— প্রতীকী চিত্র।
বাংলাদেশে ভোট এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের ভূমিকা সে দেশের আতশকাচের নীচে চলে আসছে। এমনটাই মনে করছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির রাজনৈতিক সূত্র। দিল্লির দিক থেকেও তাই বার্তা দিয়ে রাখা হচ্ছে যে, ভারত সব পক্ষের সঙ্গেই গঠনমূলক সম্পর্ক রাখতে চায়।
গত দেড় দশকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনগুলির সময় ভারত যে ভাবে সাড়া দিয়েছে, সেটা সে দেশের মানুষের স্মৃতিতে রয়েছে। তার অন্যতম কারণ, ভারতের সমর্থন খুব প্রকট ভাবেই একটি রাজনৈতিক দলের দিকে ঝুঁকে থেকেছে ২০০৯ সাল থেকে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের পরিচালনায় নির্বাচনগুলি সে দেশের ভিতরে ও বাইরে অনেক সময়ই সমালোচিত হয়েছে পক্ষপাতদুষ্ট, রিগিং-আক্রান্ত এবং অন্য দলগুলিকে বাইরে রাখার অভিযোগে। কিন্তু এটাও সত্য যে, হাসিনার জয়ের পর ভারত সে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার কখনওই কোনও সমালোচনা করেনি। বরং সিলমোহরই দিয়েছে। সমাজ এবং রাজনীতির যে অংশের প্রতিনিধিত্ব সে দিন নির্বাচনে থাকেনি, সেই অংশের কাছে ভারতের ভূমিকা আজ ক্ষোভের সঙ্গে বাইরে আসছে। ভারত-বিরোধিতার আগুনে সেটা ঘি ঢালছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের গত তিনটি নির্বাচনে ভারতের অবস্থানের কথা উঠে আসছে সে দেশের বয়ানে। ২০১৪ সালের ভোটের সময় নয়াদিল্লি সরকারি ভাবে বলেছিল, ‘বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের ভবিষ্যৎ কী ভাবে বেছে নিতে চাইবেন, সেটা তাঁদের উপরেই নির্ভর করছে।’ ২০১৮-র ভোটের পর ভারতের বক্তব্য ছিল, ‘বাংলাদেশের ভোট সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’ গত বছরের ভোটের পরেও যখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অন্যদের দাবিয়ে রেখে নির্বাচন করার অভিযোগ ওঠে, একই কথার পুনরাবৃত্তি করে সাউথ ব্লকের বক্তব্য ছিল, ‘এটি বাংলাদেশের ঘরোয়া বিষয়।’ এ বারের আসন্ন ভোটের আগে বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সবাইকে সঙ্গে নিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হোক।’ কিন্তু সে দেশের আওয়ামী লীগ-বিরোধী রাজনৈতিক অংশ অথবা তরুণ প্রজন্মের কাছে এই বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্যতা পাচ্ছে না বলেই খবর।
অন্য দিকে নয়াদিল্লির বক্তব্য, আওয়ামী লীগের মূল প্রতিপক্ষ বিএনপি-র প্রতি ভারতের সন্দিহান থাকার ইতিহাসগত কারণ রয়েছে। বিএনপি-র নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় (২০০১ থেকে ২০০৬) ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। রাজনৈতিক আস্থাহীনতা এবং নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। তবে এটাও মনে করা হচ্ছে যে, এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। বিএনপি-র সঙ্গে সখ্য না হলেও কার্যকরী সম্পর্ক তৈরি করাটা জরুরি এবং সেটাই করার চেষ্টা হচ্ছে সাউথ ব্লকের তরফে।
বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, নয়াদিল্লি বাংলাদেশের সমস্ত রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। মোটের উপর এই নীতি সে দেশের রাজনৈতিক দলগুলির কাছে মান্যতা পেয়েছে বলে মনে করছে ভারত। ফলে ভোটের পর যে-ই জিতে ক্ষমতায় আসুক, তাদের সঙ্গে বাণিজ্য, শক্তি, সংযোগ এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নে হাত মিলিয়ে কাজ করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে দিল্লিকে। আগামী দিনগুলিতে তাই কোনও পক্ষকেই সমর্থন না করা, সমস্ত পক্ষের সঙ্গে কাজ করার বার্তা দিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে বিদেশ মন্ত্রক। ২০০৯ সাল থেকে যা বাংলাদেশ নীতির ক্ষেত্রে কখনওই ভাবা হয়নি।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে