উৎসব: বিহুকে ঘিরে মাতোয়ারা অসম। শুক্রবার গুয়াহাটির জাজেস ফিল্ডে এমনই একটি মুহূর্ত। ছবি: পীতাম্বর নেয়ার।
দুর্যোগের পূর্বাভাস ছিলই। কিন্তু আজ গরু-বিহুর দিন আশঙ্কা উড়িয়ে ঝকঝকে রোদে ঝলসে উঠল লাল পাড় মুগা ও মেখেলার ঢেউ। বাতাসে মিশল ঢোল-পেপা-গগনার শব্দ। প্রতি বারের মতো গুয়াহাটির জাজেস ফিল্ডে ‘মুকলি বিহু’-র হাত ধরে শুরু হয়ে গেল অসমের সব চেয়ে বড় পার্বণ।
আজ ছিল গরু স্নান করানোর দিন। তাই সকাল থেকে বিভিন্ন ঘাটে গরুকে স্নান করিয়ে চলল প্রার্থনা—‘‘লাউ-খা, বেঙেনা খা / বসরে বসরে বাড়ি যা।’’ জাজেস ফিল্ডে আসুর উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বরাবরই সাহিত্যিক, শিল্পী, তারকাদের মেলা। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিহু প্রদর্শনের পাশাপাশি এ দিন সেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যের নাম উজ্জ্বল করেছেন এমন ২৭ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সম্বর্ধনাও দেওয়া হল।
লতাশিল বিহু সম্মিলনী ১৯৮৫ সাল থেকে ‘বিহু সম্রাজ্ঞী’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে। সমিতির সভাপতি কৈলাশ শর্মা জানান, এখন পর্যন্ত রূপা ডেকা থেকে শুরু করে অভিনেত্রী জয়া শীল, ড্রিমলি গগৈদের মতো ৩২ জন ‘বিহু সম্রাজ্ঞী’ হয়েছেন। অনেকে খ্যাতি পেয়েছেন। অনেককে মানুষ ভুলে গিয়েছেন। ওই ৩২ জনকেই সোমবার বিহুর মঞ্চে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সকলের সঙ্গে তাঁদের নতুন করে পরিচয় করানো হবে। থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালও।
শিবসাগরে রংঘরের সামনে বা মাজুলিতেও বিহুর বিশাল আয়োজন। আহোমরাজ স্বর্গদেও রুদ্র সিংহের সময় থেকে রংঘরের সামনে উৎসবের আয়োজন শুরু হয়। সেই স্মৃতি জিইয়ে রাখতে সুসজ্জিত হাতির পিঠে স্বর্গদেওয়ের রাজ-সাজে একজনকে রংঘরে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ দিকে, বিহুর ছন্দে পতন ঘটিয়েছেন রাজ্যের এক মন্ত্রী। বিহুর উপহার হিসেবে তিনি বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে নগদ টাকা ‘উপহার’ দিয়েছেন। ঘটনা জানাজানি হতেই ক্ষিপ্ত মুখ্যমন্ত্রী সব মন্ত্রী-বিধায়কদের নির্দেশ দিয়েছেন, বিহুর উপহার দেওয়ার নামে ‘ঘুষ’ দেওয়া চলবে না।
অন্য দিকে, বিহুর এই উৎসবের মরশুমে কামরূপ মহানগর প্রশাসন সব বিহু কমিটিকে রাত ১২টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে। কড়া নজর রাখতে বলা হয়েছে প্যান্ডেলের নিরাপত্তা, পার্কিং, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায়। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, চলবে না মদ্যপান ও জোরে মাইক বাজানোও।