গুলশনের হামলায় নিহতদের স্মরণে ঢাকায় মোমবাতি মিছিল। ইনসেটে, তারিশি জৈন। ছবি: এএফপি এবং পিটিআই।
গুলশন-সন্ত্রাসে নিহত ছাত্রী তারিশি জৈনের পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইলেন সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গির বাবা। মঙ্গলবার ভারতীয় টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়ও ঘোর কাটেনি তাঁর। বাংলাদেশের আওয়ামি লিগের নেতা ইমতিয়াজ খান বাবুল। গুলশনের ক্যাফেতে হামলায় জড়িতদের তালিকায় উঠে এসেছে তাঁরই ২১ বছরের ছেলে রোহন ইমতিয়াজের নাম। এ দিন ঢাকার অভিজাত এলাকায় তাঁর পাঁচতলার ফ্ল্যাটে বসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার সময় ভেঙে পড়েলেন তিনি। তাঁর কথায়: “হামলার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে এক জন ভারতীয় ছাত্রী। ...সেই ছাত্রীর মা-বাবা আর ভারতের কাছে আমি শুধু ক্ষমাই চাইতে পারি। তবে শুধু এটাই বলতে চাই, ক্ষমা চাওয়ার মতো কোনও ভাষা নেই আমার।”
গত শুক্রবার বাংলাদেশের অভিজাত এলাকা গুলশনের হোলি আর্টিজান ক্যাফেতে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছেন ২০ জন। তার মধ্যে ছিলেন ১৯ বছরের ভারতীয় তরুণী তারিশি জৈন। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলের অর্থনীতির স্নাতকস্তরের ছাত্রী ঢাকায় গিয়েছিলেন ইন্টার্নশিপের কাজে। ঘটনার দিন গুলশনের ক্যাফেতে তাঁর দুই বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, আর বাড়ি ফেরা হয়নি তাঁর। জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল তাঁর দেহ। সেই হামলায় সন্দেহভাজন ছয় আইএস জঙ্গির যে ছবি প্রকাশ্যে এসেছে তাতে রয়েছে রোহনও। ইমতিয়াজ খান বলেন, “আইএস-এর প্রকাশিত ছবিতে রোহনকে দেখে আমি স্তম্ভিত! সেখান থেকেই ছেলেকে চিহ্নিত করতে পারি।” ইমতিয়াজ খান জানান, পড়াশোনার বরাবরই ভাল ফল করে এসেছে তাঁর ছেলে। ক্লাশে টপার। অঙ্কে দারুণ। পড়াশোনা ঢাকার অভিজাত স্কুল স্কোলাসটিকাতে। এর পর বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছিল সে। কিন্তু, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অন্ধ ভক্ত রোহন যে কী করে হামলাকারী হয়ে উঠল সে অঙ্ক এখনও মেলাতে পারছেন না বাবা। তিনি জানান, গত ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ি ছেড়েছিল রোহন। তার পর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। এত দিন সে কী করছিল তা নিয়ে এখনও অন্ধকারে ইমতিয়াজ খান। তাঁর কথায়: “আমরা সব জায়গাতেই রোহনের খোঁজ চালিয়েছি। শেষমেশ গত ২ জানুয়ারি পুলিশে খবর দিই। রোহনের মোবাইল সুইচ়ড অফ ছিল। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাকে পাওয়া যায়নি। বাড়ি ফিরে আসার কথা জানিয়ে ফেসবুকে বহু মেসেজ পোস্ট করলেও তার কোনও উত্তর মেলেনি।” আইএসের প্রকাশিত ছবিতে বন্দুক হাতে রোহনের ছবিও অচেনা লাগছে ইমতিয়াজ খানের। বিস্মিত ইমতিাজের প্রশ্ন, “কোথা থেকে বন্দুক চালানোর ট্রেনিং পেল সে? গত ছ’মাসই বা কোথায় ছিল সে?” ছেলে যে ‘সন্ত্রাসবাদী’ হয়ে উঠছে তা-ও টের পাননি তিনি। তাঁর দাবি, “কখনও কোনও রকম অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ করিনি। এমনকী, রোহনকে কখনও জিহাদি বইপত্রও পড়তে দেখিনি।” তবে কী ভাবে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে জড়াল তাঁর ছেলে? উত্তরটা আপাতত অজানা ইমতিয়াজ খানের।
আরও পড়ুন