ে আক্রমণ, কার্ফু অগ্রাহ্য করেও মিছিল-বিক্ষোভ চলছে। পুলিশ ও আধা সেনা নীরব দর্শক। কার্ফুর মধ্যেই খোদ সচিবালয়ে ব্যারিকেড ভেঙে ঢুকে পড়ছে জনতা। পুলিশের কিছুই করার হুকুম নেই। হাতিয়ার বলতে কাঁদানে গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড। ইতিমধ্যে জনতার আক্রমণে শিলংয়ের এসপি-সহ অনেক পুলিশ কর্মী জখম। কিন্তু মারমুখী জনতার সামনে অসামান্য সংযম দেখাচ্ছে পুলিশ।
ঘটনার সূত্রপাত কী থেকে হয়েছে— তা নিয়ে পুলিশ চার দিন পরেও নিশ্চিত নয়। একটি সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সকালে মটফ্রান এলাকায় পাঞ্জাবি লেনে কল থেকে জল নেওয়া নিয়ে স্থানীয় হিন্দিভাষী মহিলাদের সঙ্গে এক বাসচালকের ছেলেদের ঝগড়া-মারধর থেকেই এই ঘটনা। অন্য সূত্রের খবর, পাঞ্জাবি লেনে এক খাসি বাসচালক হিন্দিভাষী মহিলাকে ধাক্কা মারায় ঝামেলার সূত্রপাত। আবার ঘটনার পিছনে ইভটিজিংয়ের সূত্রও জোড়া হচ্ছে। পুলিশ ইতিমধ্যে মারধর ও ভাঙচুরে জড়িত অনেককে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু বিক্ষোভ থামছে না।
শিলংয়ের স্বপন দেব দীর্ঘ দিন ধরে বাংলার পর্যটকদের ঘোরাচ্ছেন মেঘালয়। তিনি বললেন, ‘‘১৯৯২, ১৯৯৬ সালের মতো সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের আকার দেওয়ার চেষ্টা চলছে এ বারেও। কিন্তু যে সব অল্পবয়সী ছেলেরা আন্দোলন করছে, পাথর ছুড়ছে তারা ওই সময় একেবারেই শিশু। ওরা না জানে শিলংয়ের ইতিহাস, না বুঝতে পারছে ঘটনার পিছনের রাজনীতি। ওদের বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে কাজে লাগিয়ে অশান্ত করা হচ্ছে শিলং। ফলে ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছে পর্যটন। ভরা মরসুমে হোটেল সব ফাঁকা। বড় বাজার, পুলিশ বাজার বন্ধ থাকায় প্রতি দিন কোটি কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে।”
তবে, মানসবাবু বলেন, “এ ঘটনা এত সহজে মেটার নয়। কারণ মেঘালয় পার্বত্য ও উপজাতি প্রধান রাজ্য হলেও শিলং শহরের বিভিন্ন অংশে ব্যবসা এখনও অ-খাসিয়াদের হাতে। বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বাঙালি, পাঞ্জাবি, মাড়োয়ারিদের বসত বেশি। কয়েকজন উপজাতি নেতা সেই এলাকাগুলিতেও আধিপত্য কায়েম করতে চাইছেন। তাই একটা পাঞ্জাবি লেন খালি করলেই সব সমস্য রাতারাতি মেটার নয়। পরবর্তী কালে এই ক্ষোভের আঁচ বাঙালিদের গায়েও লাগতে পারে।”
২০১৩ সাল থেকে বহিরাগতদের রুখতে ইনারলাইন পারমিট চালু করার দাবিতে খাসি ছাত্র সংগঠন আন্দোলন চালাচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।
আর খালি করব বললেই তো করা যায় না। সেই ইংরেজ আমলে মজদুর হিসেবে কাজ করানোর জন্য ব্রিটিশরা দলিত শিখদের মেঘালয়ে নিয়ে এসেছিল। কারণ কায়িক শ্রম বা দিন মজুরির কাজ স্থানীয় উপজাতির মানুষ করতে রাজি ছিলেন না। তখন থেকেই শিলংয়ের পাঞ্জাবি লেন পাঞ্জাবিদের বাসস্থান। পরে লাইটুমরার গোরা লাইনেও সেনা বাহিনীতে কাজ করা শিখরা থাকতে শুরু করেন। পরবর্তী কালে হরিজন সম্প্রদায়, বিহারীরাও ওই এলাকায় থাকতে শুরু করেন। তৈরি হয় সুইপার্স কলোনি। খাসি রাজার নথি অনুযায়ী, রাজা বা সিয়েম ও গ্রাম সভা বা দরবার হিমা মিলিয়েমের তরফে কখনও হরিজনদের জমির পাট্টা দেওয়া হয়নি। কিন্তু যে হেতু অনেক দিন আগে হিমা মিলিয়েমের রাজা তাঁদের থাকতে দিয়েছিলেন, তাই ওই এলাকায় হরিজন বসত মেনে নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী কালে সেখানে যে গুরুদ্বার, বাল্মিকী মন্দির ও গুরু নানক এলপি স্কুল তৈরি হয় তার অবশ্য দলিল-দস্তাবেজ রয়েছে। গোটা দলিত এলাকা খালি করতে গেলে ওই গুরুদ্বার, মন্দির, স্কুলও ভেঙে দিতে হবে।
খাসি ছাত্র সংগঠনের অবশ্য দাবি, এই ঘটনার পিছনে ছাত্র সংগঠনের হাত নেই। যা হচ্ছে সবই জনতার স্বতস্ফূর্ত আন্দোলন। সংগঠনের সভাপতি লামবক মার্নগার বলেন, ‘‘জনতা দীর্ঘ দিন থেকে ওই এলাকার অবৈধ বাসিন্দাদের সরানোর দাবি জানাচ্ছিল। সরকারের সদিচ্ছার অভাবে তা হয়নি। অধৈর্য্য হয়ে জনতা আন্দোলনের রাস্তা নিয়েছে। এতে কোনও সংগঠনের হাত নেই। ওদের সরালেই আন্দোলন বন্ধ হবে।’’ পিডিএফ দলের চেয়ারম্যান পি এন সিয়েম বলেন, ‘‘শুধুমাত্র পুরসভার সাফাই কর্মীদেরই সুইপার্স কলোনিতে থাকার কথা। কিন্তু বাইরের কাউকে সেখানে থাকতে দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অতীতে একবার সুইপার্স কলোনি প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করা হলেও বাসিন্দারা সরতে চাননি।’’
মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা এ ব্যাপারে আলোচনার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তাদের বৈঠকে ডাকেন। বিকল্প স্থানের ব্যবস্থা করতে উপ মুখ্যমন্ত্রী প্রেস্টন টিংসংয়ের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়া হয়। কমিটিতে আছেন নগরোন্নয়নমন্ত্রী হ্যামলেট ডোহলিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস সাংমা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ এল হেক, কৃষিমন্ত্রী বান্তেইদোর লিংডো এবং খাসি স্বশাসিত পরিষদের মুখ্য কার্যবাহী সদস্য পি এন সিয়েম। স্থানীয় বিধায়ক অ্যাডেলবার্ট নোংগ্রুম জানান, ঘিঞ্জি বাজার এলাকায় অতবড় বসতি না রেখে তা সরিয়ে নেওয়াই ভাল। কিন্তু সরকার কোনও সাম্প্রদায়িক টানপড়েন চাইছে না। তাই সব পক্ষের মত নিয়েই সিদ্ধান্ত হবে। প্রথমে কমিটি সুইপার্স কলোনি, সুইপার্স লেন, পাঞ্জাবি লেন ও মাওলং হাটের নথিপত্র ও দলিত পরীক্ষা করে দেখবে। পঞ্জাবের প্রতিনিধিদল ও হকার্স অ্যাসোসিয়েসনের সঙ্গেও বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, রাস্তা নয় সমস্যার সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।
ছাত্র সংগঠনকেও ধৈর্য্য ধরতে অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু ছাত্র সংগঠনের বক্তব্য, এ বার যখন মানুষ খেপেছে তখন এসপার-ওসপার করে ফেলাই ভাল।
সোমবার রাতে মাওখারের ওয়াইএমসিএ জংশনে স্থানীয় বিধায়ক অ্যাডেলবার্ট নোংগ্রাম ও সরকারি প্রতিনিধিদল আন্দোলনকারীদের নেতাদের সঙ্গে দেখা করে জানান, খাসি তরুণদের মারধর করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবে পুলিশ। পাঞ্জাবি ও সুইপার্স লেনের বাসিন্দাদেরও সরানো হবে। তার পরেই আন্দোলন করার কথা বিবেচনার আশ্বাস দেয় বিক্ষোভকারীরা। তারা জানতে চায় কবের মধ্যে পাঞ্জাবি ও সুইপার্স লেনের বাসিন্দাদের সরানো হবে। বিধায়ক জানান, দলিলপত্র যাচাই করা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে সময় দরকার। পুর্ব খাসি হিলের জেলাশাসক পি এস দখার জানান, আলোচনার পরে অধিকাংশ আন্দোলনকারী ফিরে যাওয়ার পক্ষেই মত দিয়েছেন। তেমন হলে আজ থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।
আরও পড়ুন
অশান্ত কাশ্মীরে ফের অভিযানের ভাবনা
স্থানীর গুরুদ্বার সাহিবের মেরামত চলছে। সেখানকার এক কর্তা জানান, গত ২৫ বছর ধরেই দলিত শিখদের এই লড়াই চলছে। এখানকার সিংহ ভাগ মানুষের হাতে তফসিল উপজাতির প্রমাণপত্রও নেই। রাজ্য সরকারও তাঁদের সুরক্ষায় মাথা ঘামাচ্ছে না।
গুরুদ্বারে অবশ্য এখনও আক্রমণ হয়নি। পাঞ্জাবি লেন ও সুইপার্স কলোনির পাঁচশো মহিলা-বাচ্চাকে সেনাবাহিনীর আশ্রয় শিবিরে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে শিলং সফর করেছেন অকালি দল ও পঞ্জাব সরকারের প্রতিনিধিদল। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন তাঁরা। শিলং সফর থেকে দিল্লি ফিরে অকালি দলের প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কমিউনাল ভায়োলেন্স বিল পাশ করার আর্জি জানান। তাঁরা দিল্লিতে বলেন, কোনও স্থানে সংখ্যালঘুদের বিশেষ মর্য্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে এবং এমন গণ হিংসাকে কড়া হাতে দমন না করলে সংখ্যালঘুরা বরাবর এমন নিরাপত্তাহীনতার ভুগবেন।
যে বাসচালকের নাবালক পুত্রদের মারধর থেকে ঘটনার সূত্রপাত, সেই মারবানিয়াং কিন্তু জানাচ্ছেন, তাঁর ছেলেদের আঘাত তেমন গুরুতর নয়। খাসি বনাম পাঞ্জাবির লড়াই মোটেই হয়নি। আন্দোলনের কারণ অন্য। ফেডারেশন অব খাসি-জয়ন্তীয়া-গারো পিপলের সভাপতি ডব্লু রানির মতে, ‘‘জোড়াতাপ্পি দেওয়া শান্তি নয়। স্থায়ী শান্তি আনতে সরকারকে সাহসী সিদ্ধান্ত নিত হবে। না হলে বার বার এই ঘটনা ফিরে আসবে।’’
সিভিল সোসাইটি ওমেনস অরগানাইজেশনের সভাপতি অ্যাগনেস খারসিংয়ের মতে, ‘‘অযথা ঘটনাটিকে নিয়ে রাজনীতি করতে থাকলে খামোকা সাধারণ মানুষের ক্ষতি হবে। এই ঝামেলার জেরে এমনিতেই আম জনতা, গরিব দোকানদার, গাড়ি চালকদের বিপুল ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যা মেটানো সম্ভব।’’
সোমবার রাতে ১০১ কোরের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি এস আহুজার নেতৃত্বে পূর্ণ সমর সজ্জায় সেনাবাহিনী শহরের সংবেদনশীল সব এলাকা জুড়ে ফ্ল্যাগ মার্চ করেছে। আহুজা বলেন, “মানুষকে ও আন্দোলনকারীদের বুঝতে হবে সেনা নামানো সবসময়ই শেষ পন্থা। কারণ সেনাবাহিনী লাঠি বা কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে না। এ কদিনে অনেক ক্ষতি হয়েছে। সেনা বাহিনী সংযত রয়েছে। আশা করি বিক্ষোভকারীরাও সংযত হবেন। আশ্রয় শিবির থেকে মহিলা ও শিশুরা আস্তে আস্তে ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন।” শিলংয়ের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন মেঘালয়ে প্রতিনিধি মনজিৎ সিংহ রাই শিলংয়ে আসেন মঙ্গলবার। বুধবার দিল্লি ফিরে তিনি তাঁর প্রতিবেদন জমা দেবেন।