আমেরিকার এইচ-১ বি ভিসায় পুরোপুরি রাশ টানার বিষয়টিকে গোড়ায় কিছুটা হালকা ভাবেই নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এখন দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় পেশাদারদের জন্য দরজা ক্রমশ বন্ধ করে দিচ্ছে ট্রাম্প-প্রশাসন। বিদেশসচিব ও বাণিজ্যসচিব সে দেশে গিয়ে আলোচনা করে এসেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। এ বার আমেরিকা যাচ্ছেন সরকারে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সেনাপতি অরুণ জেটলি। সরকারি ভাবে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার ও বিশ্বব্যাঙ্কের বৈঠকে যোগ দিতে। কথা হবে মার্কিন রাজস্ব সচিবের সঙ্গেও। তবে ভিসা নিয়ে চাপে পড়া অনাবাসীদের বিষয়টি নিয়েও মার্কিন কর্তাদের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন। আগামী জুনে প্রথম মোদী-ট্রাম্প বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানেও এই বিষয়টিই সামনে চলে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে এই মুহূর্তে কোনও আশ্বাস দেওয়ার অবস্থায় নেই বিদেশ মন্ত্রক। আজ এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে রাখছে। চলছে পরিস্থিতির মূল্যায়নও। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, এইচ-১ বি ভিসার বিষয়টিতে প্রথম দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি মোদী সরকার। তখন বলা হয়েছিল, এটি কোনও সমস্যাই নয়। দৌত্যের মাধ্যমে ভারত বোঝাবে যে মার্কিন অর্থনীতিতে ভারতীয় পেশাদারদের অবদান যথেষ্ট। বিদেশসচিব জয়শঙ্কর, বাণিজ্যসচিব রাজীব খের সেই চেষ্টা চালিয়েছেন ইতিমধ্যেই। কিন্তু কাজ হয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনমনীয় মনোভাবই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
২০০৪ সালে এইচ-১ বি ভিসা নীতি সংস্কারে নয়া আইন করেছিল মার্কিন কংগ্রেস। তখন থেকে এই ভিসার সীমা ছিল ৬৫ হাজার। আর নব্বই দশক থেকে অস্ট্রেলিয়ার ‘৪৫৭ ভিসা’ প্রকল্পের উপর ভিত্তি করে ৪ বছরের মেয়াদে সে দেশে চাকরি করে আসছিলেন ভিন্দেশিরা। প্রথমে অস্ট্রেলিয়ার ‘৪৫৭ ভিসা’ তুলে দেওয়া এবং তার পরই এইচ-১ বি ভিসায় রাশ টানতে ট্রাম্পের প্রশাসনিক অর্ডারে সই— নিঃসন্দেহে এটা ভারতের কাছে বড় ধাক্কা। গত ২৪ ঘণ্টায় এই জোড়া চাপের প্রভাব ঘরোয়া রাজনীতিতেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিজেপির। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গোপাল ওয়াগলের বক্তব্য, ‘‘অস্ট্রেলিয়ার এই নতুন নীতি নিয়ে অন্যান্য দেশ ও সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করছি আমরা। এর ফল কী হবে তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ায় তালিবানি সন্ত্রাস এবং আইএস-এর প্রভাব রুখতে ট্রাম্প সরকার এক বিশ্বস্ত মিত্রের সন্ধান করছে। সেই লক্ষ্যে দূত পাঠিয়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমঝোতা বাড়ানোর কথাও বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে পাক সন্ত্রাস দমন ও যুদ্ধসঙ্গী হিসেবে ভারতের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়ানোর কথা। কিন্তু একই সঙ্গে বিপদে ফেলা হচ্ছে আমেরিকায় কাজ করতে যাওয়া ভারতীয় পেশাদারদের। সঙ্কটমুক্তির পথ খুঁজতে জেটলি কতটা এগোতে পারেন, এখন সেটাই দেখার।