তিন তালাক নিয়ে কংগ্রেস তথা রাহুল গাঁধীর উপর জোড়া আক্রমণ শানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রবীণ বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি।
গত কাল কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতা দেবের তিন তালাক মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় প্রথমে। কংগ্রেসের সংখ্যালঘু মোর্চার মঞ্চে সুস্মিতা বলেছিলেন, কেন্দ্রে কংগ্রেস ফের ক্ষমতায় ফিরলে তাঁরা তিন তালাক বিলটিই খারিজ করে দেবেন। সুস্মিতার ব্যাখ্যা ছিল, তাঁরা নারীর ক্ষমতায়নের বিরুদ্ধে নন। কিন্তু তিন তালাক বিল এনে কেন্দ্র মুসলিম নারী-পুরুষের মধ্যে বিবাদ তৈরি করতে চাইছে। সুস্মিতার ওই বক্তব্যের পরেই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী ওই মঞ্চে পৌঁছন। কিন্তু সুস্মিতা যে মন্তব্যগুলি করেছেন, সেগুলি রাহুল বলেছেন বলে প্রচার শুরু হয়। পরে কংগ্রেসের তরফে বলা হয়, সুস্মিতার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু রাহুল নিজে ওই কথাগুলি না বললেও বিষয়টি নিয়ে তাঁর দলের যা অবস্থান, তা নিয়েও বিজেপি তাঁর তীব্র সমালোচনা শুরু করে।
অরুণ জেটলি প্রথমে তাঁর ব্লগে রাজীব গাঁধীর প্রসঙ্গ টেনে রাহুলকে এক হাত নেন। পরে পশ্চিমবঙ্গের ময়নাগুড়ির জনসভায় মোদীও তিন তালাক বিল নিয়ে কংগ্রেসের ভূমিকার সমালোচনা করেন।
জেটলি ব্লগে লিখেছেন, তিন তালাক বিল খারিজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাহুল কার্যত তাঁর বাবা রাজীব গাঁধীর দেখানো পথেই হাঁটছেন। এ প্রসঙ্গে ১৯৮৭-র শাহ বানো মামলার প্রসঙ্গও টেনে আনেন জেটলি। রাজীব গাঁধী তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী। জেটলির দাবি, প্রবল রাজনৈতিক চাপে, মুসলিম ভোট খোয়ানোর ভয়ে রাজীব তখন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও অমান্য করতে বাধ্য হয়েছিলেন। যেটা এখন তাঁর ছেলে রাহুল গাঁধী করতে চলেছেন। জেটলি লিখেছেন, ‘‘রাজীবের সিদ্ধান্ত তখন মুসলিম মহিলাদের চরম দারিদ্রের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। এখন রাহুলও যদি তিন তালাক বিল খারিজের পথে হাঁটেন, তা হলেও মুসলিম মহিলাদের প্রতি তা চরম অন্যায় হবে।’’
একই সুর মোদীর গলাতেও। তবে রাহুলের নাম নেননি তিনি। মোদী বলেছেন, ‘‘মুসলিম মহিলাদের সমানাধিকারের কথা ভেবে কেন্দ্র তিন তালাক বিল এনেছে। আর কংগ্রেস প্রকাশ্যেই বলছে, তারা ক্ষমতায় এলে এই বিল বাতিল করবে। এতে মুসলিম মহিলাদের সর্বনাশ হবে।’’ কংগ্রেসের মুসলিম মহিলা কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে এর পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনাদের যন্ত্রণা বুঝতে পারছি। দলও আপনাদের সঙ্গে নেই।’’ মোদীর দাবি, যাঁরা এই বিলের বিরোধিতা করছেন, তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেরও পরোয়া করছেন না। একই প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বিঁধেছেন মোদী। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল এখন প্রতিক্রিয়া না দিলেও প্রথমে এই বিলের বিরোধিতাই করেছিল তৃণমূল। তৃণমূলনেত্রীকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘মমতাদি আপনি কী বলবেন? আপনার কাছে ভোট দামি নাকি মুসলিম মহিলাদের সমস্যার সমাধান বেশি মূল্যবান?’’
কংগ্রেসকে আজ আক্রমণ করেছেন অমিত শাহ-ও। উত্তরপ্রদেশের এক সভায় তিনি বলেন, ‘‘সব মহিলার সম্মান নিয়ে বাঁচার অধিকার আছে। আর নরেন্দ্র মোদী এই অধিকার মুসলিম মহিলাদেরও দেবেন।’’