শিলচর বিমানবন্দরে মহুয়া মৈত্র এবং মমতা ঠাকুরের সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনীর ধস্তাধস্তি। ছবি সৌজন্যে: এবিপি আনন্দ
তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের শিলচরে ঢুকতেই দিল না অসম প্রশাসন। প্রতিবাদে বিমানবন্দরেই ধর্নায় বসেছেন তৃণমূল নেতারা। জানিয়েছেন, সারা রাত ধর্না চালিয়ে আগামিকাল সকালের বিমানে গুয়াহাটি যাবেন তাঁরা। প্রশাসন অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, সেখানেও তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হবে না। অসমে এনআরসির চূড়ান্ত খসড়ায় ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছে। এ নিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়েছে তৃণমূল। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অসমে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার শিলচর শহরে গিয়ে নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চের সভায় বক্তৃতা করার কথা ছিল তৃণমূল নেতাদের। তার পরে শুক্রবার গুয়াহাটি সফর সেরে ফেরার কথা।
আজ দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে দিল্লি থেকে আসা বিমানটি যখন কুম্ভীরগ্রাম বিমানবন্দরের মাটি ছুঁল, তখন লাউঞ্জে হাজির রাজ্য পুলিশের এডিজি মুকেশ অগ্রবাল, ডিআইজি দেবরাজ উপাধ্যায়, বরাকের কমিশনার আনোয়ারুদ্দিন চৌধুরি, কাছাড়ের জেলাশাসক এস লক্ষ্মণন, ও পুলিশ সুপার রাকেশ রোশন। আর বিমানবন্দরের বাইরে পুলিশ-আধাসেনায় ছয়লাপ। সিআরপি জওয়ানদের সঙ্গে মোতায়েন করা হয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স। অসম পুলিশের লাঠিধারীদের সঙ্গে ছিল সশস্ত্র বাহিনীও। বিমানবন্দরের দু’শো মিটার আগে বসানো হয়েছে ড্রপ গেট। বেসরকারি কোনও গাড়িকে ওই সীমা পেরোতে দেওয়া হয়নি।
বিমান থেকে একে একে নেমে এলেন সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়, কাকলি ঘোষদস্তিদার, মমতা ঠাকুর, অর্পিতা ঘোষ, রত্না নাগ দে এবং বিধায়ক মহুয়া মৈত্র। তাঁরা গেটের দিকে এগোতেই এগিয়ে আসেন জেলাশাসক এস লক্ষ্মণন। জানান, শহরে ১৪৪ ধারা রয়েছে। তৃণমূল নেতারা বিমানবন্দরের বাইরে যেতে পারবেন না। সুখেন্দুবাবুর সঙ্গে প্রশাসনিক কর্তাদের তর্কাতর্কি শুরু হয়। তৃণমূল নেতারা পুলিশ কর্ডন ভেঙে বেরোতে যান। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। বিমানবন্দরে ঢুকে আসে আরও মহিলা পুলিশ। মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে তাঁদের কার্যত ‘লুকোচুরি খেলা’ শুরু হয়।সুখেন্দুবাবুর অভিযোগ, তাঁদের ধাক্কা মারা হয়েছে। শারীরিক নিগ্রহের হাত থেকে রেহাই পাননি কাকলি ঘোষ দস্তিদার, মমতা ঠাকুর, মহুয়া মৈত্রেরাও। এর পরেই কনভেয়ার বেল্টের সামনে ধর্নায় বসেন তৃণমূল নেতারা।
ঘণ্টা দুয়েক পরে কলকাতা থেকে বিমানে শিলচরে পৌঁছন অসমের ভারপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম। আটকানো হয় তাঁকেও। ‘মিনিস্টিরিয়াল প্রোটোকল’-এর উল্লেখ করে তিনি অসম প্রশাসনের কর্তাদের জানান, তাঁকে তাঁরা আটকাতে পারেন না। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। অনড় প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়ে দেন, তাঁকেও বাইরে বেরোতে দেওয়া যাবে না। ক্ষুব্ধ ববিও ধর্নায় যোগ দেন।
বিকেল সওয়া চারটেয় শিলচর ছেড়ে যায় দিনের শেষ উড়ান। এর পরেই তৃণমূল নেতাদের জানানো হয়, তাঁরা এ বার বিমানবন্দর থেকে বেরোতে পারেন। তবে কোনও সভা করা চলবে না। নজরদারি না-হলেও থাকতে হবে পুলিশের তত্ত্বাবধানেই।প্রশাসনের কথা মানতে রাজি হননি ফিরহাদরা। দাবি করেন, তাঁদের গ্রেফতার করা হোক। পুলিশ অবশ্য সে-পথে হাঁটেনি। এডিজি মুকেশ অগ্রবাল জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫১ ধারায় তৃণমূল নেতাদের নিবর্তনমূলক আটক (প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন) করা হয়েছে। সন্ধ্যায় তাঁদের সার্কিট হাউসে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু তৃণমূল নেতারা সেই প্রস্তাব খারিজ করে জানিয়ে দেন, তাঁরা বিমানবন্দরেই থাকবেন। রাতে নেতাদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেন চিকিৎসকেরা।
এর পরে কী করবেন তৃণমূল নেতারা? ববি জানান, কাল সকালে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে। কাল সকালের বিমানে তাঁদের গুয়াহাটি যাওয়ার কথা। সেখানে রাজ্য পুলিশের ডিজিপি কুলধর শইকিয়া এ দিনই বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতাদের গুয়াহাটিতে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’’ পুলিশের এক সূত্রের বক্তব্য, গুয়াহাটি গেলে ববিদের বিমান থেকে নামতেই দেওয়া হবে না। পরে তুলে দেওয়া হবে কলকাতা অথবা দিল্লির বিমানে।