৫ দিনেই পঞ্চত্বের মুখে স্বচ্ছ-সুন্দর মহামনা

নতুন রং, নতুন ডিজাইনে সাজিয়ে-গুছিয়ে, বিস্তর ভেবে-চিন্তে তার নাম রাখা হয়েছে ‘মহামনা’। কিন্তু ‘মহদাশয়’ পাবলিকের দৌলতে পাঁচ দিনেই তার যে হাল হয়েছে, তাতে মাথায় হাত রেল কর্তাদের! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীর জন্য ঝাঁ-চককচে একটা নতুন ট্রেন বরাদ্দ করেছিল রেল মন্ত্রক।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৩
Share:

গুটখা-পিকে পাইপ আটকে উপচে যাচ্ছে বেসিন। কোথাও বা আবার স্টিলের কলের মুখ উধাও। নোংরা আসনের তলাও। —নিজস্ব চিত্র।

নতুন রং, নতুন ডিজাইনে সাজিয়ে-গুছিয়ে, বিস্তর ভেবে-চিন্তে তার নাম রাখা হয়েছে ‘মহামনা’। কিন্তু ‘মহদাশয়’ পাবলিকের দৌলতে পাঁচ দিনেই তার যে হাল হয়েছে, তাতে মাথায় হাত রেল কর্তাদের!

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীর জন্য ঝাঁ-চককচে একটা নতুন ট্রেন বরাদ্দ করেছিল রেল মন্ত্রক। দিল্লি থেকে বারাণসীর মধ্যে সুপারফাস্ট সেই ট্রেন ছুটছে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। রেলের মতে, এটি একেবারে ‘কনসেপ্ট ট্রেন’! আগামী দিনে যে ধাঁচের ট্রেন দিয়ে গোটা দেশকে জোড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে রেল। কামরার রঙে চিরাচরিত লাল-নীলের বদলে উজ্জ্বল বেগুনি-কালো। তাতে হলুদ-গেরুয়ার হালকা পোঁচ। ভোল বদলে দেওয়া হয়েছে অন্দরসজ্জারও।
স্লিপার শ্রেণির সিটের রং বেগুনি। জানলার নীচে ফোল্ডিং টেবিল। আপার বার্থে ওঠার সিঁড়িও অনেক বেশি যাত্রী-বান্ধব। রেলের বক্তব্য, আড়ে-বহরে কামরাগুলি প্রায় এক থাকলেও এর আসন আগের থেকে চওড়া। একই সঙ্গে পা ছড়ানোর সুবিধেও আরও বেশি। গদি আগের চেয়ে মোলায়েম। বাতানুকূল শ্রেণির ফার্স্ট ক্লাসে রয়েছে টিভিও। শৌচাগারে জৈব প্রযুক্তি, কামরা ও প্যাসেজে এলইডি আলো— সব মিলিয়ে এ এক আধুনিক ট্রেন।

কিন্তু প্রথম সপ্তাহের শেষেই দেখা যাচ্ছে, আসনের তলায় খবরের কাগজের ঢাঁই। মেঝেময় ছড়িয়ে খাবারের অবশিষ্ট অংশ। নোংরা করা হয়েছে দেওয়ালও। মেঝেয় বিয়ারের ভাঙা বোতল। কাচের টুকরো দিয়ে ফালাফালা করা হয়েছে গদির ফোম। খোবলানো ফোম হাঁ করে মুখ দেখাচ্ছে। গুটখা ও পিকে ছয়লাপ শৌচাগারের বেসিন, দেওয়াল, প্যাসেজের কোণ, দুই কামরার সংযোগস্থল। গুটখা-পিক পাইপে আটকে গিয়ে কোথাও জল উপচে ভেসে যাচ্ছে বেসিন। ট্রেনের দোলায় সেই জলে ভাসছে প্যাসেজও। জলের বোতল থেকে সিগারেট-গুটখার প্যাকেট, সবই রয়েছে শৌচাগারের নিকাশি পাইপে। স্টিলের কলের মুখ উধাও। চেন দিয়ে বাধা স্টিলের মগগুলি রক্ষা পেলেও বাকিগুলি বেপাত্তা।

Advertisement

অথচ এই ট্রেনকেই স্বচ্ছ ভারত তথা স্বচ্ছ রেলের নুতন মুখ হিসেবে তুলে ধরার কথা ভেবে রেখেছিল রেল। সেই সঙ্গে এ দেশেও যে আন্তর্জাতিক মানের দেখনদার কামরা তৈরি হতে পারে সেই বার্তা দিতে চেয়েছিল সুরেশ প্রভুর মন্ত্রক।

কিন্তু যাত্রীরা কি আদৌ ‘স্বচ্ছ’? রেলের নিজস্ব নজরদারি ও দেখভালের ব্যবস্থাই বা কতটা ‘কুশল’? এ সব এখন নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। সরকারে এসে ইস্তক স্বচ্ছ ও কুশল ভারত গড়ার ‘পণ’ করেছেন মোদী। লোকসভা ভোটে বারাণসী থেকে জিতে সেখান থেকেই স্বচ্ছ ভারতের প্রচারে নেমেছিলেন মোদী। ঘটা করে ঝাঁটা হাতে গঙ্গার ঘাট পরিষ্কারে হাত লাগিয়েছিলেন। এখনও জোর প্রচার চলছে ঢাকঢোল পিটিয়ে, তারকা সমাবেশ ঘটিয়ে। এ সবে লাভ কতটা হচ্ছে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই! স্বচ্ছতার প্রশ্নে যাত্রীদের প্রকৃত মানসিকতা কী, তা নিয়েও নতুন করে ভাবতে হচ্ছে রেল কর্তাদের। বারাণসী-দিল্লি রুটে ট্রেনটি চালাতে গিয়ে এখন তাঁরা বলছেন, মন্ত্রক সম্ভবত উত্তর ভারতীয় যাত্রীদের মানসিকতার কথা মাথায় রাখেনি। ট্রেনের দশা দেখে মন্ত্রকের এখন উপলব্ধি এটি দিল্লি-মুম্বই বা দিল্লি-চেন্নাইয়ের মধ্যে চালালে হয়তো এতটা খারাপ অবস্থা হতো না।

শুরুতেই সুন্দর একটি ট্রেনের যে সবর্নাশ হয়েছে, তার পরে কোনও ট্রেনে নতুন কামরা জোড়ার বিষয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে রেল। মাসের শেষ সপ্তাহে রেল বাজেট। বাজেট বক্তৃতা শেষ হতেই মন্ত্রী-সাংসদেরা বসে পড়বেন নিজের নিজের এলাকার প্রাপ্তির তালিকা মেলাতে। কার রাজ্য ক’টা নতুন ট্রেন পেল, শুরু হয়ে যাবে তার চুলচেরা বিচার ও রেল মন্ত্রকের সমালোচনা। ‘মহামনা’ এক্সপ্রেসের হাল দেখে মুষড়ে পড়া রেল কর্তাদের প্রশ্ন, কাদের জন্য ট্রেন দেব! দিলেই তো একই হাল হবে!

তিতিবিরক্ত এক রেল-কর্তার খেদ, স্বচ্ছতা তো অনেক পরের কথা, এখন সুস্থ মনের ভারত গড়ার জন্যও একটা অভিযান দরকার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন