অসমে দু’হাজার বছরের শিলালিপি, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ পারে, নদীর দিকে মুখে করেই রয়েছে শিলালিপি। মাঝিরা তা নিত্য দেখতেন। আশপাশের পাহাড়ে অবহেলায় ছড়িয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষ। গ্রামবাসীরা তা জানতেন। কিন্তু ষোলশো বছর ধরে তা সচেতন সমাজের নজরে পড়েনি।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৬
Share:

ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ পারে, নদীর দিকে মুখে করেই রয়েছে শিলালিপি। মাঝিরা তা নিত্য দেখতেন। আশপাশের পাহাড়ে অবহেলায় ছড়িয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষ। গ্রামবাসীরা তা জানতেন। কিন্তু ষোলশো বছর ধরে তা সচেতন সমাজের নজরে পড়েনি। অবশেষে গ্রামবাসীদের কাছে খবর পেয়ে রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব দফতরের কর্তারা গোয়ালপাড়ার ডেকধুয়া গ্রামে পৌঁছে কার্যত অমূল্য রতনেরই সন্ধান পেলেন। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, ওই প্রত্নস্থল প্রথম থেকে পঞ্চম শতকের এবং ওই শিলালিপি লেখা হয়েছিল ব্রাহ্মি ভাষায়।

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি পংক্তিতেই লেখা ছ’টি শব্দের ওই শিলালিপির পাঠোদ্ধার হলে ওই প্রত্নস্থলের সময়কাল সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। প্রাথমিক ভাবে, এলাকাটি শৈবদের উপাসনাস্থল বলেই বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

গোয়ালপাড়া থেকে টেরাকোটার বহু নিদর্শন, বৌদ্ধ-জৈন আমলের বিভিন্ন নিদর্শন আগেও উদ্ধার হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র লাগোয়া গোয়ালপাড়ায় বিভিন্ন যুগে মন্দির, লোকালয় গড়ে উঠেছিল। যাঁর নেতৃত্বে এ বারের অভিযান, রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব দফতরের সেই অধিকর্তা, দীপিরেখা কৌলি জানান, ‘‘আগেও এই অঞ্চল থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন আমলের প্রত্নবস্তু উদ্ধার হয়েছে। কয়েক দিন আগেও বেশ কিছু টেরাকোটা সামগ্রী উদ্ধার হয়। পরে স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে আমরা জানতে পারি, নদের পাশে পাহাড়েও প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষ ছড়িয়ে রয়েছে।’’ বিভাগের প্রযুক্তি বিভাগ ও অনুসন্ধান বিভাগের অফিসার নবজিত্ দেউড়ি, সাবিনা হাসান, গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক পারমিতা দাস ও চিত্রগ্রাহক অপূর্ব গগৈকে নিয়ে প্রত্নতত্ত্ব দফতরের দল সেখানে পৌঁছয়। কৌলি জানান, এলাকাটি পাহাড়ি। সেখানে অনুসন্ধান চালাতেও বেশ সমস্যা হয়। তবে কেবল ওই পাহাড় নয়, আশপাশের অনেকখানিএলাকা জুড়েই রয়েছে একটি প্রাচীন জনপদের ভগ্নাবশেষ। মিলেছে ইটের দেওয়াল, মন্দিরের অংশ. পাহাড় বেয়ে উঠে গুহামন্দির, ক্যানোপি ধাঁচের দেবালয়। এমনকী আরাধনা স্থলও খুঁজে পান তাঁরা। অনেক জায়গাতেই রাস্তা নেই। পাহাড়ে বেশ কিছু শিবলিঙ্গ ও যোনিপীঠ রয়েছে। সেগুলির আকার ও প্রকার বিভিন্ন। কোনওটি গোলাকার, কোনওটি চৌকো. বৃহত্তম লিঙ্গটির উচ্চতা ১০৩ সেন্টিমিটার। প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষের অনেকটাই জঙ্গলে ঢাকা। সেগুলি সাফ করলে আরও নিদর্শন বেরিয়ে আসবে।

Advertisement

অভিযানকারীরা জানান, পাহাড়ের মতোই, নদের দিকে মুখ করেও বেশ কিছু লিঙ্গ রয়েছে। পাথরের গা দিয়ে ব্রহ্মপুত্র অবধি পাঁচটি ধাপে সিঁড়ি কাটা হয়েছে। সেখানে মোট ৬১টি ধাপ রয়েছে। সিঁড়ি যেখানে শেষ হচ্ছে, সেখানে রয়েছে পাথর খোদাই লিঙ্গপিঠ। আছে শিব-পার্বতী ও গণেশের আদলে পাথর খোদাই মূর্তি। নদমুখী পাহাড়ে দু’টি গুহারও সন্ধান মিলেছে। বড় গুহার উচ্চতা ১.৮০ মিটার, প্রস্থ ১.৭৭ মিটার। ছোটটির উচ্চতা ১.৫৪ মিটার, গভীরতা ২ মিটারের সামান্য বেশি। কৌলি বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে ওই লিপির পাঠোদ্ধার করার মতো বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে। একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। লিপিটি ব্রাহ্মি বা দেবনাগরীতে লেখা। তিনি পাঠোদ্ধার করতে না পারলে, লিপিটির পাঠোদ্ধারের জন্য তা নাসিকে পাঠানো হতে পারে। পাহাড়ে ছড়ানো প্রত্ন-নিদর্শনগুলি কোন সময়ের তা জানবার জন্য সেগুলির কার্বন ডেটিং পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। রাজ্যে সেই ব্যবস্থা না থাকায়, ভিন রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

এ দিকে, গোয়ালপাড়া শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গোবিন্দপুরের রহমত টিলায়প্রত্নতত্ত্ব দফতরের প্রতিনিধিরা বেশ বড় ইটের তৈরি টেরাকোটা টুকরো ও দেওয়াল আবিষ্কার করেছেন। মনে করা হচ্ছে, এই ইট শুঙ্গ-কুষাণযুগের সমসাময়িক। টিলা থেকে নিয়ম করে ট্রাকে লাল মাটি নিয়ে যাওয়া হয়। তেমনই লালমাটি নিয়ে যাওয়ার সময় সম্প্রতি নীতেশরঞ্জন গোস্বামী নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা ট্রাকে কিছু টেরাকোটার টুকরো দেখতে পেয়ে চালককে মাটির উত্স সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। চালকের নির্দেশ মতো রহমত টিলায় যান গোস্বামী। সেখানে টেরাকোটা সামগ্রীগুলি দেখতে পেয়ে তিনি রাজ্য সংগ্রহালয়ে খবর দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন