আসারাম বাপু।
বাবার মৃত্যুর পরে পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছিল তাকে। বয়স তখন বড়জোর ৯। পেট চালাতে টাঙ্গা চালানোর কাজও করতে হয়েছে এক সময়। কিন্তু সেই দিনগুলো পেরিয়েই ১০ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছিল আসুমল সিরুমলানি। ১৯৬৪ সালে অমদাবাদের কোনও এক ধর্মগুরু তার নাম পাল্টে রাখেন আসারাম।
দেশের বিতর্কিত ধর্মগুরুদের অন্যতম সেই আসারামেরই এখন দেশ-বিদেশে প্রায় চারশো আশ্রম রয়েছে।
নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগে আজই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে আসারামের। তবে পুলিশের বক্তব্য, শুধু নারী নিগ্রহই নয়, অবৈধ আরও অনেক কাজকর্ম চলত তার নানা আশ্রমে। ১৯৪১ সালে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে জন্ম আসারামের। দেশ ভাগের সময় তার পরিবার ভারতে চলে আসে। অমদাবাদের সাবরমতীর তীরে একটা ছোট্ট কুঁড়েঘর থেকে শুরু হয়েছিল তার আশ্রম। কয়েক বছরের মধ্যেই ফুলেফেঁপে ওঠে তার সাম্রাজ্য। দেশ-বিদেশে অজস্র ভক্ত। কোটি কোটি টাকার লেনদেন হত সেই সব আশ্রমে। পুলিশের দাবি, ভয় দেখিয়ে জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে লোভনীয় শর্তে টাকা ধার দেওয়ার প্রস্তাবও দিত আসারামের সংস্থা।
২০১৩ সালে ষোলো বছরের কিশোরী যখন তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনে, তার পরই সুরাতের দুই বোনও একই অভিযোগ আনে স্বঘোষিত ধর্মগুরু আর তার ছেলের বিরুদ্ধে। সেই মামলার আলাদা বিচার চলছে আদালতে। পিতা-পুত্রের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার পরে ইতিমধ্যেই খুন হয়েছেন তিন জন। আক্রান্ত অভিযোগকারীর পরিবার। শাহজহানপুরের কিশোরীর স্কুলের প্রিন্সিপালও আজ জানিয়েছেন, মেয়েটির বয়স কমপক্ষে ১৮ করার জন্য বারবার তাকে চাপ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। যাতে পকসো আইনে মামলা না-হয় আসারামের বিরুদ্ধে।
মেয়েটির বাবা বলেন, ‘‘বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা ছিল আমাদের।’’ তবে সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘এই পাঁচ বছরে আমার পরিবার বাড়ি থেকে বেরোতে পারেনি। ওরা আমার ব্যবসা নষ্ট করে দিয়েছে।’’ এক তদন্তকারী অফিসার অজয় পাল লাম্বা বলেন, ‘‘এই রায়ই প্রমাণ করে আইন পক্ষপাতহীন ভাবে কাজ করে। প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্বলতম শ্রেণিরও কেউ যদি অভিযোগ করেন, তিনি সুবিচার পেতে বাধ্য।’’ রায় শুনে ভোপাল শহরের এক বাস স্ট্যান্ড থেকে আসারামের ছবি সরিয়ে ফেলেছেন সেখানকার মেয়র।