অপহৃতের মুক্তিপণ দিলেন কমলাক্ষও

অপহৃতকে বাড়ি ফেরাতে মুক্তিপণের টাকার কিছুটা দিলেন অসমের পরিষদীয় সচিব কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থও! পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তার নাকের সামনে দিয়ে সেই টাকা নিয়ে উধাও হল অপহরণকারীরা।

Advertisement

শীর্ষেন্দু সী

করিমগঞ্জ শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৬ ০৪:৩২
Share:

অপহৃতকে বাড়ি ফেরাতে মুক্তিপণের টাকার কিছুটা দিলেন অসমের পরিষদীয় সচিব কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থও!

Advertisement

পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তার নাকের সামনে দিয়ে সেই টাকা নিয়ে উধাও হল অপহরণকারীরা। তবে নিরাপদে বাড়ি ফিরলেন করিমগঞ্জ শহরের পেট্রোল-পাম্প এলাকার দোকানকর্মী নারায়ণ দাস।

স্থানীয় সূত্রে খবর, মুক্তিপণ হিসেবে ৩ লক্ষ টাকা চেয়েছিল অপহরণকারীরা। দরিদ্র দোকানকর্মীর পরিবার ২ লক্ষ টাকা ৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়েছিলেন। ৫০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন পরিষদীয় সচিব কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের কাছ থেকে। আরও ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন তাঁর এক আত্মীয়। পুলিশ সূত্রে খবর, মুক্তিপণের টাকা দিতে হয় রাজধানী গুয়াহাটিতে। অপহরণকারীদের ধরতে সাদা পোশাকে সেখানে ওৎ পেতেছিলেন করিমগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নবীন সিংহ। সঙ্গে ছিল আরও পুলিশ। কিন্তু সবার চোখে ধুলো দিয়ে টাকা নিয়ে পালায় অপহরণকারীরা।

Advertisement

এ নিয়ে কী বলছেন কমলাক্ষবাবু?

তাঁর কথায়, ‘‘অপহরণের খবর পেয়ে নারায়ণবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলাম। তাঁর পরিবারে আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। তাই ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে এসেছিলাম। ওই টাকা ওঁরা কী ভাবে খরচ করেছেন, তা জানি না।’’ পুলিশের তরফে তাঁর সাফাই, ‘‘অপহরণকারীদের ধরতে সব রকম ভাবে চেষ্টা করেছে পুলিশ। দুষ্কৃতীদের এখনও ধরা যায়নি সেটা দুর্ভাগ্যজনক।’’

নারায়ণবাবুকে ফেরাতে ২ লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। সুদ সমেত সেই টাকা কী করে মেটাবেন, তাই ভেবে ঘুম উড়েছে মাসে ৫ হাজার টাকা বেতনের ওই দোকানকর্মীর। সেই চিন্তায় মাঝেমধ্যেই কেঁদে
ফেলছেন। তিনি জানান, অপহরণকারীদের ডেরায় একটা গর্তের মধ্যে তাঁকে ফেলে রাখা হয়েছিল। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া। পরিবারের কাছে টাকা চাইতে ফোন ধরিয়ে দেওয়া হতো তাঁর হাতেই।

কী ভাবে অপহরণ করা হয়েছিল নারায়ণবাবুকে? তিনি জানান, ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে পেট্রোল-পাম্প এলাকায় গাড়ির জন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন। তখনই একটি অল্টো গাড়ি এসে তাঁর সামনে দাঁড়ায়। চার জন যাত্রী গাড়ি থেকে নামে। চালক জিজ্ঞাসা করে, তিনি কোথায় যাবেন? গন্তব্য শুনে ৩০ টাকা ভাড়া চাওয়া হয়। রাতে অন্য গাড়ি না পাওয়ার আশঙ্কায় তাতে উঠে পড়েন নারায়ণবাবু। তিনি বলেন, ‘‘কিছু ক্ষণ পর দেখি ওই ৪ জন যাত্রীও ফের গাড়িতে উঠে পড়ল। পিছনের সিটে পাঁচ জন লোক বসতে অসুবিধা হচ্ছে বললে চালক জবাব দিল, সবাই বাড়িতে ফিরবে। অসুবিধা হলেও এ ভাবেই যেতে হবে।’’

তিনি জানান, নিলামবাজার পর্যন্ত যাওয়ার পর চালক ভাড়ার টাকা দিতে বলে। ম্যানিব্যাগ বের করতেই গাড়ির চার সওয়ারি তাঁকে বেধড়ক মারধর করতে শুরু করে। পুলিশের অনুমান, দোহালিয়া এলাকার কোনও উচুঁ টিলার তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল। নারায়ণবাবু জানান, গত কাল গুয়াহাটিতে মুক্তিপণ পাওয়ার পর আরও বেশি টাকা নেওয়ার চেষ্টা করেছিল অপহরণকারীরা। তাঁকে দিয়ে বাড়িতে ফোনও করিয়েছিল। কিন্তু তাঁর পক্ষে আরও টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন