বিজেপিকে গদিচ্যুত করতে রাজ্যের জট সমস্যা নয়, দাবি মমতার

শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, এই একই মন্ত্র নিয়ে বিরোধীরা প্রস্তুত হচ্ছেন সমস্ত রাজ্যেই।

Advertisement

অগ্নি রায় ও প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৪
Share:

ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস এবং সিপিএমের সঙ্গে সমঝোতার যে কোনও প্রশ্ন নেই সেটা জানেন তিনি। কিন্তু মোদীকে হটাতে কেন্দ্রে সরকার গড়ার লড়াইয়ে তার ছাপ পড়তে দিতে নারাজ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, এই একই মন্ত্র নিয়ে বিরোধীরা প্রস্তুত হচ্ছেন সমস্ত রাজ্যেই।

Advertisement

আজ মমতার কথায়, ‘‘আমাদের রাজ্যে সিপিএম এবং কংগ্রেস আমাদের বিরুদ্ধে লড়বে। আমরাও পুরোদমে লড়ব। পারস্পরিক লড়াই তো গণতন্ত্রের অঙ্গ।’’ তাঁর মতে, তবে বিজেপিকে গদিচ্যুত করার প্রশ্নে রাজ্যভিত্তিক লড়াই কোনও বাধা হবে না।

পশ্চিমবঙ্গ বাদ দিয়েও যেখানে যেখানে বিরোধী দলগুলির নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ের প্রশ্ন রয়েছে সেগুলি হল দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল ও ওড়িশা। কংগ্রেসের মতে— তামিলনাড়ু, বিহার, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে এই সমস্যা হবে না। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস-এনসিপি জোট প্রায় পাকা। সেখানে কিছু আসন বাম এবং ছোট দলকেও ছাড়া হবে। অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবুর সঙ্গে কংগ্রেসের জোটের সম্ভাবনায় জট রয়েছে। কেরলে আবার কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। সেখানে সিপিএমের পাশে থেকে এনসিপি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়ছে। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য উত্তরপ্রদেশে এসপি, বিএসপি এবং আরএলডি-র জোটের বিরুদ্ধে ৮০টি আসনেই লড়ছে কংগ্রেস। প্রিয়ঙ্কার সদ্য রাজনৈতিক অভিষেকে সেখানে নতুন অক্সিজেন পেয়েছে রাহুল গাঁধীর দল। যদিও রাহুল মনে করেন উত্তরপ্রদেশে তাঁরা বিজেপির উচ্চবর্ণের ভোট ব্যাঙ্ক থেকে ভাগ বসাবেন। যে মুসলিম ভোট এসপি থেকে বেরিয়ে আসবে, সেটাও কংগ্রেসের ঝুলিতে আসবে বলে মনে করছেন তিনি। নিজেদের মধ্যে ভোট কাটাকাটির জায়গা নেই।

Advertisement

আরও পড়ুন: ভোটের পরে এগিয়ে থাকতেই জোট

গত কাল রাহুল বলেছেন— মূল লড়াই যে হেতু বিজেপির বিরুদ্ধে, ফলে যে রাজ্যে আঞ্চলিক দলগুলি শক্তিশালী, সেখানে কোনও সমস্যা হবে না। সেখানে কংগ্রেস আলাদা লড়লে বিজেপির ভোটই কাটবে। আঞ্চলিক দলগুলিই লাভবান হবে। তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করেন, যে রাজ্যে যে আঞ্চলিক দল বেশি শক্তিশালী, ত্রিমুখী বা চর্তুমুখী লড়াই হলেও তারাই জিতবে। সূত্রের বক্তব্য, সমস্যা হবে কংগ্রেস এবং অন্য দল উভয়েই যেখানে শক্তিশালী সেখানে। জোট না হলে ভোট ভাগাভাগিতে বিজেপি লাভবান হয়ে যেতে পারে। যেমন ওড়িশা বা কেরল।

আরও পড়ুন: ‘ডক্টর’ হলেন কানহাইয়া

পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বকে মোটামুটি ভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা গলা ছেড়ে তৃণমূলের বিরোধিতা করতে পারেন। প্রদেশ কংগ্রেস চাইছে বামেদের সঙ্গে জোট গড়তে। সেখানে স্থানীয় নেতারা বসে স্থির করবেন কী ভাবে সমঝোতা হবে। জাতীয় স্তরে মমতার সঙ্গে জোট হচ্ছে বলে কংগ্রেস সভাপতির তরফ থেকে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের কোনও ভাবেই বলা হবে না— রাজ্যে মমতাকে রাজনৈতিক আক্রমণ কোরো না। কারণ রাজ্যে কংগ্রেসকে লড়তে হলে সারদা কেলেঙ্কারির মতো বিষয়কে হাতিয়ার করতেই হবে, যেটা কাল লোকসভায় অধীর চৌধুরী করেছেন। কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এটাও জানেন যে তাঁদের দলের ১৮ জন বিধায়ককে ভাঙিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। ফলে রাজ্যের লড়াই, প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইও বটে।

বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের বোঝাপড়াতেও যে সমস্যা রয়েছে, সেটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবগত। লোকসভা ভোটে তা হলে রায়গঞ্জে মহম্মদ সেলিমের আসনটি ছাড়তে হবে। প্রশ্ন উঠছে দীপা দাশমুন্সিকে তা হলে কোথায় দাঁড় করানো হবে? প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় জোট নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। রাহুল আমাদের উপর কিছু চাপিয়ে দেননি। বিরোধিতা যেমন করছি করব।’’ পি চিদম্বরমের কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে দল কী করবে, শেষ নির্দেশ দেবেন দলের সভাপতি।’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘রাহুল গাঁধীর সঙ্গে বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছি, এ রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে ঐক্য কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। ৯ ফেব্রুয়ারির ওই বৈঠকে রাহুল গাঁধী তৃণমূল প্রসঙ্গে স্পষ্ট কিছু বলেননি। তবে বলেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু এবং দিল্লিতে কংগ্রেসকে আর হাঁড়িকাঠে চড়ানো হবে না।’’ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুরও বক্তব্য, ‘‘বিজেপিকে হটিয়ে দেশ এবং তৃণমূলকে হটিয়ে রাজ্যকে বাঁচাতে ভোট একত্রিত করার সিদ্ধান্ত আমাদের আগেই হয়েছে। এখন বামফ্রন্টের ভিতরে ভোটের কৌশল ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সেই কথাবার্তা চূড়ান্ত হওয়ার পরে আগামী দিনে কংগ্রেস বা অন্য কোনও দলের সঙ্গে জোট বা বোঝাপড়ার বিষয়ে ভাবা হবে।’’ আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেস এবং বামেদের প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে। এ দিন রাতেই সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির দুই নেতা সুজন চক্রবর্তী এবং রবীন দেব কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান এবং প্রদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে এক দফা আলোচনা সেরেছেন। সূত্রের খবর, দিল্লিতেও সীতারাম ইয়েচুরি প্রথমে রাহুল গাঁধী এবং পরে প্রদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে জোটের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন