ফাইল চিত্র।
কেরলের বিভিন্ন জায়গা থেকে জল সরে যেতেই বেরিয়ে এল রাজনীতির ছুরি। শুরু হয়ে গেল বন্যার কারণ নিয়ে দোষারোপের পালা।
‘ঈশ্বরের আপন দেশ’-এ মানুষকে বাঁচাতে ক’দিন ধরেই চলেছে তুমুল লড়াই। এখন বিভিন্ন জায়গা থেকে জল নেমে গিয়েছে ঠিকই, তবে ঘরছাড়া মানুষ বাড়ি ফিরে দেখছেন, তছনছ হয়ে গিয়েছে সব কিছু। ঘরের ভিতরে, চারপাশে কাদা আর জঞ্জাল। কোথাও লুকিয়ে বিষধর সাপ, পড়ে রয়েছে মৃত প্রাণীর পচাগলা দেহ। সে সব পেরিয়ে ঘরে ঢুকতেই উল্টে পড়ে রয়েছে আসবাব, টিভি, ফ্রিজ। পানীয় জলের হাহাকার আর মহামারির বিপদ মাথায় নিয়ে যখন চলছে নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি, তখনই শুরু হয়েছে আর এক লড়াই— রাজনীতির।
মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে এ দিন একসুরে আক্রমণ করেছে কংগ্রেস ও বিজেপি। কেরল বিধানসভার বিরোধী দলনেতা রমেশ চেন্নিথালা বন্যাকে ‘ম্যান মেড’ আখ্যা দিয়ে এ দিন দাবি করেন, কী পরিস্থিতিতে রাজ্যের প্রায় ৪০টি বাঁধ থেকে একই সময়ে জল ছাড়তে হল, তা খতিয়ে দেখতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক। তিনি বলেন, ‘‘পাম্বা নদীর ৯টি, পেরিয়ারের ১১টি আর চালাক্কুডি নদীর ৬টি বাঁধ থেকে একসঙ্গে জল ছাড়লে রাজ্যের কোন কোন এলাকা ডুববে, তা নিয়ে সরকারের কোনও ধারণাই ছিল না।’’ তাঁর মতে, বৃষ্টির পরিমাণ ৪২ শতাংশ বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু সে জন্য পরিস্থিতি এতটা বিগড়েছে, সেটা বলা যায় না। আসল কথা, আগাম সতর্কতা ছাড়াই ৪৪টি জলাধার থেকে একসঙ্গে জল ছাড়া হয়েছে। একে ‘ম্যান মেড’ বিপর্যয় ছাড়া আর কী-ই বা বলা যেতে পারে?
আরও পড়ুন: বন্যায় বিদেশি সাহায্যে ‘না’ কেন্দ্রের, কেরল বলল টাকা পাব কোথায়
কংগ্রেস নেতা চেন্নিথালার কথায় সুর মিলিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি পি এস শ্রীধরণ পিল্লাই। তাঁরও অভিযোগ, পিনারাই সরকারের দূরদৃষ্টির অভাবই বন্যার জন্য দায়ী। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা অমৃতা সিংহও মনে করেন, অতিরিক্ত বৃষ্টির জন্য নয়, কেরলে বন্যা হয়েছে মানুষের সাংঘাতিক ভুলে। বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য খারিজ করেছেন রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের চেয়ারম্যান কে পি শ্রীধরণ। তাঁর দাবি, প্রবল বৃষ্টিতে জলাধারগুলি উপচে পড়ছিল। তখন আগাম সতর্কতা জারি করেই জল ছাড়া হয়। বাঁধ নিরাপত্তা বিভাগের চেয়ারম্যান সি এন রামচন্দ্রণ নায়ারও বিরোধীদের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।