বিলি: গোলাঘাটে নেপালিদের গ্রামে ত্রাণ বিতরণ। —নিজস্ব চিত্র।
ভৌগোলিক পরিচয়ে ওঁরা বিদেশেরই লোক। কিন্তু কয়েক পুরুষ ধরে অসমে থাকার পরেও হঠাৎ নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত খসড়ায় নাম না দেখে বুক কাঁপছে গোর্খা পরিবারগুলির। ১৯৮৬-১৯৮৮ সালে শিলংয়ে সংঘর্ষের জেরে ঘরছাড়া হওয়ার পরে এ বার এনআরসি আতঙ্কে অসমের লক্ষাধিক গোর্খা।
অসম ও মেঘালয়ের এই গোর্খারা কিন্তু অনুপ্রবেশকারী নন। এঁরা কাজের সন্ধানেও আসেননি। বরং তাঁরা ঢুকেছিলেন বুক ফুলিয়ে, সেনাবাহিনীর উর্দিতে, হাতে বন্দুক নিয়ে। ১৮১৫ সালে সগুলির সন্ধিতে ইংরাজ ও নেপালিদের মধ্যে যুদ্ধ শেষ হয়। গোর্খাদের বীরত্বের আঁচ পেয়ে ইংরেজরা দ্রুত তাদের কটক লিজিয়ন (পরে নাম হয় আসাম লাইট ইনফ্যান্ট্রি)-এ নিয়োগ করা শুরু করে। ১৮২৭ সালে ক্যাপ্টেন ন্যুভেলের নেতৃত্বে ওই বাহিনী শ্রীহট্ট থেকে বর্মী সেনা হটাতে আসে। সেখান থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অষ্টম গোর্খা রাইফেলস চেরাপুঞ্জিতে এসে সদর দফতর তৈরি করে। ইংরেজরা সেখান থেকে কিছু দিন শাসন চালিয়ে নেমে আসে শিলংয়ের দিকে। ১৮৩৫ সালে আসাম রাইফেলস তৈরি হয়। সেখানে হিন্দুস্তানি সেনার চেয়ে গোর্খার সংখ্যাই ছিল বেশি। তখন থেকেই অবিভক্ত অসমে নেপালি জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। অবশ্য তারও অনেক আগে, বৈষ্ণব সন্ত শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের শিষ্য রতিকান্ত উপাধ্যায় ষোড়শ শতকে যোরহাট-নগাঁওয়ে ‘নামঘর’ তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায়।
স্বাধীনতা আন্দোলনেও গোর্খাদের অনেক অবদান। মহাত্মা গাঁধীর ডাকে ছবিলাল উপাধ্যায় ও তাঁর ভাই হরিপ্রসাদ উপাধ্যায় অসহযোগ আন্দোলনে নেপালিদের নেতৃত্ব দেন। ভারত ছাড়ো আন্দোলন, ‘শান্তি সেনা’, ‘মৃত্যু বাহিনী’-তে দলবীর লোহার, বীরবাহাদুর ছেত্রী, অনন্তলাল শর্মা, ভক্তবাহাদুর প্রধানদের মতো নেতারা ছিলেন।
স্বাধীনতার পরে ১৯৫০ সালের ভারত-নেপাল চুক্তি অনুযায়ী নেপালিরা ভারতে নাগরিকত্ব ও সম্পত্তির অধিকার পায়। তত দিনে শিলংয়ে নেপালির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০ হাজার। কিন্তু ১৯৮৬-৮৮ সালে খাসি বনাম নেপালিদের সংঘর্ষে সংখ্যাটা নেমে আসে ৩৫ হাজারে। নেপালি ছাত্র সংগঠন ‘আগসু’র সভাপতি প্রেম তামাঙের হিসেবে, এখন অসমে নেপালিদের সংখ্যা প্রায় ২৫ লক্ষ। তাঁদের সকলেই এনআরসির জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু নাম ওঠেনি লক্ষাধিকের।
আরও পড়ুন: দেশকে রক্ষা করেও বিদেশি! অপমানিত সেনা
অসমের গোলাঘাট জেলায় চলছে বন্যা। সেখানেও গ্রামগুলিতে নাম বাদ পড়া নেপালির সংখ্যা অনেক। গোর্খা নেতা নন্দ কিরাতি দেওয়ান ত্রাণ বিলি করছেন গ্রামগুলিতে। তিনি জানান, জল হঠাৎ গ্রামে ঢোকায় অনেকে কাগজপত্র বাড়িতে ফেলেই প্রাণ নিয়ে পালিয়েছেন। প্রমাণপত্র জোগাড় করে ফের আবেদন করা সমস্যার।