Assam flood

Assam Flood: বুকসমান জল, খাবার নেই, প্রশাসনও নেই, ১০ হাজার টাকা দিয়ে কয়েকশো মিটার গেলাম ডিঙিতে

ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে অসমের ২৮টি জেলা। ৩৩ লক্ষেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে লিখলেন শিলচরের এক বাসিন্দা।

Advertisement

শ্রেয়সী সিন্‌হা

শিলচর শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২২ ১৪:৩৫
Share:

ঘরের পর ঘর চলে গিয়েছে এক মানুষ জলের তলায়। কেউ বেরিয়ে আসতে পেরেছেন, কেউ আটকে রয়েছেন। ছবি: পিটিআই।

একটানা বৃষ্টি চলছিল কয়েক দিন ধরে। বৃষ্টির ভাবগতিক দেখে কেন জানি না, মনের মধ্যে কু ডাকছিল। নিজেকে বার বার আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছিলাম। যে হেতু শিলচরের বাসিন্দা, তাই অসমের বন্যা নিয়ে ধারণা ছিলই। কিন্তু পরিস্থিতি যে এতটাই ঘোরালো হয়ে উঠবে ভাবতে পারিনি। যে দিকেই তাকাচ্ছি শুধু জল আর জল। রাতের মধ্যেই বদলে গিয়েছিল শিলচরের চেহারাটা। কোথাও বুকসমান, কোথাও হাঁটু কোথাও আবার এক মানুষসমান জল। সোমবারের সকাল হয়েছিল এমনই এক বিভীষিকাময় দৃশ্য দেখে। মনে হচ্ছিল যেন নদীর মধ্যে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো পড়ে আছি। আমার বাড়ি শিলচরের ন্যাশনাল হাইওয়ে রোডে। বাড়িতে আমি ছাড়া, আমার স্বামী, বোন এবং তাঁর মেয়ে ছিল।

Advertisement

রবিবার মাঝরাতে মোবাইল ফোনে বার্তা পেয়েছিলাম প্রশাসনের তরফে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে। তখন আর বুঝতে বাকি ছিল না, কী ঘটতে চলেছে। কিন্তু এত রাতে কোথায় যাব? কী করব? ভেবে ভেবেই বিনিদ্র রাত কাটিয়ে দিয়েছি। ভোরের আলো ফুটতেই দেখলাম কোমর সমান জলের তলায় চলে গিয়েছে আমাদের এলাকা। বেলা বাড়তেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। জল সেকেন্ডে সেকেন্ডে বাড়ছিল। আশপাশ থেকে খবর পেয়েছিলাম বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের বাঁধটি ভেঙে গিয়েছে। আর সেখান থেকেই নদীর জল শিলচরে হু হু করে ঢুকছিল।

বাড়িতে অসুস্থ স্বামী। কিডনির সমস্যা তাঁর। যে ভাবে চার দিক থেকে জলবন্দি হয়ে পড়েছিলাম তাতে দিশাহারা লাগছিল। চারটে মানুষ কোথায় যাব, কী ভাবে যাব ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছিলাম না। অন্য দিকে, জল ক্রশ বাড়ছিল। হাঁটু থেকে কোমর, কোমর থেকে গলাসমান। আসবাব সরানোর সুযোগ পাইনি। সোমবার থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। খাবারসামগ্রী জলে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। পানীয় জল ছিল না। চার দিন ধরে এ ভাবেই জলবন্দি হয়ে ধরে আটকে রইলাম আমরা চারটি মানুষ। চার দিন ধরে কোনও রকম সাহায্য মেলেনি প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বার বার ফোনে পরিস্থিতির কথা জানিয়ে উদ্ধারের জন্য আর্জি জানিয়েছিলাম। কিন্তু বলা হয়েছিল, অপেক্ষা করুন। ঠিক সাহায্য করা হবে। কিন্তু কোথায় সাহায্য! চার দিন ধরে প্রশাসনের কারওরই দেখা মেলেনি। ন্যাশনাল হাইওয়ে রোডের সব বাসিন্দারা ঘরবন্দি। উদ্ধারের আশায় চাতকের মতো তাকিয়ে ছিলেন। কিন্তু বৃথাই আশা।

Advertisement

সোমবার থেকেই এলাকায় ডিঙি নৌকা চলতে শুরু করেছিল। জলবন্দি বাসিন্দাদের নৌকায় উদ্ধার করা হচ্ছিল হাজার হাজার টাকার বিনিময়ে।চার দিন জলবন্দি থাকার পর নিজেদের বাঁচাতে বৃহস্পতিবার একটি ডিঙি নৌকা ভাড়া করলাম। এক কিলোমিটার দূরে যেতে ভাড়া চাইল ১০ হাজার টাকা। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে সেই টাকা দিয়েই শিলচরেরই মেহেরপুরে একটি জায়গায় আশ্রয় নিলাম। তুলনামূলক পরিস্থিতি ভাল ছিল। এই এলাকাও জলের তলায় চলে গিয়েছিল। তবে আমাদের এলাকার মতো নয়।

রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তা মূলত মূল রাস্তার উপরেই। ভিতরের দিকে সাহায্য পৌঁছচ্ছে না। হেলিকপ্টার থেকে খাবার, জলের পাউচ ফেলা হলেও তা কোনও একটি উঁচু বাড়ির ছাদে ফেলা হচ্ছে। গলাসমান জল ভেঙে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই জায়গায় পৌঁছতে অনেকেই সাহস পাচ্ছেন না। ফলে বাধ্য হয়ে জল কিনে খেতে হচ্ছে। এক একটা জলের বোতল কিনতে হচ্ছে ২০০ টাকা দিয়ে!

শিলচরের ৮০ শতাংশ জলের তলায় চলে গিয়েছে। রাস্তায় লাশ ভাসতে দেখা যাচ্ছে। কত মানুষের জীবন গিয়েছে তার কোনও হদিস নেই। মূল রাস্তা থেকে ভিতরের দিকের পরিস্থিতি শোচনীয়।

লেখক শিলচরের বাসিন্দা

মতামত নিজস্ব

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন