অরুণাচলে শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত সেনা

রাজ্যে আফস্পা জারি করা নিয়ে প্রবল বিক্ষোভের মধ্যেই অরুণাচলে একটি শ্লীলতাহানির ঘটনায় সেনা-জওয়ানদের জড়িয়ে পড়া নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। পাপুম পারে জেলার লোয়ার তারাসো এলাকার জুলাং গ্রামে গত ৬ এপ্রিল ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ। তবে পুলিশে এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয়েছে গত কাল। আজ পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। সরকারি ভাবে এ নিয়ে মুখ খোলেনি সেনাবাহিনী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০২
Share:

রাজ্যে আফস্পা জারি করা নিয়ে প্রবল বিক্ষোভের মধ্যেই অরুণাচলে একটি শ্লীলতাহানির ঘটনায় সেনা-জওয়ানদের জড়িয়ে পড়া নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। পাপুম পারে জেলার লোয়ার তারাসো এলাকার জুলাং গ্রামে গত ৬ এপ্রিল ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ। তবে পুলিশে এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয়েছে গত কাল। আজ পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। সরকারি ভাবে এ নিয়ে মুখ খোলেনি সেনাবাহিনী।

Advertisement

কী ঘটেছিল ওই দিন? গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এনডিএফবি-সংবিজিৎ গোষ্ঠীর কিছু জঙ্গির খোঁজে তল্লাশি চালাতে সেনাবাহিনী বা আধা-সেনা জওয়ানরা প্রায়ই গ্রামে হানা দেয়। ৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় জওয়ানরা গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঢুকে তল্লাশি চালায়। রাতে ফের ১২ জন জওয়ান গ্রামে আসে। অভিযোগকারিণী মহিলারা জানান, জওয়ানরা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে, মশারি ছিঁড়ে বিছানায় উঠে পড়ে। তাঁদের শ্লীলতাহানী করে। গত কাল গ্রামবাসীরা ওই সেনা জওয়ানদের বিরুদ্ধে বালিজান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। আজ পুলিশ গ্রামে গিয়ে তদন্ত চালায়। তবে ওই জওয়ানরা সেনা বাহিনীর না আধা-সেনার সে সম্পর্কে পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয়। পুলিশের বক্তব্য, আগে সেনাবাহিনী গ্রামে তল্লাশি চালালে পুলিশকে জানিয়ে তা করত। কিন্তু আফস্পা জারি হওয়ার খবর মিলতেই পুলিশকে কিছু জানানো হচ্ছে না।

ঘটনার পরে রাজ্যে আফস্পা বিরোধী আন্দোলনের ঢেউ তীব্রতর হয়েছে। রাজ্যের ছাত্র সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, মহিলা সংগঠনগুলি এক যোগে সেনাবাহিনীর স্বৈরাচারিতার নিন্দা করে রাজ্যের ১২টি জেলায় আফস্পা লাগু করার বিরোধিতা করছে। সরকারিভাবে মুখ না খুললেও, এর পিছনে চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছে সেনাবাহিনী। তাদের এক সূত্রের বক্তব্য, ৬ এপ্রিলের ঘটনার জন্য কেন এতদিন পর অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে? গ্রামে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। তাই ডাক্তারি পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা না থাকায় শ্লীলতাহানির ক্ষেত্রে গ্রামবাসীদের বক্তব্যই চূড়ান্ত। সেনাবাহিনীর কোন দল রাতে গ্রামে হানা দিয়েছিল, আদৌ তারা সেনা জওয়ান ছিল কী না, তা-ও গ্রামবাসীরা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে আফস্পা বিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে এমন অভিযোগ সামনে আনা হচ্ছে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে। অবশ্য অসমের কার্বি আংলং জেলার ডকমকায় এক কিশোরীকে ধর্ষণ ও তাঁর মা-ঠাকুমার শ্লীলতাহানির ঘটনায় সদ্য সেনাবাহিনীর মুখ পুড়েছে। সেই ঘটনাটিও ঘটেছিল ৬ এপ্রিল।

Advertisement

আফস্পা জারি করা নিয়ে কেন্দ্রের তীব্র বিরোধিতা করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অরুণাচল মন্ত্রিসভা। মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকির পৌরোহিত্যে কাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, রাজ্যের ১২টি জেলায় আফস্পা জারি করা অপ্রয়োজনীয়। সিদ্ধান্ত তুলে নেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে অনুরোধ জানানো হবে। পরিবর্তে রাজ্যের যে সব জেলা অসমের সীমানায় রয়েছে, তাদের ২০ কিমি অবধি এলাকা আফস্পার আওতায় আনার প্রস্তাব দেওয়া হবে। এর আগে কেন্দ্র জানিয়েছিল, আফস্পা চালুর ব্যাপারে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বায়ালিং-এর সঙ্গে ফোনে কথা বলা হয়েছিল। কেন্দ্রের দাবি উড়িয়ে বায়ালিং জানান, এমন কোনও কথাই হয়নি। কেন্দ্রের তরফে আগেই বলা হয়েছে, পাকাপাকি ভাবে নয়, সংবিজিৎ বাহিনী, আলফা, এনএসসিএন জঙ্গিদের দমন করার জন্য আফস্পা লাগু করা হচ্ছে। জঙ্গি দমন হলেই আইন প্রত্যাহার করা হবে। অরুণাচলবাসীর আপত্তি থাকায় কেন্দ্র রাজ্যের কাছে বিকল্প প্রস্তাব পাঠাবার আর্জিও জানায়। কেন্দ্রের বক্তব্য ছিল, জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে রাজ্য পুলিশ পর্যাপ্ত শক্তিশালী নয়। আফস্পা লাগু হলে কেন্দ্রীয় বাহিনী দ্রুত আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত জঙ্গিদের ধাওয়া করে যে কোনও স্থানে গিয়ে তাদের মোকাবিলা করতে পারবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন