শিশু হত্যার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী চেতিয়া

২৩ বছর পরে বাড়ির ভাত উঠল মুখে। কারাগারের ঘণ্টা নয়, ঘুম ভাঙল মোরগের ডাকে। পলাতকের মতো নয়, অনেকটা বীরের সম্মানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানালো কামরূপ, নগাঁও, শিবসাগর, তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড়।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:১২
Share:

২৩ বছর পরে বাড়ির ভাত উঠল মুখে। কারাগারের ঘণ্টা নয়, ঘুম ভাঙল মোরগের ডাকে। পলাতকের মতো নয়, অনেকটা বীরের সম্মানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানালো কামরূপ, নগাঁও, শিবসাগর, তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড়। কিন্তু স্বভূমির আবেগে আপ্লুত হলেও আলফার নাশকতার ইতিহাস অনুপ চেতিয়ার পিছন ছাড়ছে না। তাই দু’দশক পরে বাড়ি ফিরে আলফার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতেই ব্যস্ত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর আক্ষেপ— একা নয়, পরেশ বরুয়াকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলেই ভাল লাগত।

Advertisement

গত রাতে ডিমৌয়ে শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন অনুপ। আজ বিকেলে পৌঁছান জেরাইগাঁওয়ের বাড়িতে। পথে মরাণ, কাকোপথারে তাঁকে সম্বর্ধনা জানানো হয়। শিবসাগরে জনসভায় ভাষণ দেন তিনি। চেতিয়াকে রীতিমতো মোটরসাইকেলের কনভয় করে জেরাইগাঁও আনার ব্যবস্থা করেছিল আলফা। রাস্তাজুড়ে ‘আলফা জিন্দাবাদ’ স্লোগানও দেওয়া হয়।

১৯৭৯ সালে আলফা তৈরি করার পর থেকেই গোলাপ বরুয়া ওরফে অনুপের পলাতক জীবন শুরু। ১৯৯২ থেকে তিনি দেশছাড়া। ১৯৯৭ থেকে বাংলাদেশে কারাবন্দি। আজ ২৩ বছর পরে, লুকিয়ে নয়, সপরিবারে একেবারে শোভাযাত্রা করে বাড়ি ফিরে আবেগে ভাসলেন তিনি। বৃদ্ধ দাদা সুরেন বরুয়াও কেঁদে ফেলেন। বাড়িতে তখন হাজির প্রতিবেশী শিক্ষক বিকুল বরুয়া— যাঁর ভাই পরেশকে সরকারি চাকরির নিশ্চিন্ত জীবন থেকে জঙ্গি সংগ্রামের রাস্তায় টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন এই অনুপই।

Advertisement

পাশের বাড়ির ‘গোলাপ’কে ফের কাছে পেয়ে খুশি পরেশ বরুয়ার দাদার আশা, এ বার হয়তো পরেশকেও মূল স্রোতে ফেরত আনতে পারবেন অনুপ। অশ্রুসিক্ত চোখে চেতিয়া বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে একমাত্র পরেশই চাকরি করত। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলে সরকারি চাকরির নিশ্চিন্ত জীবন আর ফুটবলের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ছেড়ে আমার ডাকেই পরেশ সশস্ত্র সংগ্রামের অনিশ্চিত পথে পা বাড়িয়েছিল। আজ আমি একা বাড়ি ফিরে এলাম। অথচ ও এখনও কোন অজানা জঙ্গলে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এক সঙ্গে বাড়ি ফিরতে পারলেই ভাল লাগত।’’

বাড়ি ফিরে অনুপ বলেন, ‘‘শেষবার ১৯৯২ সালে বাড়ির ভাত খেয়েছিলাম। এত বছর পরে আবার সবাই একসঙ্গে বসে খাব ভেবেই ভাল লাগছে। আজ সকালে মোরগের ডাকে ঘুম ভেঙেছে। এই জাগরণের অনুভূতিই অন্যরকম।’’

অবশ্য আনন্দের আবহেও নাশকতার ইতিহাস চেতিয়াকে শান্তি দিচ্ছে না। উজানি অসমে অনেক হিন্দিভাষীকে হত্যা করেছে আলফা। সেই হত্যালীলা এখনও চালাচ্ছে আলফা স্বাধীন। ২০০৪ সালের ১৫ অগস্ট ধেমাজি কলেজের মাঠে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আলফা ১০ জন ছাত্রছাত্রী-সহ ১৭ জনকে হত্যা করে। এ দিন জেরাইগাঁওয়ের জনসভায় কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে চেতিয়া বলেন, ‘‘হিন্দিভাষীদের হত্যার যে পথ নেওয়া হয়েছিল— তা ঠিক নয়। অসমের কৃষ্টি ও সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ জ্যোতিপ্রসাদ অগ্রবালও আদতে হিন্দিভাষী ছিলেন। আর ধেমাজির বিস্ফোরণের সময় আমি কারাবন্দি। তবে যতদূর জানি শিশুদের হত্যা করতে নয়, নিরাপত্তাবাহিনীকে মারার জন্যই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। ওই ঘটনায় ক্ষমা চাওয়ার ভাষা নেই।’’

চেতিয়া জনতার উদ্দেশে বলেন, অসমকে স্বাধীন করার জন্য তাঁর সংগ্রাম কিন্তু শেষ হয়নি। শুধু সশস্ত্র সংগ্রামের রাস্তা বদলে আলোচনার পথ নিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন