Ashok Gehlot

সভাপতি হলে কুর্সি ছাড়তে রাজি গহলৌত

গহলৌত কংগ্রেসের সভাপতির পাশাপাশি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ধরে রাখতে চাইলেও খোদ রাহুল গান্ধী আজ ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতির কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৫৪
Share:

অশোক গহলৌত। ছবি: পিটিআই

কংগ্রেসের সভাপতি হলে অশোক গহলৌত রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন।

Advertisement

গহলৌত কংগ্রেসের সভাপতির পাশাপাশি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ধরে রাখতে চাইলেও খোদ রাহুল গান্ধী আজ ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতির কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। গতকাল বিকেলে সনিয়া গান্ধী কিছুটা নরম অবস্থান নিয়ে গহলৌতকে বলেছিলেন, আগে গহলৌত সভাপতি হোন। তারপরে মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে ফয়সালা হবে। কিন্তু উদয়পুরের চিন্তন শিবিরে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নিয়ম নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রাহুল আজ বলেছেন, ‘‘উদয়পুরে যে সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি—তার প্রতি দায়বদ্ধতা বজায় থাকবে বলে আশা করছি।’’

সভাপতির পদের দায়িত্ব নিতে রাজি হলেও এত দিন মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে নারাজ গহলৌত আজ সুর বদলেছেন। ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’-এর নিয়ম কংগ্রেসের সভাপতির পদে খাটে না বলে যুক্তি দিলেও আজ তিনি বলেছেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদে থেকে কংগ্রেসের সভাপতির পদের প্রতি সুবিচার করা যাবে না। কারণ, কংগ্রেস সভাপতির কাজ হবে দেশে দলকে মজবুত করা। কী ভাবে তিনি দু’টি পদে থাকতে পারেন। অতীতেও কোনও কংগ্রেস সভাপতি একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকেননি।’’

Advertisement

কংগ্রেস সূত্রের খবর, দলের সভাপতি একাধিক পদে থাকলে বিক্ষুব্ধ নেতাদের গোষ্ঠী জি-২৩ নেতারা ফের সরব হবেন। গহলৌত সভাপতির পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকলে তাঁরা ‘পার্টটাইম প্রেসিডেন্ট’ নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন। সেই ইঙ্গিত পেয়েও গহলৌতকে সুর বদল করতে হয়েছে। এই জি-২৩ নেতাদের মধ্যে শশী তারুর ইতিমধ্যেই সভাপতি নির্বাচনে লড়বেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিরুঅনন্তপুরমের সাংসদ তারুর সনিয়ার সঙ্গে দেখাও করেছেন।

এই পরিস্থিতিতে জি-২৩ গোষ্ঠীর আর এক সদস্য মণীশ তিওয়ারির সভাপতি পদের লড়াইয়ে নামার ইঙ্গিত মিলেছে। কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, তিওয়ারিই জি-২৩ গোষ্ঠীর আসল প্রার্থী হবেন। সূত্রের খবর, তিওয়ারি পঞ্জাবে নিজের অনুগামী, সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলছেন। রবিবার তিনি দিল্লি পৌঁছবেন। জি-২৩-র বাকি সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে। ইউপিএ-সরকারের মন্ত্রী তিওয়ারি ছাত্র পরিষদ, যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি হিসেবে কাজ করেছেন। তারুরের সঙ্গে তিওয়ারিও ভোটে নামলে সভাপতি নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াই হবে।

আজ কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে মনোনয়ন পত্র জমা শুরু হবে। চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। উত্তর ভারতে মহালয়া পর্যন্ত পিতৃপক্ষকে শ্রাদ্ধ পর্ব বলে অশুভ বলে মনে করা হয়। গহলৌত তাই ২৬ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন জমা করবেন। মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়ার ইঙ্গিত দিলেও সেই পদে সচিন পাইলটকে বসানো উচিত কি না, গহলৌত তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। উল্টে বলেছেন, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা ভেবেচিন্তে ঠিক করতে হবে। কারণ, আগামী বছর রাজস্থানে নির্বাচন। রাজস্থান একমাত্র বড় রাজ্য যেখানে কংগ্রেস ক্ষমতায় রয়েছে। সেখানে ফের জিতে এলে কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানো শুরু হবে। দলের অধিকাংশ বিধায়ক যেহেতু তাঁর দিকে, তাই বিধায়কদের মত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বাছাই করা উচিত বলে সুকৌশলে সওয়াল করেছেন গহলৌত। কংগ্রেসের একটি সূত্র বলছে, গহলৌত দলের সভাপতি হবেন আর পাইলট কিছুই না পেলে তাঁর প্রতি অবিচার হবে। গান্ধী পরিবারের একাংশ পাইলটকে নতুন মুখ্যমন্ত্রী করার দিকে ঝুঁকে। সে ক্ষেত্রে পাইলটকে মুখ্যমন্ত্রী করে গহলৌতের কোনও অনুগামীকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে।

সভাপতি নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যেই দলের মধ্যে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। কেরলের সাংসদ কে সুরেশ, বেনি বেহনানের মতে, তারুরের প্রার্থী হওয়া উচিত নয়। সর্বসম্মত ভাবেই কংগ্রেস সভাপতি ঠিক হওয়া উচিত। কংগ্রেস মুখপাত্র গৌরব বল্লভের মতে, গহলৌত তিন বারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী, পাঁচ বারের সাংসদ, পাঁ চবার বিধায়ক। ৪৫ বছরের নিষ্কলঙ্ক রাজনৈতিক জীবন। উল্টো দিকে, তারুর গত আট বছরে একটাই কাজ করেছেন। তা হল, সনিয়া গান্ধীর অসুস্থতার সময় তাঁকে চিঠি লিখেছেন। ফলে বাছাই করা খুবই সহজ।

নতুন কংগ্রেস সভাপতির জন্য তাঁর পরামর্শ কী? এই প্রশ্নের উত্তরে রাহুল বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস সভাপতির পদটি শুধু সাংগঠনিক পদ নয়, তাত্ত্বিক পদ। তাই আমার পরামর্শ হবে, যিনিই কংগ্রেস সভাপতি হবেন, তাঁর মনে রাখা উচিত যে তিনি ভারতের একটি চিন্তাধারার প্রতিনিধিত্ব করেন।’’ সভাপতি পদের মনোনয়ন শুরুর আগে রাহুল শুক্রবার এক দিনের জন্য দিল্লি এসে সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে ভারত জোড়ো যাত্রায় ফিরে যেতে পারেন। কারণ, সনিয়া চিকিৎসা করে বিদেশ থেকে ফেরার পরে রাহুলের সঙ্গে দেখা হয়নি।

কংগ্রেস সূত্রের খবর, সভাপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে রাহুল পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারেন। ভারত জোড়ো যাত্রায় যাত্রীদের জন্য তেমন ব্যবস্থা করা হবে। রাহুল বলেন, ‘‘কবে সভাপতি নির্বাচন হবে, সবাই সেই প্রশ্ন করছেন। কেউ এই প্রশ্ন বিজেপি, আরএসএস, সিপিএম, সমাজবাদী পার্টি, বিএসপি-কে করেন না। আমি গর্বিত যে কংগ্রেস একমাত্র রাজনৈতিক দল, যেখানে সভাপতি নির্বাচন হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন