দেশকে রক্ষা করেও বিদেশি! অপমানিত সেনা

ওঁরা সকলেই দুই বা তিন দশক দেশের সেবা করেছেন। কেউ বা এখনও কর্মরত। দেশবাসীকে রক্ষার দায়িত্ব পালন করা সেই বর্তমান ও প্রাক্তন সেনা জওয়ান কিংবা কর্তারাও বিদেশি! নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত খসড়া তালিকা তা-ই বলছে!

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫৯
Share:

মহম্মদ আজমল হক, সামসুল হক এবং সানাউল্লাহ

ওঁরা সকলেই দুই বা তিন দশক দেশের সেবা করেছেন। কেউ বা এখনও কর্মরত। দেশবাসীকে রক্ষার দায়িত্ব পালন করা সেই বর্তমান ও প্রাক্তন সেনা জওয়ান কিংবা কর্তারাও বিদেশি! নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত খসড়া তালিকা তা-ই বলছে!

Advertisement

রাজ্যের পুলিশকর্মী, সেনাকর্মী, অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীদের নামে পুলিশের সীমান্ত শাখার বা ফরেনার্স ট্রাইবুনালের তরফে সন্দেহজনক ভোটার (ডি-ভোটার)-এর নোটিস আসা নতুন কথা নয়। নাগরিকত্বের পরীক্ষায় না উতরোলে যে সব চাকরিতে যোগ দেওয়াই যায় না, তেমন চাকরি করেও ঘরের মাটিতে এই ‘অপমান’-এর মুখে তাঁরা বার বার পড়েছেন। ভেবেছিলেন বাংলাদেশি অপবাদ ঘুচবে এনআরসির দৌলতে। কিন্তু এনআরসির চূড়ান্ত খসড়ায় কামরূপ, বরপেটা জেলার অনেক বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীর নাম না থাকায় গোটা প্রক্রিয়া নিয়েই সন্দেহ দানা বাঁধছে।

তিরিশ বছর ভারতীয় সেনায় কাজ করে অবসর নেওয়া জুনিয়র কমিশনড অফিসার, কামরূপের বকোর বাসিন্দা মহম্মদ আজমল হকের নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে ফরেনার্স ট্রাইবুনালে রিপোর্ট পাঠিয়েছিল পুলিশ। নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য ট্রাইবুনাল তাঁকে নোটিস পাঠায়। তিন দশক দেশরক্ষার কাজ করা ওই জেসিওকে এ ভাবে হেনস্থা করায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে অসম পুলিশ। শেষ পর্যন্ত ডিজিপি মুকেশ সহায় ক্ষমা চেয়ে জানান, একই নামের অন্য এক সন্দেহভাজন বাংলাদেশির বদলে গিয়ে ভুল করেই ওই প্রাক্তন সেনা অফিসারকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। ডিজি (সীমান্ত শাখা) ও কামরূপের এসপিকে ওই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তদন্তের ফল? এ বার এনআরসির তালিকায় নাম দেখতে গিয়ে অবাক আজমল। দেখেন তাঁর মা ও স্ত্রীর নাম থাকলেও তাঁর ও তাঁর ছেলেমেয়ের ও দুই ভাইয়ের নাম নেই। তাঁর পিসির ছেলে, অবসরপ্রাপ্ত সেনা ক্যাপ্টেন সানাউল্লাহরও একই অবস্থা। তাঁর ও তাঁর ছেলেমেয়েদের নাম তালিকায় নেই। বরপেটার বাসিন্দা, ল্যান্স নায়েক ইনামুল হক উত্তরাখণ্ডে কর্মরত। পরিবারের সকলের নাম এনআরসিতে উঠলেও বাদ পড়েছেন তিনি! বরপেটার অবসরপ্রাপ্ত সেনা হাবিলদার মহিরুদ্দিন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট সামসুল হক ও সাহদুল্লা আহমেদের নামও তালিকায় নেই। কলগাছিয়ার সামসুলবাবু ১৯৭৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বায়ুসেনায় ছিলেন। কর্মসূত্রে অধিকাংশ সময় বাইরে কাটিয়েছেন। ১৯৯৭ সালে তাঁর ও স্ত্রীর নামে ডি-ভোটার নোটিস আসে। দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে ২০১৬-তে জিতেছেন তিনি। কিন্তু তার পরেও এনআরসির চূড়ান্ত খসড়ায় শুধু তাঁর নয়, নাম নেই স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েরও!

Advertisement

আরও পড়ুন: যোগীকে কালো পতাকা দেখিয়ে ভিটেছাড়া পূজা

এই ‘অপমান’-এর বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। আজমল হক জানান, আশপাশের চেনাজানা বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী, যাঁদের নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে সকলে মিলে বৈঠকে বসেছিলেন। ঠিক হয়েছে, সকলে মিলে স্মারকপত্র পাঠাবেন প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে। আজমলের কথায়, ‘‘দেশসেবার বিনিময়ে আর কত দিন বইতে হবে বিদেশি তকমা?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন